নারীদের রাগ ও ক্রোধ দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে

সময়: মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২০, ২০২২ ৬:০৬:২৪ অপরাহ্ণ


মোঃ রফিকুল ইসলাম : পুরুষ শাসিত সমাজের কারণে নারীরা নির্যাতিত বেশী হচ্ছে। কারণ এক সময় নারীদের স্বাধীনতা ছিল না, যার ফলে পুরুষ যা বলতো তা-ই মেনে সংসার করতে বাধ্য হতো। এর প্রধান কারণ ছিল শিক্ষা। সমাজে ছেলেরাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারতো। ফলে শিক্ষার দিক দিয়ে নারীরা পিছিয়ে পড়ে। বাধ্য হয়েই পুরুষের শাসন-শোষণ মেনে চলতে হতো। এক সময় নারীরা ঘরের বাহিরে যেতে হলে পুরুষের নির্দেশনা মেনে যেতে হতো। কারণ পুরুষগণই কর্মক্ষম ছিল, যারফলে পুরুষদের অধিকার বেশী ছিল।

আজ আর তা নয়, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও শিক্ষা গ্রহণ করছে, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও চাকুরী করছেন, ব্যবসা বাণিজ্য করছেন। আজ আর আগের মতো নারীরা পিছিয়ে নেই। দেশের গন্ডি পার হয়ে বিদেশেও নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্টীয় ক্ষমতায় নারীরা। পুলিশ, সেনাবাহিনী সর্বক্ষেত্রেই নারীরা কাজ করে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য খাত থেকে শুরু করে দেশের সকল ক্ষেত্রেই নারীরা নিরবে নিবৃত্তে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের দেশে সরকারী স্বাস্থ্য সেবায় নারী জনবল উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে উচ্চ পদে ও নীতি নির্ধারণী পদগুলোতে নারীর সংখ্যা এখনো কম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের জন-কাঠামোতে নারী ও পুরুষের বৈষম্য অনেকটা দূর হচ্ছে। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাতের পরিসংখ্যানের তথ্যমতে ৪০% নারী কাজ করেন। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে বিশ্বের দেশগুলোতে ২০% নারী কাজ করছে।

আমাদের দেশে আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোন কোন মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে নারীরা কাজ করে যাচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য খাতে উচ্চ পদে, নীতি নির্ধারণী পদে এখন পর্যন্ত কোন নারী অধিষ্ঠিত হয়নি। দেশের ৫২টি পরিচালকের পদের ৫০টি পুরুষের দখলে রয়েছে। কোন সরকারী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের পদে কোন নারী নেই। সারা দেশে সিভিল সার্জনের পদ আছে ৬৫টি তন্মধ্যে নারী আছেন মাত্র ৪টি। তবে নারী চিকিৎসকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো অচিরেই নারীরা উচ্চ পদে আসতে পারবেন।

সরকারী আদমশুমারী তথ্য মতে নারীর সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশী। সেই তথ্য মোতাবেক দেশের সর্বক্ষেত্রেই সমান সংখ্যক নারীদের নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।

একসময় মেয়েরা পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কিন্তু আজ আর নারীরা সে রকম বোঝা নয়, নারীরা সর্বক্ষেত্রেই কর্মক্ষম। তারা কাজ করছেন, চাকুরী করছেন আবার পুরুষদের থেকে আলাদা সংসার সামলাচ্ছেন, ছেলে-মেয়ে সামলাচ্ছেন। এক কথায় নারীরা আজ পুরুষদের থেকে বেশী কাজ করছেন।

বিবিসি’র প্রতিবেদনে বরা হয়, ১৫০টিরও বেশী দেশের ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশী মানুষকে বিভিন্ন প্রশ্নের পাশাপশি জিজ্ঞেস করা হয় আগে তারা কেমন ছিলেন এবং বর্তমানে কেমন অনুভব করছেন। পুরুষদের তুলনায় অধিকাংশ নারী নেতিবাচক আবেগ, রাগ, দুঃখ, বিষন্নতা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিবিসি’র পর্যালোচনায় আরও তথ্য প্রকাশিত হয় যে, ২০১২ সাল থেকে নারীরা পুরুষদের তুলনায় অধিক হারে দুঃখ ও উদ্বেগের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন। তবে নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই এই প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীরা বেশী ক্ষুদ্ধ, তাদের মানসিক চাপও বেশী। বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারীর সময় এটির পরিবর্তন বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও পুরুষদের তুলনায় নারীরা তাদের পরিবারের প্রতি বেশী যত্নশীল। পরিবারের পুরুষ ব্যক্তি বেশী উপার্জনশীল হলেও পরিবারের প্রতি কিছুটা হলেও উদাসীন। তবে সেক্ষেত্রে নারীরা যত্নশীল।

আজকাল নারী পুরুষ উভয়ই কাজে কর্মে সমান। যেমন, খেতে খামারে, অফিস, আদালতে, ব্যাংক, বীমায় নারীরা সমান্তরালভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নারীরা আরও শিক্ষিত, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হয়ে উঠেছে। একটা সময় প্রাচীন পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নারীরা আবদ্ধ ছিল, তাদের স্বাধীনতা ছিল না, ঘরের বাহিরে গেলেও অনুমতি লাগতো, কিন্তু আজ বাস্তবতার নিরিখে বিচার বিশ্লেষণে দেখা যায় আগের মতো পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে উত্তরোণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আজ নারীরা সকল ক্ষেত্রে কাজের স্বীকৃতি পেয়েছে, চাকুরী করছে নিজের টাকা নিজে খরচ করতে পেরেছে, সন্তানদেরকে দেখবাল করতে পেরেছে। স্বামী সংসার রক্ষণাবেক্ষণ করতে পেরেছে। শিক্ষা দ্বিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে, এক কথায় আজ নারীরা সর্বক্ষেত্রেই সাবলম্বী।

একটা সময় কর্মক্ষেত্রে নারীদের মজুরী কম ছিল, কর্মক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের কাছে অত্যন্ত নিপীড়িত নির্যাতিত ছিল। বর্তমানে তারা আজ নির্বিঘ্নে কাজ করতে পেরেছে, তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের কাজে আইনি কোন জটিলতা নেই। তবে নারীদের মধ্যে রাগ, আবেগ এবং একগেয়েমী দেখা যায়। মানুষের রাগ ক্রোধ থাকা ভালো, তবে সব সময় নয়। প্রবাদে আছে যিনি শাসন করেন তিনি সোহাগও করেন। অতএব রাগ, ক্রোধ না থাকলে সমাজে শৃংখলা থাকে না। সমাজে পরিবর্তন করতে চাইলে নারীদেরকে অবশ্যই পাশে রাখতে হবে। তবেই সমাজ পরিবর্তন করা সম্ভব।

Share
নিউজটি ২০৩ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged