বিশ্লেষকদের অভিমত

ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগের নির্দেশনা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ

সময়: সোমবার, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯ ১২:০৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘমন্দা বাজারে বিনিয়োগকারীরা যখন দিশেহারা, তখন ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এ নির্দেশনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন নির্দেশনায় বাজারে পতন রোধের পাশাপাশি স্থিতিশীলতা ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা একটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন তারা।
গতকাল রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ করার নির্দেশনা দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এই বিনিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৯টি শর্ত পরিপালন করে ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বলা হয়েছে।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে যেসব কারণে দরপতন হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম তারল্য সঙ্কট। তারল্য সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করায় পতন ত্বরান্বিত হয়েছে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকায় বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থা হারায়। এতে অনেক বিনিয়োগকারী সাইড লাইনে চলে যায়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও বাজারে বিনিয়োগের ফান্ড সঙ্কটে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নির্দেশনা জারি করেছে, তাতে বাজারে তারল্য সঙ্কট দূর হবে। ধীরে ধীরে বিনিয়োগ বাড়বে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। বাজার স্থিতিশীল হবে।
এ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার কারণে ব্যাংকগুলোর তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে সক্ষম হবে। যার মাধ্যমে বাজারে গতি ফিরে আসবে।
এ সম্পর্কে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মো. রকিবুর রহমান ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি বাজারের ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ ব্যাংককে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। এর মাধ্যমে তারল্য সঙ্কট দূর হবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের ভূমিকা পালন করেছে। নির্দেশনায় ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হলো।
তিনি বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। বাস্তবধর্মী সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানাই। এ নির্দেশনার মাধ্যমে বাজারে পতন রোধ হবে, তারল্য সঙ্কট দূর হয়ে বাজারে গতি ফিরবে। ধীরে ধীরে বাজার স্থিতিশীল হবে।

এদিকে ‘বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (বিএমবিএ)- এর মহাসচিব খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে বাজারে যে তারল্য সংকট আছে তা কিছুটা হলেও দূর হবে। এতে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

গতকাল রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংকের অগ্রিম ও আমানতের অনুপাত নির্ধারিত মাত্রা অপেক্ষা কম এবং এসএলআর সংরক্ষণের পর অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। এসব ব্যাংকের জন্য আইনি সীমার মধ্যে থেকে পুঁজিবাজারে মৌলভিত্তিক ইন্সট্রুমেন্টে বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যাংকসমূহের এরূপ বিনিয়োগে অংশগ্রহণ (নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারী কোম্পানিতে ঋণ প্রদানকরতঃ উক্ত কোম্পানির নিজস্ব পোর্টফোলিওর আকার বৃদ্ধির মাধ্যমে পরোক্ষ বিনিয়োগ) পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি একটি গতিশীল পুঁজিবাজার নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তারল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত শর্তাধীনে সাময়িক তারল্য সুবিধা প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে:
ক) তারল্য সুবিধা গ্রহণেচ্ছুক ব্যাংকের ঝড়ষড় ও ঈড়হংড়ষরফধঃবফ উভয় ভিত্তিতে পুঁজিবাজার বিনিয়োগ ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০১৮ পর্যন্ত সংশোধিত) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত সার্কুলারে বর্ণিত সর্বোচ্চ সীমার (ভিত্তিতে বিবেচ্য মূলধন উপাদানের ২৫% এবং ঈড়হংড়ষরফধঃবফ ভিত্তিতে বিবেচ্য মূলধন উপাদানের ৫০%) কম হতে হবে। তারল্য সুবিধা গ্রহণের পরও বর্ণিত বিনিয়োগ সীমা পরিপালন করতে হবে।
খ) এ সুবিধার অধীনে প্রাপ্ত তারল্য শুধু ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা সাবসিডিয়ারি কোম্পানির নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে ঋণ হিসেবে প্রদান করা যাবে।
গ) প্রাপ্ত তারল্য ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বা সাবসিডিয়ারি কোম্পানির নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগের জন্য নতুনভাবে পৃথক বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
ঘ) ব্যাংকসমূহের অতিরিক্ত তারল্য হতে ট্রেজারি বন্ড বা বিল রেপোর মাধ্যমে এই তারল্য সুবিধা গ্রহণ করতে হবে। ট্রেজারি বন্ড বা বিলের রেপো মূল্যের ৫% মার্জিন হিসেবে রেখে তারল্য সুবিধা প্রদেয় হবে। নগদে রেপোর অর্থ পরিশোধে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজের বাজারমূল্য আদায়যোগ্য অর্থ অপেক্ষা কম হলে তা ইতোপূর্বে গৃহীত মার্জিন হতে সমন্বয় করা হবে এবং সমন্বয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে ব্যাংক তা প্রদান করতে বাধ্য থাকবে।
ঙ) প্রাথমিকভাবে রেপোর মেয়াদ ২৮ দিন হলেও তহবিল ব্যবহারের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে তা সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত ঘূর্ণায়মাণ রাখা যাবে। এরূপ রেপোর জন্য কোন অকশনের প্রয়োজন হবে না এবং সুদের হার হবে ৬ শতাংশ।
চ) এরূপ তারল্য সুবিধা গ্রহণের জন্য যাচিত অর্থের পরিমাণ উল্লেখপূর্বক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন এবং এতদুদ্দেশ্যে সদ্য খোলা বিও হিসাবের প্রমাণপত্রসহ মহাব্যবস্থাপক, ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর আবেদন করতে হবে। প্রদানযোগ্য তারল্য সুবিধার পরিমাণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে এবং পুনঃবিবেচনার জন্য কোন আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
ছ) মেয়াদোত্তীর্ণ রেপো নবায়নের প্রয়োজন হলে তহবিল ব্যবহারের প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিও একাউন্ট-এর হিসাবসহ মহাব্যবস্থাপক, ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ৫ কার্যদিবস পূর্বে আবেদন করতে হবে।
জ) সার্কুলার জারির ৩ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর আবেদন দাখিল করতে হবে।
(ঝ) এতদ্সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশে প্রচলিত সংশ্লিষ্ট আইন এবং সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত অন্যান্য নির্দেশনার পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৪৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged