aci

ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি : এসিআই’র লোকসান নিয়ে ডিএসই’র তদন্তে অসঙ্গতি

সময়: বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২২, ২০১৯ ৫:২৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ


সালাহ উদ্দিন মাহমুদ : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘অ্যান্ডভান্স কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ’ (এসিআই)-এর লোকসান খতিয়ে দেখতে গঠিত ডিএসই’র তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ইতোমধ্যে ডিএসই’র কাছে চিঠির মাধ্যমে এ অসঙ্গতির ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে। যা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্রে জানা যায়, ডিএসই’র গঠিত তদন্ত কমিটি বিএসইসি’র কাছে যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে, এতে অসঙ্গতি রয়েছে। এর মধ্যে ‘এসিআই লিমিটেড’ ও ‘এসিআই লজিস্টিকস’-এর কর-পরবর্তী মুনাফার যে তুলনামূলক চিত্র দেখানো হয়েছে, সেখানে বেশ ভিন্নতা পেয়েছে বিএসইসি। উদাহরণস্বরূপ ২০০৯ সালে কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে এসিআই’র কর পরবর্তী মুনাফা দেখানো হয়েছে ৯৮ কোটি ৬৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৮৩ টাকা। যা ডিএসই’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ৯৮ কোটি ৯৫ লাখ ৬১ হাজার ৯৬২ টাকা। এখানে ডিএসই’র প্রতিবেদন অনুযায়ী ২৯ লাখ ১৯ হাজার ২৭৯ টাকার ভিন্নতা রয়েছে। আবার ২০১৩ সালে কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে এসিআই লজিস্টিকসের কর পরবর্তী লোকসান দেখানো হয়েছে ৮৪ কোটি ৯১ লাখ ১৭ হাজার ৬১৭ টাকা। যা ডিএসই’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ৮৬ কোটি ৩৯ লাখ ৬১ হাজার ৮২৩ টাকা। এখানে ডিএসইর প্রতিবেদন অনুযায়ী ১ কোটি ৪৮ লাখ ৪৪ হাজার ২০৬ টাকার ভিন্নতা রয়েছে।
এদিকে কর পরবর্তী সমন্বিত আয়েও এ ধরনের ভিন্নতা পেয়েছে বিএসইসি। চিঠিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বলছে, এসিআই লজিস্টিকস (স্বপ্ন) একটি অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি। কোম্পানির প্রতিবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে এসিআই লজিস্টিকসের কোনো শেয়ার সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। প্রতিবেদনে শুধু কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এসিআই লজিস্টিকসের শেয়ারপ্রতি আয় কীভাবে হিসাব করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। এছাড়া প্রতিবেদনে কোম্পানির সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা এবং মুনাফা-লোকসানের অবস্থা মন্তব্যের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে। যেখানে কোনো সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন উল্লেখ করা হয়নি। এখানে শুধু ২০১৮ সালের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনের ওপর নিরীক্ষকের মন্তব্য দেয়া হয়েছে। অথচ ২০০৯ সাল থেকে বাকি নিরীক্ষা প্রতিবেদনে নিরীক্ষকের মন্তব্য দেয়া হয়নি।
এসব প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রতীয়মান হয় যে, এখানে শুধু সামগ্রিক লোকসান, উচ্চ প্রশাসনিক ও মার্কেটিং খরচ, উচ্চ আর্থিক খরচ দেখানো হয়েছে। যেখানে দেখানো হয়েছে এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেড হুমকির মুখে। তাই এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ এর ধারা ২৪ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ৬(৩) অনুযায়ী ৭ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটোয়ারি ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে ডিএসই’কে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে গঠিত কমিটি সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখছে। কোনো ধরণের অসঙ্গতি থাকলে তা সঠিক করে বিএসইসি’র নির্দেশনা পরিপালন করবে কমিটি।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসিআই লিমিটেডের সর্বশেষ প্রান্তিকের লোকসানসহ কোম্পানির গত কয়েক বছরের আর্থিক বিবরণীর তথ্য মনগড়া ও কারসাজিপূর্ণ বলে অভিযোগ উঠে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ লোকসান দেয়ার পরও ‘স্বপ্ন’-এর কার্যক্রম বন্ধ করে না দেয়ায় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে নানা ধরনের সন্দেহ, কোম্পানির মালিক পক্ষের প্রতি অবিশ্বাস বিরাজ করছে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ।

এদিকে ডিএসই পর্ষদ এক ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে। ডিএসই’র পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়াকে কমিটির প্রধান করা হয়। ছয় সদস্যের কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- ডিএসই’র পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমান, পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, স্বতন্ত্র পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী, প্রফেসর ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং ডিএসই’র প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল মতিন পাটোয়ারি।

কোম্পানিটি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’১৮) ৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা লোকসান দেখায়। আর শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখানো হয় ৭৮ পয়সা। অথচ আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল। সে বছর ইপিএস দেখানো হয়েছিল ৫ টাকা ৪৪ পয়সা। এসিআই-এর মতো ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির এই লোকসানের বিষয়টি পুঁজিবাজার অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটি লোকসানের পেছনে বিশেষ ৫টি কারণ ছিল বলে উল্লেখ করে। এর মধ্যে ‘বাড়তি করের চাপ’কে একটি কারণ হিসেবে দেখানো হয়। তাদের এই দাবি এবং আর্থিক প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য ছিল পরস্পর বিরোধী। করের বাড়তি চাপ হয়ে থাকলে আলোচ্য প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’১৮) এই খাতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু কোম্পানির দেয়া তথ্যানুসারে ওই প্রান্তিকে আয়কর বাবদ আগের বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে কম টাকা ব্যয় হয়েছে। চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসিআই লিমিটেড আয়কর বাবদ ৩৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয় করেছে, যা আগের বছর একই প্রান্তিকে ছিল ৩৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
এসিআই লিমিটেড ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে কোম্পানির মোট শেয়ারের ৪৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ২৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার এবং ২৪ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৫৬৯ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged