রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত পেতে সহযোগিতা করবে ফিলিপাইন

সময়: বুধবার, ডিসেম্বর ৪, ২০১৯ ১০:২৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ফিলিপাইন। তবে শিগগিরই অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব (এশিয়া ও প্যাসিফিক) মাসুদ বিন মোমেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় ফিলিপাইনের সঙ্গে দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বা সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে তিনি একথা জানান।
চার বছর পরে দু’দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কা এবং ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে। চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত ফেরত এসেছে এক কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত পাওয়া যায়নি।
এই অর্থ কবে নাগাদ ফেরত আসতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়া সবসময় দীর্ঘ হয়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন এবং বাংলাদেশে আইনি প্রক্রিয়া চলছে।
‘আইনি প্রক্রিয়ার ওপর আলাদা কারো হাত নেই। যুক্তরাষ্ট্রে বা ফিলিপাইনে যে বিচার চলছে, তা চলবে। এগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এসব মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার বিষয়ে নির্ধারিত কোনো সময় বাধা নেই,’ বলেন মাসুদ বিন মোমেন।

তিনি বলেন, বৈঠকে ফিলিপাইনের কাছে আমরা কয়েকটি বিষয়ে সাহায্য চেয়েছি। যেমন- কিছু অপরাধীর পরিচয় নিশ্চিত করা। এই তথ্য ফিলিপাইন আমাদের দেয়নি। এছাড়া কিছু ফিন্যান্সিয়াল (অর্থনৈতিক) বিষয় আছে। সেটাও তারা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এই ফিন্যান্সিয়াল তথ্য এবং আইডেন্টিটির বিষয়গুলো নিষ্পত্তি হলে বাংলাদেশে যে মামলা চলছে তার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিতে সুবিধা হবে।

এই তথ্য দেয়ার বিষয়ে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের কাছে এই তথ্য জমা আছে। তাদের অনুমতি সাপেক্ষে ফিলিপাইন এটি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবে।’

তিনি জানান, ফিলিপাইন আরসিবিসি ব্যাংককে ২০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছে। এই টাকাটাও বাংলাদেশকে দেয়ার ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা চলছে। তবে তারা এ বিষয়ে কিছুটা দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে ওদের (ফিলিপাইনের) অন্যরকম যুক্তি আছে।

‘তারা বলছে যে, ২০ মিলিয়ন ডলার তারা আরসিবিসিকে জরিমানা করেছে সেটা তাদের দেশের আইন অমান্য করার জন্য। এর সঙ্গে আমাদের হারানো টাকার সরাসরি সম্পর্ক নেই। তবে আমরা আমাদের দাবি জানিয়ে যাচ্ছি অন্তত ওই টাকাটা দেয়ার জন্য। কারণ আমাদের রিজার্ভ চুরি যাওয়ার কারণেই ওই জরিমানা করা হয়েছে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আর কিছু টাকা এখনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। আমরা ধাপে ধাপে এগুচ্ছি। ফিলিপাইন থেকে কিছু টাকা পাচার হয়ে গেছে। ওদের দেশে তদন্ত চলছে বিভিন্ন পর্যায়ে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফিলিপাইনের আরসিবিসির প্রতিনিধি আলাদা করে বৈঠক করেছেন। কিভাবে আরও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে কাজ করা যায় ব্যাপারে তারা ঐক্যমত পোষণ করেছেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করে আসা এই কূটনীতিক বলেন, ‘বৈঠকে আমরা বলেছি, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইন যদি আন্তর্জাতিক ফ্রেম ওয়ার্কের মাধ্যমে এই সমস্যার সুরাহা করতে পারে তাহলে অন্য দেশের জন্য তা উদাহরণ হয়ে থাকবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘জাতিসংঘেও এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। সাইবার ক্রাইম নিয়ে একটা কনভেনশনের কাজ হচ্ছে। সেটা না হওয়ায় এখন দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করতে হবে। আমরা যদি এটা সমাধান করতে পারি তাহলে সেটা অন্য দেশের কাছে মডেল হয়ে থাকতে পারে’।

‘তারা (ফিলিপাইন) বলেছে, এটা ভালো আইডিয়া। তারা সহযোগিতা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরাও জানালেন হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে তাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে’

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রায় চার বছর পরে এই দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন অনুষ্ঠিত হলো। বাংলাদেশ ফিলিপাইনের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪৮৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged