দরপতনের নেপথ্য হোতাদের তথ্য তদন্ত কমিটিতে

সময়: সোমবার, আগস্ট ৫, ২০১৯ ৮:২৩:০৪ পূর্বাহ্ণ


নাজমুল ইসলাম ফারুক/সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: পুঁজিবাজারে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। এ দরপতনের পেছনের কারণ খতিয়ে দেখতে গত ২১ জুলাই তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ (বিএসইসি)। এরপর থেকে তদন্ত কমিটি বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। এর মধ্যে দরপতনের পেছনে অস্বাভাবিক লেনদেনের নেপথ্যে হোতাদের তথ্য এসেছে তদন্ত কমিটির কাছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা যায়, দর পতনের কারণ অনুসন্ধানে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত লেনদেনের হিসাবসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য চেয়েছে তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে রয়েছে, শেয়ার বিক্রির ভিত্তিতে শীর্ষ ৫০ স্টক ব্রোকারের তথ্য এবং তাদের ডিলার হিসাবের মোট সম্পদ মূল্যের হিসাব; তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যমান বিনিয়োগের চিত্র; যেসব ডিলারের বিও হিসাবে ২ কোটি টাকা বা তার বেশি শেয়ার বিক্রি হয়েছে তাদের হিসাব বিবরণীর কপি; স্টক ব্রোকার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পোর্টফোলিও’র হিসাব বিবরণী; আর্থিক খতিয়ান; ট্রান্সজেকশন ফি; ব্যাংক হিসাব; মোট অর্থ স্থানান্তর; জমা ও উত্তোলন; মোট শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ও মূল্যের হিসাব। পাশাপাশি তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক ও প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার বিক্রির পরিমাণ, মূল্য ও অর্থ উত্তোলনের হিসাব। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের মনিটরিং এবং সার্ভিলেন্স বিভাগ থেকে অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রতিবেদন, স্টক এক্সচেঞ্জের নিজস্ব বিচারে বাজার নেতিবাচক হওয়ার কারণ, গুজব বা অন্য কোনো তথ্য থাকলে সে সম্পর্কে প্রতিবেদন। মার্কেটকে প্রভাবিত করতে পারে পত্রিকার এমন প্রতিবেদন এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য চেয়েছে তদন্ত কমিটি।
এদিকে, তদন্ত কমিটি গত শনিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজের বড় লেনদেনগুলোর তথ্য খতিয়ে দেখেছে বলে জানা গেছে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এ তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে লেনদেন বন্ধের দিনকে বেছে নেয়া হয়েছে। ওইদিনের সভায় ডিএসই’র চিফ রেগুলেটরি অফিসারসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকে তারা এসব তথ্য খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেন, যা ওইদিন বিকাল পর্যন্ত চলে। আলোচ্য সময়ে অস্বাভাবিক লেনদেন ও সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করেছে তদন্ত কমিটি। তবে অন্যসব তথ্য দ্রুত সরবরাহ করতে ডিএসই-কে তাগিদ দিয়েছে এ কমিটি। ডিএসই-ও এসব তথ্য সবরাহ করতে কাজ করছে। এসব তথ্য আরও বিচার বিশ্লেষকরা করার পর চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করবে কমিটি, যা ঈদের পর বিএসইসি’র কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, টানা কয়েক মাস ধরে বাজারের নেতিবাচক অবস্থার কারণ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তদন্ত কমিটি। তারা ইতোমধ্যে তদন্ত সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সভাও সম্পন্ন করেছে। স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যও সংগ্রহ করেছে। এই কয়েকদিনের তদন্ত কার্যক্রমে দরপতনের পেছনের নেপথ্যে থাকা বেশ কিছু অনিয়মের চিত্রও পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এখন সেগুলো আরো গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পবিত্র ঈদ উল আযহার ছুটির পর অফিস শুরু হলে এ প্রতিবেদন জমা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কিছু কোম্পানির অস্বাভাবিক লেনদেন এবং স্টক এক্সচেঞ্জে অস্বাভাবিক ট্রেড ভলিয়ম খতিয়ে দেখতে গঠিত তদন্ত কমিটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ তদন্ত কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছে। কমিটি এখনও সময় বৃদ্ধির আবেদন করেনি। তাই আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে এ কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই অস্বাভাবিক লেনদেন এবং স্টক এক্সচেঞ্জে অস্বাভাবিক ট্রেড ভলিয়ম খতিয়ে দেখতে বিএসইসির পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন, বিএসইসি উপপরিচালক মো. অহিদুল ইসলাম, উপ পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ রাকিবুর রহমান। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। পরে কমিটিতে আরো ২ জন সদস্য বৃদ্ধি করে বিএসইসি।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ২১ ধারা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-এর ১৭ (ক) ধারা এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ) বিধিমালা, ১৯৯৫-এর বিধি ৬ অনুযায়ী গঠিত কমিটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৫১ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged