‘নেগেটিভ-ইক্যুইটি’ শূন্যে নামাতে সময় বেঁধে দিয়েছে বিএসইসি

সময়: বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২ ৫:১১:৪৬ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘নেগেটিভ ইক্যুইটি (Negative Equity) বা ঋণাত্মক মূলধন শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ নেগেটিভ ইক্যুইটি শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে সঞ্চিতি রাখার বাধ্যবাধকতা স্থগিত রাখার মেয়াদ চলতি বছরের পর আর বাড়ানো হবে না। সর্বশেষ নির্দেশনা অনুসারে, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরে এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। বিএসইসির পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে তারা নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ শূন্যে নামাবে- সে কর্মপরিকল্পনাও বিএসইসিকে জানাতে বলা হয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১৬টি ব্রোকারহাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকে মোট ৮ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার নেগেটিভ ইক্যুইটি রয়েছে। আর এর ৮৬ শতাংশ রয়েছে মাত্র ২৭ প্রতিষ্ঠানের কাছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৫ টি ব্রোকারহাউজ ও ১২টি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে। এদের মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
আলোচিত ১১৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৯ মার্চেন্ট ব্যাংকে নেগেটিভ ইক্যুইটি রয়েছে ৩ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্য প্রতিষ্ঠান ৭৫ ব্রোকারহাউজে নেগেটিভ ইক্যুইটি ৪ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সদস্য প্রতিষ্ঠান ১২ ব্রোকারহাউজে আছে ৯৮ কোটি টাকার নেগেটিভ ইক্যুইটি।
শেয়ার কেনার জন্য গ্রাহককে দেওয়া ঋণের আসল ও সুদের পরিমাণ গ্রাহকের মূলধনের বেশী বেশি হলে সেটিকে নেগেটিভ ইক্যুইটি বা ঋণাত্মক মূলধন বলে।

মার্জিন ঋণ বিধিমালা অনুসারে, গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে থাকা মোট শেয়ারের মূল্য একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে নেমে এলে তার কাছে বাড়তি মার্জিন বা তহবিল চাইতে হয়। তিনি সেটি না দিলে বা দিতে অপারগ হলে তার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রযোজ্য সংখ্যক শেয়ার বিক্রি করে ওই মার্জিনের ঘাটতি সমন্বয় করতে হয়।

কিন্তু ২০১০ সালের ধসের প্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অর্থমন্ত্রণালয়ের মৌখিক নির্দেশে গ্রাহকের শেয়ার বিক্রি করে মার্জিনের ঘাটতি সমন্বয় বন্ধ রাখায় আলোচিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেগেটিভ ইক্যুইটির জটিলতা তৈরি হয়েছে।

আইডিএলসিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বছর কয়েক আগে নেগেটিভ ইক্যুইটির অ্যাকাউন্টের সব শেয়ার বিক্রি করে এবং মূল কোম্পানি থেকে তার সাবসিডিয়ারিকে বাড়তি মূলধনের যোগান দিয়ে এই সংকট থেকে বের হয়ে এসেছে। কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এই পথ অনুসরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও বাজারের মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ ক্রমেই বেড়েছে। এটি বাজারের স্থিতিশীলতার জন্যে একটি বড় হুমকী হয়ে উঠেছে। তাছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব নেগেটিভ ইক্যুইটির অ্যাকাউন্টকে ব্যবহার করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বাস্তবতায় অনেকদিন ধরে নেগেটিভ ইক্যুইটি সমস্যার সমাধানে তাগিদ দিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী গণমাধ্যমকে বলেছেন, কোনো ধরনের নীতিগত সহায়তা ছাড়া গড়ে সবাইকে নেগেটিভ ইক্যুইটির সমাধানে বাধ্য করা হলে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দেওলিয়া হয়ে যেতে পারে। কারণ এ সমস্যার সমাধানের আর্থিক সঙ্গতি নেই এসব প্রতিষ্ঠানের। তারা দাবি করেছেন, তারাও নেগিটিভ ইক্যুইটির সমাধান চান। এ ক্ষেত্রে নমনীয় সুদে দীর্ঘমেয়াদী কোনো ঋণের ব্যবস্থা করা হলে প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা পাবে, বাজারেও তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

 

Share
নিউজটি ৩১৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged