বীমার সাবসিডিয়ারি কোম্পানির এমডি নিয়োগে পূর্বানুমোদন লাগবে

সময়: সোমবার, জুলাই ২২, ২০১৯ ৪:৪৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ


অনুপ সর্বজ্ঞ : বীমা কোম্পানিগুলোর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ (আইডিআরএ)-এর পূর্বানুমোদন লাগবে। অতি সম্প্রতি সংস্থাটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিগগিরই এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

আইডিআরএ সূত্রে জানা যায়, বীমা কোম্পানিগুলোর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের এমডি নিয়োগে আইডিআরএ’র পূর্বানুমোদন নেয়া হয় না। ফলে কোম্পানিগুলোতে নানা ধরনের অনিয়ম ঘটছে। বিশেষত: সাবসিডিয়ারি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত দামি গাড়ি ব্যবহার করছেন। তাদের বেতন-ভাতাও অনেক ক্ষেত্রে মূল কোম্পানির চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও বেশ কিছু কোম্পানি জড়িয়ে পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়। মূলত এ কারণেই সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে কর্র্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ’র কনসালটেন্ট এনায়েত আলী খান বলেন, ‘সাবসিডিয়ারির এমডি নিয়োগে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে কোম্পানিগুলোতে চিঠি পাঠানো হবে। বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার্থেই আমাদের এ পদক্ষেপ।’

জানা যায়, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের এক বা একাধিক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠনের সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছেÑ সাবসিডিয়ারি কোম্পানির সংঘস্মারক ও সংঘবিধি (মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন) নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে দাখিল করতে হবে। কিন্তু তা না করেই এ খাতের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করেছে।

জানা যায়, অধিকাংশ বীমা কোম্পানি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খুলে ব্রোকারেজ ব্যবসা করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা মনে করছে, বীমা কোম্পানিগুলোর এ ধরণের ব্যবসায় বীমা গ্রহীতাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোতে মূল কোম্পানির বিনিয়োগের পরিমাণও নিয়ন্ত্রক সংস্থার জানা নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ‘ডিএলআইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড’ নামে ব্রোকারেজ হাউস খুলে ব্যবসা করছে। এতে মূল কোম্পানির শেয়ার ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯১টি।
ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ‘এনএলআই সিকিউরিটিজ লিমিটেড’। এতে বীমা কোম্পানিটির ৩ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার রয়েছে।
আর প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ‘প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজ লিমিটেড’-এ রয়েছে কোম্পানিটির ৩ কোটি ৭৫ হাজার শেয়ার।
‘বিডি সানলাইফ সিকিউরিটিজ’ খুলে ব্রোকারেজ ব্যবসা করছে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স। এতে তাদের শেয়ার রয়েছে ১৩ হাজার।
মেঘনা লাইফ-এর ৩ কোটি ৯৬ লাখ শেয়ার রয়েছে ‘মেঘনা লাইফ সিকিউরিটিজ’-এ এবং পপুলার লাইফ-এর ৯৯ হাজার ৯৯৯টি শেয়ার রয়েছে ‘পপুলার লাইফ সিকিউরিটিজ’-এ। সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর রয়েছে দুটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান। ‘সন্ধানী লাইফ ফিন্যান্স’ ও ‘সন্ধানী লাইফ হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি’ খুলে ব্যবসা করছে তারা।
গোল্ডেন লাইফ-এর রয়েছে ‘গোল্ডেন হোল্ডিংস লিমিটেড’।
সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা করছে ‘ইবিএস প্রপার্টিজ লিমিটেড’ খুলে।

আইডিআরএ’র অনুমোদন না নিয়ে বীমা কোম্পানিগুলোর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান খোলা প্রসঙ্গে বীমা মালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন’ (বিআইএ)-এর চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন ‘শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘কোনো বীমা প্রতিষ্ঠান যদি আইন লঙ্ঘন করে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করে অথবা এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রেও কোন অনিয়ম ঘটে থাকে, তবে তা তদন্ত করে দেখা উচিত। অনিয়ম প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।’

এদিকে আইন অমান্য করলেও বীমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে কঠিন। আইডিআরএ সূেত্র জানা যায়, ২০১১ সালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের পরপরই ‘প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স’-এর বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘন করে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ওই সময় কোম্পানিটিকে শোকজ করে আইডিআরএ। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানা যায়।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪০১ বার পড়া হয়েছে ।