দেশীয় বীমায় রপ্তানির সুযোগ: রপ্তানি অর্থায়নে নতুন যুগের সূচনা

সময়: মঙ্গলবার, অক্টোবর ৭, ২০২৫ ১১:৫০:১১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রপ্তানি খাতকে নতুন গতি দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা করেছে এক যুগান্তকারী নীতিগত পরিবর্তন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সার্কুলার অনুযায়ী, এখন থেকে রপ্তানিকারকরা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর না করেই দেশীয় বীমা কোম্পানির পেমেন্ট রিস্ক কভারেজ বা পেমেন্ট আন্ডারটেকিংয়ের বিপরীতে ওপেন অ্যাকাউন্ট পদ্ধতিতে পণ্য রপ্তানি করতে পারবেন।

এই সিদ্ধান্তকে রপ্তানি খাতের জন্য “গেম চেঞ্জিং” পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা।

🔹 রপ্তানিতে বিদেশি নির্ভরতার অবসান
মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) জারি করা সার্কুলারটি দেশের রপ্তানিকারক সমাজে ব্যাপক স্বস্তি এনেছে।
এতদিন পর্যন্ত ওপেন অ্যাকাউন্ট পদ্ধতিতে পণ্য রপ্তানির জন্য কেবল বিদেশি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পেমেন্ট আন্ডারটেকিং গ্রহণ করা যেত।

এখন থেকে দেশীয় বীমা কোম্পানির বৈদেশিক মুদ্রাভিত্তিক বীমা পলিসির আওতায়ও একই পদ্ধতিতে রপ্তানি করা যাবে।
এই পরিবর্তন শুধু রপ্তানি প্রক্রিয়াকে সহজই করবে না, বরং দেশের অর্থনীতিতে বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভরতার পথ সুগম করবে।

🔹 রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে রপ্তানিকারকদের বাণিজ্যিক অর্থায়নে নমনীয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্যাংকগুলো এখন দেশীয় বীমা কভারেজের ভিত্তিতে রপ্তানি-পরবর্তী অর্থায়ন (Post-shipment Financing) প্রদান করতে পারবে।

ফলে রপ্তানিকারকরা সহজে অর্থায়ন পাবে, প্রক্রিয়া হবে দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত।
একইসঙ্গে স্থানীয় বীমা খাতের জন্যও এটি একটি বিশাল বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করেছে।

🔹 অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় কঠোর শর্ত
বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন এই নীতিমালায় আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর সুরক্ষা ব্যবস্থা রেখেছে।
যদি রপ্তানি আয় নির্ধারিত সময়ে দেশে প্রত্যাবর্তিত না হয়, তবে সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিকে সেই দাবি বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে।

এছাড়া, বীমা কোম্পানিগুলো প্রয়োজনে বিদেশি পুনর্বীমা (Reinsurance) নিতে পারবে, যাতে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এতে দেশীয় অর্থনীতি নিরাপদ থাকবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কোনো নেতিবাচক চাপ পড়বে না।

🔹 বিশ্লেষকদের মতে: “এটি একটি মাইলফলক”
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়িক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ইতিহাসে একটি বড় মাইলফলক।

তাদের মতে, এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে— বিদেশি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে,

দেশীয় বীমা শিল্পে নতুন গতি আসবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা আরও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করতে পারবে।

🔹 রপ্তানিতে স্বনির্ভর বাংলাদেশের পথে আরেক ধাপ
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সার্কুলার শুধু একটি নীতিগত পরিবর্তন নয়, বরং দেশের রপ্তানি অর্থনীতিকে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নেওয়ার কৌশলগত পদক্ষেপ।
এটি একইসঙ্গে বীমা শিল্পকে শক্তিশালী, ব্যাংকিং খাতকে গতিশীল এবং রপ্তানিকারকদের আস্থা পুনর্গঠনের পথ প্রশস্ত করবে।

বিশ্লেষকদের ভাষায়,

“এটি এমন একটি পদক্ষেপ, যা বাংলাদেশের রপ্তানিকে বিদেশি নির্ভরতা থেকে মুক্ত করে দেশীয় সম্ভাবনার যুগে প্রবেশ করাবে।”

 

Share
নিউজটি ১৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged