স্পট মার্কেটে দুই কোম্পানি

গ্যাঁড়াকলে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা

সময়: রবিবার, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯ ১০:২১:০০ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব টেক্সটাইলের এক পরিচালকের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করার প্রমাণ পেয়েছে। যে কারণে ওই পরিচালককের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত কোম্পানিটিকে স্পট মার্কেটে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া মুন্নু সিরামিকসের আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন শেয়ার লেনদেন করেছে। এ কারণে মুন্নু সিরামিকসকেও স্পট মার্কেটে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে গ্যাঁড়াকলে পড়েছে কোম্পানি দুটির সাধারণ শেয়ারহোল্ডারা। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে অনিয়মের দায় নিতে হচ্ছে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের। যা একেবারেই কাম্য নয় বলে মনে করছেন তারা।
জানা গেছে, অগ্রণী ব্যাংক থেকে অর্থ পাওয়া এবং সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সংস্কারের জন্য দু’মাস আগে আলহাজ্ব টেক্সটাইলের উৎপাদন বন্ধ রাখার খবরের পরও কোম্পানির শেয়ার দরে বেশ উল্লম্ফন দেখা গেছে। সর্বশেষ কোম্পানির শেয়ার ৬৯ টাকা ১০ পয়সা লেনদেন হয়েছে। এর আগে ২১ জুলাই কোম্পানির শেয়ার ৪৩ টাকা ২০ পয়সা লেনদেন হয়েছে। এরপর থেকে অধিকাংশ সময়ই কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। আর শেয়ার দর উত্থান ধারার মুহূর্তে পরিচালকের অপরাধের কারণে কোম্পানিকে স্পট মার্কেটে লেনদেনে পাঠানোর বিএসইসি’র সিদ্ধান্তের কারণে বিপাকে পড়েছেন শেয়ারহোল্ডাররা।
অন্যদিকে মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার লেনদেন ও আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম এবং কর্পোরেট ডিক্লারেশনের মাধ্যমে মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন কর্তৃক শেয়ার বিক্রি সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন ও ডিএসই কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছে বিএসইসি। পর্যালোচনায় মুন্নু সিরামিকস, মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এনফোর্সমেন্ট বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার পাবলিক মার্কেট থেকে স্পট মার্কেটে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোম্পানি দুটিকে স্পট মার্কেটে না পাঠিয়ে বিএসইসি সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনকারী আলহাজ্ব টেক্সটাইলের ওই পরিচালককে জরিমানা করতে পারতো। কিন্তু তা না করে এফফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠিয়ে কালক্ষেপণ করেছে কমিশন। একই অবস্থা মুন্নু সিরামিকসের। কোম্পানিটি দুটিকে স্পট মার্কেটে পাঠানোর ফলে এ শেয়ার লেনদেনে আগ্রহ হারাবে বিনিয়োগকারীরা। ফলে যাদের হাতে কোম্পানির শেয়ার রয়েছে তারা গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন।
এ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, কোম্পানিগুলোর শেয়ার অতিমূল্যায়িত হওয়ার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছে বিনিয়োগকারীরা। তবে আইন অনুযায়ী বিএসইসি যে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা এনফোর্সমেন্ট বিভাগকে দিয়েছে, তা ঠিকই করেছেন। অপরাধীর সাজা হওয়া উচিত।
তথ্যমতে, নানা সঙ্কটে পড়ে দু’মাস আগেই আলহাজ্ব টেক্সটাইল উৎপাদন বন্ধ করেছে। বারবার সময় বাড়িয়েও কোম্পানিটি উৎপাদন শুরু করতে পারছে না। উৎপাদন বন্ধ থাকা অবস্থায়ও কোম্পানির শেয়ার দর বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানির পরিচালক মো. শামসুল হুদার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। এ পরিচালকের রিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে বিএসইসি যেসব প্রমাণ পায়, সেগুলো হচ্ছে- আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো. শামসুল হুদা ফেব্রুয়ারি মাসে ডিক্লারেশন ছাড়া ২০ হাজার শেয়ার বিক্রি করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (লিস্টিং) রেগুলেশন, ২০১৫ এর ৩৪ (১) বিধান লঙ্ঘন করেছে। তার এ শেয়ার বিক্রি করার ফলে কোম্পানির স্পন্সর ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের মোট শেয়ারহোল্ডিংয়ের পরিমাণ ৩০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, যা বিএসইসির নোটিফিকেশন লঙ্ঘন করেছে। এছাড়া মো. শামসুল হুদা ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪৪১টি শেয়ার বিক্রি ও ৯ হাজার ১০০টি শেয়ার ক্রয় করেছেন। ট্রেক হোল্ডার এএনএফ ম্যানেজমেন্টে কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএসই ট্রেক নম্বর- ১১৭) মাধ্যমে এসব শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করেছেন। তিনি নিজেই আলোচ্য ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই লেনদেনের ফলে কোম্পানিটির মোট শেয়ারহোল্ডিং পজিশন ৩০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ১৪ ধারার বিধান লঙ্ঘন বলে মনে করে বিএসইসি। এই পরিচালক শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের বিধি-নিষেধ থাকাকালীন সময়ে শেয়ার লেনদেন করার মাধ্যমে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ) বিধিমালা, ১৯৯৫ এর বিধি ৪ এর উপবিধি (২) এর বিধান লঙ্ঘন করেছেন। এছাড়া ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি কোম্পানিটি অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড থেকে ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৮ টাকা পাওয়া প্রসঙ্গে একটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছে, যা পরবর্তীতে সঠিক নয় বলে বিএসইসি’র কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এসব সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের অপরাধে বিষয়টি কমিশনের এনফোর্সমেন্ট বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তার শেয়ার লেনদেনের স্থগিত এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ার স্পট মার্কেটে লেনদেনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
এদিকে ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯’-এর ২১ ধারা এবং ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ আইন, ১৯৯৩’-এর ধারা ১৭ (ক)-এ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে গঠিত তদন্ত কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে উপস্থাপন করা হয়। এ প্রতিবেদনে বিভিন্ন তালিকাভুক্ত কোম্পানির (মুন্নু সিরামিকস, মুন্নু জুট স্টাফলার্স, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশনস, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, এসএস স্টিল, ইনটেক লিমিটেড, সায়হাম টেক্সটাইলস, সায়হাম কটন মিলস, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আইসিবি ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক) শেয়ারের মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের পূর্ব প্রাপ্তির ভিত্তিতে লেনদেন, বাজার কারসাজি, সিরিজ অব ট্রেডিং, আচরণ বিধি ভঙ্গ, অতিরিক্ত ঋণ প্রদান, অটো ক্লাইন্ট ট্রেড, আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম, শর্ট সেলিং এবং সার্কুলার ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বাজার মধ্যস্ততাকারী প্রতিষ্ঠান এবং ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা পরিপালনে ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হয়। ফলে যাদের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠানো হবে। মুন্নু ওয়েলফেয়ার কর্তৃক ধারণকৃত মুন্নু সিরামিকস এবং মুন্নু স্টাফলার্সের শেয়ারের ওপর আইনগত কোনো ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত তা ফ্রিজ (শেয়ার ক্রয়/বিক্রয়, হস্তান্তর, স্থানান্তর) থাকবে। এছাড়া বিশ্বজিত দাস ও তার স্ত্রী, কাজী মো. শাহাদাত হোসাইন, বিঅ্যান্ডবিএস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মো. সাইফ উল্লাহ, হোসাম মো. সিরাজ, এএসএস আহসান হাবিব চৌধুরী, মো. লুৎফুল গনি টিটো ও তার স্ত্রী এবং তার মালিকানাধীন সাত রং এগ্রো ফিশারিজের তহবিল (বিও হিসাব) থেকে অর্থ উত্তোলন, স্থানান্তর এবং লিংক হিসাবের মাধ্যমে শেয়ার হস্তান্তর বন্ধ থাকবে।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪৩৬ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged