অর্থমন্ত্রীর ৯ দফা নির্দেশ

নতুন করে আর কোনো খেলাপি ঋণ অবলোপন করা যাবে না

সময়: সোমবার, অক্টোবর ৭, ২০১৯ ৯:২৩:৪৮ পূর্বাহ্ণ


সোহেল রহমান : এখন থেকে নতুন করে আর কোনো খেলাপি ঋণ অবলোপন করতে পারবে না রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিকগুলো। কোনো গ্রাহকের ঋণ একবার অবলোপনা করা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ওই গ্রাহকের সঙ্গে আর ব্যবসা করতে পারবে না। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত জামানতের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে এবং উপুযক্ত জামানত ছাড়া কোনো ব্যাংক-ই ঋণ দিতে পারবে না। একই সঙ্গে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জামানত ও গ্যারান্টারের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করতে হবে।
সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁওস্থ পরিকল্পনা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে চার রাষ্ট্রায়ত্ত (সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী) বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব নির্দেশনা দিয়েছেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলামসহ বিভাগের ঊর্ধ্বতন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনাসহ ব্যাংকের সার্বিক অবস্থার উন্নয়নে উপস্থিত ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে সময়সীমা ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট কর্ম-পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় বলে সূত্র জানায়।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিকগুলোতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনাসহ ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থার উন্নয়নে ওই বৈঠকে ব্যাংকগুলোর উদ্দেশ্যে ৯ দফা নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এসব নির্দেশের মধ্যে রয়েছেÑ সকল ব্যাংককে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা এবং নতুন করে আর কোনো ঋণ যাতে শ্রেণিকৃত না হয়Ñ সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নতুন করে আর কোনো ঋণ অবলোপন না করা; ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বাড়ানো এবং এর মাধ্যমে ব্যাংকের সম্পদের পরিমাণ বাড়ানো; সহজে ও দ্রুতগতিতে আর্থিক লেনদেনের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোতে অটোমেশন চালু তথা কাগজবিহীন লেনদেন চালু করা; ভালো ব্যাংক কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের প্রণোদনা প্রদান এবং অপকর্মকারীদের শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা; ব্যাংকের মামলা জট কমিয়ে আনতে ভালো আইনজীবী বা ল’ফার্ম নিয়োগ এবং আর্থিক বিষয়গুলো সঠিক ও উপযুক্তভাবে তুলে ধরার জন্য পেশাদার হিসাবরক্ষণবিদ নিয়োগ দেয়া; অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং একটি কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাতে সম্পন্ন করা যায়Ñ সেজন্য প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য আলাদা আলাদাভাবে সুনির্দিষ্ট করে দেয়া।
এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য একটি অভিন্ন আর্থিক বিবরণী তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিটে আর্নিং অ্যাসেট, নন-আর্নিং অ্যাসেট, সরকারের দায় ও সরকারবহির্ভূত দায় ইত্যাদি বিষয়ের সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ এফসিএ-এর নেতৃত্বে চার রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসাররা অভিন্ন ব্যালেন্স শিট ও লাভ-ক্ষতির হিসাব বিবরণী তৈরি করবেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম অর্থমন্ত্রীর এসব নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ঋণ খেলাপি হওয়ার জন্য শুধু যে গ্রাহকরাই দায়ীÑ তা নয়, ব্যাংকের অদক্ষ ব্যবস্থাপনাও অনেকাংশে দায়ী। শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ঋণ খেলাপি হয়েছে ভুয়া দলিল দাখিল করে ঋণ গ্রহণের সুযোগ পাওয়ায়। খেলাপি ঋণ বাড়ার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে ভালো ল’ ফার্ম নিয়োগ এবং অবলোপনকৃত ঋণ সঠিকভাবে করা হয়েছে কি নাÑ তা খতিয়ে দেখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সূত্র জানায়, বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, ঋণ যাতে খেলাপি না হয়, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান জারি করা হয়েছে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি নির্ণয় পদ্ধতি, নীতিমালা ও কার্যক্রম এসব কিছু বিদ্যমান থাকলেও অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংক সেগুলো পরিপালন করছে না। ফলে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যাংকগুলোর প্রদত্ত সকল বড় অঙ্কের ঋণগুলোর বর্তমান ব্যবসায়িক অবস্থা সরেজমিনে যাচাইয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক বিল ক্রয় এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক ঋণপত্রের বিষয়ে সতর্ক হওয়া, ওভারডিউ আদায়ে নজরদারি বাড়ানো ও নন-ফান্ডেড ঋণের ক্ষেত্রে কাগজপত্র সঠিকভাবে যাচাই করে ঋণ প্রদানের পরামর্শ দেন তিনি।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৬১ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged