টানা ২ বছর লভ্যাংশ দিচ্ছে না এবি ব্যাংক, আয় খতিয়ে দেখার দাবি

সময়: রবিবার, অক্টোবর ১৩, ২০১৯ ১০:১৬:০১ পূর্বাহ্ণ


সাইফুল শুভ : দেশের প্রথম বেসরকারি খাতের ব্যাংক আরব-বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেড, বর্তমানে এবি ব্যাংক লিমিটেড। ৩৭ বছর ধরে পথ চলা ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা এতই নাজুক যে, গত দুই বছর যাবত শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশই দিতে পারেনি। এ বছরের অবস্থা আরও খারাপ।
দেশে-বিদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম করছে ব্যাংকটি। বর্তমানে ১০৫টি শাখা রয়েছে ব্যাংকটির। এর মধ্যে ভারতের মুম্বাইয়ে একটি বৈদেশিক শাখা রয়েছে। এর বাইরে ২৭০টি এটিএম বুথ রয়েছে। মায়ানমারেও ব্যাংকটি বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনার এজেন্ট রয়েছে। এছাড়া পাঁচটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি রয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, এত বিশালসংখ্যক শাখা ও এটিএম বুথ থাকার পরও কেন ব্যাংকটির আয় কম। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) খতিয়ে দেখা উচিত।
জানা গেছে, খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকটির অবস্থা দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে। আগের দেয়া মন্দ ঋণের আদায় না হওয়ায় এগুলো এখন ব্যাংকের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকটি এখন বিপাকে রয়েছে।
জানা গেছে, গত ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। চলতি ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৫ পয়সা। গত ২০১৮ সালে একই সময়ে (জানুয়ারি-জুন) ৩৯ পয়সা। সর্বশেষ জুন ২০১৯ পর্যন্ত কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) ৩১ টাকা ৬৬ পয়সা। অথচ ২০১৫ সালে এনএভি ছিল ৩৯ টাকা ৩৫ পয়সা। ধারাবাহিকভাবে কমছে কোম্পানির সম্পদ মূল্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘অনেকগুলো কারণে ব্যাংকটি বর্তমান অবস্থা খারাপ হয়েছে। এক কথায় কিছুই বলা যাবে না।’ এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
গত ৮ জুলাই তারিক আফজাল ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এর আগে থেকেই কঠিন সময় পার করছে এবি ব্যাংক। বিগত ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কোনো লভ্যাংশই দিতে পারেনি। ২০১৬, ২০১৫ ও ২০১৪ সালে যথাক্রমে সাড়ে ১২ শতাংশ করে শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে।
বর্তমানে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত কোম্পানির পরিচালকদের হাতে রয়েছে ২৯.২৫ শতাংশ, সরকারের কাছে রয়েছে .৫৭ শতাংশ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে ৩৩.৯৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১.০৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৩৫.১৮ শতাংশ।
গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সালের তুলনায় কোম্পানির পরিচালক ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার ধারণ কমেছে। তবে এ সময় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেড়েছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে এবি ব্যাংকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২৪.৪১ শতাংশ। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৩৩.৯৭ শতাংশ।
১৯৮৩ সালে এবি ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়ায় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এবি ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৭ টাকা ৮০ পয়সা। দুই বছরের মধ্যে এবি ব্যাংকের শেয়ারের সর্বোচ্চ দর ছিল ২৬ টাকা ১০ পয়সা। বিগত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দর ছিল ১৩ টাকা ৯০ পয়সা।
বর্তমানে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। অনুমোদিত মূলধন এক হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৭৫ কোটি ৮১ লাখ ৩০ হাজার ৩১৬টি। কোম্পানির রিজার্ভে রয়েছে এক হাজার ৬৩০ কোটি টাকা।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৮০০ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged