কোম্পানির রাইট শেয়ার ইস্যু বিনিয়োগকারীদের গলার কাঁটা

সময়: সোমবার, অক্টোবর ৭, ২০১৯ ৯:২০:৪৫ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানি বিভিন্ন সময় রাইট শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাইট শেয়ার ছাড়ার আগে এসব কোম্পানির শেয়ার দর ঊর্ধ্বমুখী ছিল। কিন্তু রাইট ইস্যুর পর সেগুলোর বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা যায়। পরবর্তীতে দর পতনের কারণে রাইট শেয়ারহোল্ডাররা পড়েছে বিপাকে। এ প্রেক্ষিতে এসব রাইট শেয়ার ইস্যু বিনিয়োগকারীদের জন্য গলার কাঁটা বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, আলিফ ম্যানুফেকচারিং লিমিটেড ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাইট শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন পায়। ওই সময় কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩০ টাকার উপরে লেনদেন হয়েছে। রাইট ছেড়ে অর্থ উত্তোলনের পর থেকে কোম্পানির শেয়ার দর নিম্নমুখী ধারায় অব্যাহত রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে কোম্পানিটির দর কমে গতকাল সর্বনিম্ন ৭ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। অথচ রাইটের অর্থ উত্তোলন করে কোম্পানিটি উৎপাদন বাড়ানো এবং কারখানার আধুনিকায়ন, সংস্কার ও সম্প্রসারণ (বিএমআরই) করার কথা ছিল। যদি রাইটের অর্থ সঠিক ব্যবহার হয় তাহলে কোম্পানির শেয়ার দর এতো নিচে নামার কারণ কি তাই প্রশ্ন উঠেছে।
জেনারেশন নেক্সটের রাইট ইস্যু অনুমোদনের সময় শেয়ার দর ২০ টাকার উপরে লেনদেন হয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটি রাইট ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেও কোনো ধরনের উন্নতি হয়নি। ফলে কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিনিয়োগকারীরা। গতকাল কোম্পানিটির শেয়ার ৪ টাকায় লেনদেন হয়েছে। শুধু আলিফ ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি লিমিটেড, জেনারেশন নেক্সট নয় একই অবস্থা বিডি থাই এবং সাইফ পাওয়ারটেকসহ অন্যান্য বেশ কিছু কোম্পানির।
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, যখন একটি কোম্পানি আইপিওর টাকা উত্তোলন করতে আসে তখন তারা তাদের প্রসপেক্টাসে বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করে। এর মধ্যে কোম্পানির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ, কারখানা সম্প্রসারণ করবে, উৎপাদন বাড়বে, আয় বেশি হবে এসব বিষয় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচার করতে থাকে। এভাবে বিনিযোগকারীদের নিকট হতে কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকা নেয়ার পর কোম্পানির আয় আর বাড়ে না। কয়েক বছর কোনো মতে স্টক বা বোনাস লভ্যাংশ দেয়। অর্থাৎ নগদ টাকার পরিবর্তে কাগজ ধরিয়ে দেয়া। একই সঙ্গে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বাড়িয়ে নেয়। এভাবে দুয়েক বছর স্টক ডিভিডেন্ড দেয়ার পর ফের কোম্পানি অর্থ সংগ্রহ করতে চায়। তখন প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ, উৎপাদন বৃদ্ধি করতে নতুন মেশিনারিজ ক্রয় ইত্যাদির জন্য রাইট শেয়ার ছাড়ে। এর মাধ্যমেও বিনিয়োগকারীদের নিকট হতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় কোম্পানিগুলো। রাইটের অর্থ উত্তোলনের পর কোম্পানির আয় আর বৃদ্ধি পায় না। ধীরে ধীরে আয় কমতে থাকে, শেয়ার দরপতন হয়। এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিনিয়োগকারীরা। এভাবেই রাইটের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সম্পাদক মহসিন মিয়া ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, পুঁজিবাজারে বেশ কিছু কোম্পানি আছে যারা রাইটের অর্থ উত্তোলনের সময় হিসাব ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখায়। আর এতে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। কিন্তু রাইট শেয়ার ছেড়ে অর্থ উঠিয়ে নেয়ার পর কোম্পানিগুলোর ব্যবসা মন্দা দেখায়, শেয়ার দরপতন হয়। এতে বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই যেসব কোম্পানি রাইট ইস্যু করে বিনিয়োগকারীদের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা নিচ্ছে তাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিয়মিত তদারকি করা উচিত।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ফের যখন অর্থের প্রয়োজন পড়ে তখন একটি কোম্পানি রাইট শেয়ার ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নেয়। মেশিনারিজ মেরামত, কোম্পানি সম্প্রসারণ করার, উৎপাদন বাড়ানোর নামে রাইট শেয়ার ইস্যু করে অর্থ উঠিয়ে নেয়। রাইট শেয়ার ছাড়ার অনুমোদনের পর থেকে শেয়ার দর কমতে থাকে। এতে রাইট শেয়ারধারীরা পড়ে বিপাকে। ফলে রাইট শেয়ার বিনিয়োগকারীদের গলার কাটায় পরিণত হয়। সম্প্রতি কিছু কোম্পানি রাইট ইস্যু করার পাঁয়তারা করছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিএসইসি এসব কোম্পানির উপর তদারকি জোরদার করা উচিত। এছাড়া যারা বিগত দিনে রাইট ইস্যু করেছে তাদের অর্থ সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করছেন তারা।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৮৭ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged