মৌলভিত্তিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগে বিদেশিরা এগিয়ে

সময়: রবিবার, জুলাই ২৮, ২০১৯ ৫:১৮:২৯ পূর্বাহ্ণ


সালাহ উদ্দিন মাহমুদ : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৩৮টি কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে। মূলত মৌলভিত্তির প্রতিষ্ঠানেই বিদেশিদের বিনিয়োগ বেশি। আর যে কোম্পানিগুলোতে বিদেশিরা বেশি বিনিয়োগ করেছে, সেই কোম্পানিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ কম।
গত জুনের বিনিয়োগ চিত্রে দেখা যায়, বিদেশিদের বিনিয়োগ করা ১৩৮ কোম্পানির মধ্যে ব্যাংকে ২৫টি, আর্থিক খাতে ১৩টি, ওষুধ খাতে ১২টি, ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে ১২টি, সিমেন্ট ও সিরামিকে ৮টি, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৪টি, বস্ত্র খাতে ১৬টি এবং জ্বালানি খাতের ১০টি কোম্পানিতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে। তবে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লেও গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে পোর্টফোলিও-তে নিট বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে। গত জুন শেষে পুঁজিবাজারে বিদেশি নিট বিনিয়োগ কমেছে ১০ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ পরিকল্পনার সাথে দেশীয় সাধারণ বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ পরিকল্পনা মিল নেই। কারণ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ‘ডে-ট্রেডিং’-ই বেশি পছন্দ করেন। আর বিদেশিরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করে থাকেন। এর ফলে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির অধিকাংশ শেয়ার বিদেশিদের হাতে চলে যাচ্ছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ এ-প্রসঙ্গে ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, ‘আমাদের দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দৈনিক লেনদেন করতে বেশি পছন্দ করেন। তারা অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন করতে চান। যেখানে বিদেশিরা সম্পূর্ণ বিপরীতভাবে বিনিয়োগ করেন। তারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সামান্য মুনাফা পেলেই ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ার বেশি কেনেন, কারণ ওসব কোম্পানির শেয়ার দর অনেক বেশি ওঠানামা করে। তাই ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের সঙ্গে সাধারণ বিনিয়োগকারীর একটা দূরত্ব তৈরি হয়।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তা ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, বিদেশিরা কোম্পানিগুলোতে একটি নির্দিষ্ট সময় নিয়ে বিনিয়োগ করে থাকেন। তাতে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের প্রাইস মুভমেন্ট তুলনামূলক কম থাকে। এতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশ কমে আসে। বিদেশিরা মূলত সাধারণ বিনিয়োগকারীর অংশ থেকে শেয়ার কিনে থাকেন। তাই যে কোম্পানির শেয়ার বিদেশিরা বেশি ক্রয় করেন, সেই কোম্পানির শেয়ারে সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার ধারণ কমে যায়।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদেশিদের পোর্টফোলিওতে শেয়ার ধারণের হার বিবেচনায় সবার ওপরে আছে ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং (ডিবিএইচ)। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৪২ দশমিক ৭৭ শতাংশই বিদেশিদের হাতে রয়েছে, সেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। এই কোম্পানিতে বিদেশিদের শেয়ারধারণ রয়েছে ৪২ দশমিক ৫২ শতাংশ, অন্যদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ। এই কোম্পানিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে মোট শেয়ারের ৪০ দশমিক ১৯ শতাংশ, এর বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। এছাড়া বেক্সিমকো ফার্মাতে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে মোট শেয়ারের ৩৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১৬ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ার। ইসলামী ব্যাংকে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে মোট শেয়ারের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেয়ার। রেনেটাতে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে মোট শেয়ারের ২২ দশমিক ৩১ শতাংশ। এর বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ শেয়ার। শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে মোট শেয়ারের ২০ দশমিক ৩৩ শতাংশ শেয়ার। এর বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার। বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলসে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে মোট শেয়ারের ১৭ দশমিক ০৬ শংতাশ। এর বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ২২ দশমিক ৫৮ শতাংশ শেয়ার। স্কয়ার ফার্মাতে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে মোট শেয়ারের ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৩৫ দশমিক ৩০ শতাংশ শেয়ার। কুইন সাউথ টেক্সটাইলে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে মোট শেয়ারের ১৬ দশমিক ৯০ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১৩.৮১ শতাংশ শেয়ার। আমরা নেটওয়ার্কে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে মোট শেয়ারের ১৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। এর বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ২৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বিএটিবিসিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে মোট শেয়ারের ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। এর বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ২ দশমিক ০২ শতাংশ শেয়ার। আইডিএলসি ফাইন্যান্সে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে মোট শেয়ারের ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সিটি ব্যাংকে বিদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে মোট শেয়ারের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৩৫ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৫৬ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged