ওটিসি’র দুই কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা : বিএসইসি’র কালক্ষেপণে বঞ্চিত হচ্ছেন শেয়ারহোল্ডাররা

সময়: রবিবার, জুলাই ২৮, ২০১৯ ৫:২০:২৯ পূর্বাহ্ণ


নাজমুল ইসলাম ফারুক : পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বাংলাদেশ সিকিউরটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ (বিএসইসি)-এর কালক্ষেপণের কারণে দুই কোম্পানির বোনাস লভ্যাংশ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শেয়ারহোল্ডাররা। ফলে এ দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে। জানা যায়, ‘ওভার দ্য কাউন্টার’ (ওটিসি) মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফেরার প্রক্রিয়া হিসেবে গত ২০১৮ সালের জুনে আর্থিক বছর শেষে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০০ শতাংশ হারে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মাগুরা গ্রুপের দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছেÑ ‘বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড’ ও ‘পেপার প্রসেস অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড’। কিন্তু কোম্পানি দুটি লভ্যাংশ দিতে পারবে কি নাÑ এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মতামত জানায়নি বিএসইসি। ফলে আরও একটি হিসাব বছর (জুন, ২০১৯) শেষ হয়ে গেলেও লভ্যাংশ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসই’র তথ্যমতে, উৎপাদন নেই, কাগুজে শেয়ার, নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে পারে না, আর্থিক প্রতিবেদন সময় মতো জমা দিতে না পারা, লভ্যাংশ দিতে ও শর্ত (কপ্লায়েন্স) পরিপালনে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোকে মূল মার্কেট থেকে সরিয়ে নিয়ে ২০০৯ সালে ওটিসি মার্কেট গঠন করা হয়। ওই সময় আলোচ্য কোম্পানি দুটিও ওটিসিতে স্থান পায়। পরে কমপ্লায়েন্স পরিপালন করে কিছু কোম্পানি মূল মার্কেটে ফিরে এসেছে। সম্প্রতি সময়ে আরো বেশ কয়েকটি কোম্পানি মূল মার্কেটে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর জন্য কোম্পানিগুলো তাদের মূলধন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলো নিয়মিত লভ্যাংশ ও এজিএম করছে।
এদিকে, মূল মার্কেটে আসার লক্ষ্যে আলোচ্য বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি এবং পেপার প্রসেস অ্যান্ড প্যাকেজিং ইতোমধ্যে পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০১৮ সালের জুন হিসাব বছর শেষে ২০০ শতাংশ করে লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বিএসইসির অনুমোদন না পাওয়ায় তা শেয়ারহোল্ডারদের হিসাবে পাঠাতে পারেনি।
কোম্পানি দু’টির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, মূল মার্কেটে ফেরার লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছে। কোম্পানি দু’টির পণ্য উৎপাদন চালু আছে, নিয়মিত এজিএমও করেছি। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এজিএম-এ বিনিয়োগকারীরা ওই লভ্যাংশ সমর্থন করেছে। অনুমোদন না পাওয়ায় লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের হিসাবে দিতে পারছে না কোম্পানি দু’টি। এ বিষয়ে একাধিকবার অনুমোদন চেয়ে বিএসইসিতে চিঠিও দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের কোম্পানি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’- কে বলেন, ‘ওটিসির মার্কেটের কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ দিতে হলে বিএসইসি’র অনুমোদন নিতে হয়। সে জন্য আমরা কোম্পানি দু’টির পক্ষ থেকে লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য বিএসইসিতে আবেদন করেছি। কিন্তু অনুমোদন না পাওয়ায় শেয়ারহোল্ডারদের হিসাবে লভ্যাংশ পাঠানো যাচ্ছে না। তবে অনুমোদন পেলেই শেয়ারহোল্ডাদের হিসাবে লভ্যাংশ পাঠানো হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওটিসি মার্কেটে যেসব কোম্পানি রয়েছে সেগুলোতে বিনিয়োগ করে সব দিক দিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় বিনিয়োগকারীদের। কিছু কোম্পানির কাগুজে শেয়ার এখনো ইলেক্ট্রনিক শেয়ারে রূপান্তর করেনি। এসব শেয়ার চুক্তিতে লেনদেন হয়। ফলে প্রকৃত দরও পায় না বিনিয়োগকারীরা। যেসব কোম্পানি মূল মার্কেটে আসতে চাচ্ছে সেগুলোর লভ্যাংশও সময় মতো পাচ্ছে না শেয়ারহোল্ডাররা। তাছাড়া কোম্পানিগুলো সময় মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তথ্যও দিচ্ছে না। যেসব কোম্পানি তথ্য দিচ্ছে- সেগুলোর বিষয়েও পদক্ষেপ নিতে বিএসইসি গড়িমসি করছে। সব মিলিয়ে কোম্পানি এবং বিএসইসি’র সময়ক্ষেপনের কারণে শেয়ারহোল্ডাদের ভোগান্তি বাড়ছে।
বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ২৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ৩৫ টাকায় লেনদেন হয়েছে। পুঁজিবাজারে ১৯৮৯ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৭ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ৩০ লাখ ৪৮ হাজার ৩২০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৫৩ দশমিক ৮২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিকট ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ শেয়ার আছে।
অপরদিকে পেপার প্রসেস অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের ১৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ১২ টায় লেনদেন হয়েছে। পুঁজিবাজারে ১৯৯০ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৪ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৪৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫১ দশমিক ২৪ শতাংশ শেয়ার আছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসি’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ওটিসি মার্কেটের কোম্পানি দু’টি বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার পর অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। কোম্পানির দু’টির কিছু তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে সব ঠিক থাকলে লভ্যাংশ অনুমোদন দেবে কমিশন।
তবে এ বিষয়ে বিএসইসি’র মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি মুঠোফোন ধরেননি।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৮৭ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged