মালিকানা পরিবর্তনের প্রভাব : পদ্মা লাইফের লভ্যাংশ নিয়ে অনিশ্চয়তা

সময়: রবিবার, জুলাই ২১, ২০১৯ ৫:০২:২৭ পূর্বাহ্ণ


অনুপ সর্বজ্ঞ : কোন জীবন বীমা কোম্পানিকে লভ্যাংশ দিতে হলে প্রথমেই অ্যাকচুরিয়াল বেসিসের (সম্পদ ও দায় মূল্যায়ন প্রতিবেদন) অনুমোদন নিতে হয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্র্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ার পরই বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারে জীবন বীমা কোম্পানিটি। তবে নির্ধারিত সময়ে অ্যাকচুরিয়াল ভ্যালুয়েশনের বেসিস তৈরী করতে না পারায় ২০১৭ সালের জন্য কোন লভ্যাংশ দিতে পারেনি সদ্য মালিকানা পরিবর্তন হওয়া প্রতিষ্ঠান ‘পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স’। একই কারণে ২০১৮ সালের লভ্যাংশ নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। কারণ এখন পর্যন্ত গত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনই তৈরি হয়নি। আর নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির পরই সম্পন্ন হয় কোম্পানির অ্যাকচুরিয়াল ভ্যালুয়েশন।

পদ্মা লাইফের ব্যবসায়িক চিত্র পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ২০১৭ সালের শুরুতেই এ কোম্পানির মালিকানা বদলের খবর ছড়িয়ে পড়ে বাজারে। ২০১৮ সালে মালিকানা বদলের পর থেকেই কোম্পানিটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে তৈরি এক ধরনের অস্থিরতা। চাকরি হারাতে হয়েছে পুরোনো অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীকে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যবসাতেও।

পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মোরশেদ আলম সিদ্দিকি ‘শেয়ার বাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘মাত্র দুই মাস হলো আমার প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের। তাই অ্যাকচুরিয়াল বেসিসের বিষয়টি আমার জানা নেই।’

কোম্পানিটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসি উদ্দীন বলেন, ‘অ্যাকচুয়ারি সংকটের কারণে বেসিস তৈরি করতে একটু সময় লেগে যায়। এছাড়া মালিকানা পরিবর্তন ও এ সংক্রান্ত কাজে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ব্যস্ত থাকার কারণে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৈরি সম্ভব হয়নি। ফলে ২০১৭ সালে লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে পদ্মা লাইফ। ২০১৮ সালেও একই জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে আমার ধারণা শিগগিরই এসব জটিলতা কাটিয়ে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে সক্ষম হবে কোম্পানি।’

আইডিআরএ’র তথ্য অনুযায়ী, মালিকানা বদলের পর এক বছরের ব্যবধানে ৭৩ শতাংশ প্রিমিয়াম আয় কমেছে এ কোম্পানির। পদ্মা লাইফ ২০১৮ সালে সর্বমোট ‘নতুন’ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৭ সালে নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছিল ৪২ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ২০১৮ সালে পদ্মা ইসলামী লাইফ সর্বমোট ‘নবায়ন’ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ৪৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৭ সালে কোম্পানিটির সর্বমোট নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছিল ৬৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ২৪ শতাংশ।

এছাড়া কোম্পানির ‘প্রিমিয়াম তামাদি’র হারও আশঙ্কাজনক। ২০১৭ সালে পদ্মা ইসলামী লাইফ ৪২ কোটি ১৩ লাখ টাকা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছিল। ২০১৮ সালের এসে এসব পলিসি থেকে প্রিমিয়াম আয় করেছে ৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৩৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা বা ৮৬ শতাংশ প্রিমিয়াম তামাদি হয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লিস্টিং রেগুলেশন অনুযায়ী, হিসাব বছর শেষ হওয়ার ৪ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এছাড়া বছর শেষ হবার নয় মাসের মধ্যে কোম্পানিটিকে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) সম্পন্ন করতে হবে। কোন কারণে এ সময়ে মধ্যে এজিএম সম্পন্ন করতে না পারলে রেজাস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) থেকে আরও তিন মাস পর্যন্ত সময় নেয়া যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও ব্যর্থ হলে আদালত থেকে অনুমোদন নিয়ে আসার সুযোগ রাখা হয়েছে বিধিতে।

জানা যায়, পুঁজিবাজারে কোম্পানির সার্বিক পরিস্থিতি ও ব্যবসায়িক চিত্র পর্যবেক্ষণ করে অ্যাকচুরিয়াল ভ্যালুয়েশনের বেসিস তৈরি করে অনুমোদন প্রাপ্ত অ্যাকচুয়ারি (সম্পদ ও দায় নিরূপনকারী)। কোম্পানির সম্পদ বেশি হলে উদ্বৃত্ত (সারপ্লাস) অর্থ থাকে। যা থেকে বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারে কোন জীবন বীমা কোম্পানি। কিন্তু সম্পদের তুলনায় দায় বেশি হলে লভ্যাংশ দেয়া নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা।

পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব আবু সাঈদ বলেন, ‘আমাদের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর পর অ্যাকচুরিয়াল ভ্যালুয়েশনের বেসিস নিয়ে কাজ শুরু হবে। মূলত অ্যাকচুরিয়াল বেসিস দেখার পরই বোঝা যায় জীবন বীমা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা। এর আগে কোম্পানি লভ্যাংশ দিতে পারবে কিনা তা কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই।’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পদ্মা লাইফের সকল দায়সহ ১২ পরিচালক এবং ৬ শেয়ারহোল্ডারের হাতে থাকা ১ কোটি ৭৪ লাখ ১০ হাজার ৯০০ শেয়ার কিনে নেয় এস আলম গ্রুপ। ২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি সর্বশেষ ২০১৬ সালে ২০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। এর আগে টানা তিন বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। তালিকাভুক্তির বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে ৮ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয় পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪১৮ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged