শর্ট সেলেও আসতে পারে বড় মুনাফা

সময়: বৃহস্পতিবার, আগস্ট ৮, ২০১৯ ৮:৪৪:৩০ পূর্বাহ্ণ


সালাহ উদ্দিন মাহমুদ : পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ‘শর্ট সেল’ সংক্রান্ত নীতিমালা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে। নেতিবাচক মার্কেটে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিতেই এই আইন করা হয়েছে। তবে শর্ট সেলিং হচ্ছে একটি অ্যাডভান্স ট্রেডিং কৌশল। যার জন্য মার্কেট সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান, অ্যানালাটিকাল স্কিলস ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। এখান থেকে যেমন আয় করা সম্ভব, তেমনি ঝুঁকির সম্ভাবনাও অনেক বেশি।
শর্ট সেল কী : মূলত নিম্নমুখী বাজারে স্পেকুলেটিভ ট্রেডিং থেকে মুনাফা করার জন্য শর্ট সেল ব্যবস্থার প্রচলন হয়। নিজের কাছে নেই এমন সিকিউরিটিজ বেচে দেয়াই হলো শর্ট সেল। দরপতনের পূর্বানুমান থেকেই এটি করা হয়। দাম কমে গেলে এক সময় সেটি বাজার থেকে কিনে আসল মালিককে ফিরিয়ে দেয়া হয়। বিক্রয়মূল্য থেকে ক্রয়মূল্য, ট্রেডিং কমিশন, মার্জিন ঋণের সুদ, লভ্যাংশ ও রাইট শেয়ার বাদ দিয়ে শর্ট সেলারের মুনাফা হিসাব করা হয়।

আরো স্পটভাবে বলতে গেলে, শর্ট সেল হলো এমন একটা ট্রেডিং পদ্ধতি, যেখানে একজন বিনিয়োগকারী তার ব্রোকার হাউজ থেকে একটি নির্ধারিত কোম্পানির শেয়ার ধার করে বিক্রয় করবেন। তিনি অনুমান করছেন বা জানতে পেরেছেন, আগামীতে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমে যাবে। পরে তিনি ওই বিক্রিত মূল্য থেকে কম দরে একই পরিমাণ শেয়ার বাজার থেকে কিনে আবার ব্রোকার হাউজকে ফেরত দেবেন। এর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্রোকার প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি বা সুদ দিতে হবে।

উদাহরণ : ধরুন, আপনি জানতে পারলেন এবিসি নামের একটি কোম্পানি আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে, মুনাফায় নেতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এতে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমে যাবে। এখন আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন এবিসি কোম্পানির শেয়ার শর্ট সেল করবেন। শর্ট সেল করার জন্য এখন আপনি আপনার ব্রোকার হাউজকে কল করলেন, এবিসি কোম্পানির ১০০০টি শেয়ার শর্ট সেল করতে হবে। এখন আপনার পক্ষ থেকে শর্ট সেল করার জন্য ব্রোকার এবিসি কোম্পানির ১০০০টি শেয়ার খুঁজবেন তার স্টক ইনভেন্টরি একাউন্টে অথবা তার অন্য কোনো গ্রাহকের পোর্টফলিওতে ধার করার জন্য। শেয়ার পাওয়ার পর ব্রোকার তা মার্কেটে সেল করে দিলেন।

বিক্রির সময় প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল ১০০ টাকা এবং ১০০০*১০০ = ১০০০০০ টাকা আপনার বিও হিসাবে জমা হয়ে গেল। ১৫ দিন পরে এবিসি কোম্পানির আর্থিক সমস্যার কারণে এর শেয়ার দর কমে ৭০ টাকা হলো। যেহেতু আপনি এই শেয়ারটিতে শর্ট সেল করেছিলেন এবং দর কমে গেছে, তাই আপনি এখন এই শেয়ার ক্রয় করে আপনার করা ধার পরিশোধ করে দিলেন। ব্রোকারেজ হাউজ আপনার বিও হিসাব থেকে টাকা নিয়ে মার্কেট থেকে ওই কোম্পানির ১০০০টি শেয়ার বাজার মূল্যে কিনে ধার পরিশোধ করে দিলেন।
এখন আপনি শর্ট করেছিলেন ১০০ টাকায় এবং ক্রয় করেছেন ৭০ টাকায়। অর্থাৎ আপনার ১০০-৭০=৩০ টাকা শেয়ার প্রতি মুনাফা হলো। এই সম্পূর্ণ কাজটির জন্য আপনাকে আপনার ব্রোকার হাউজকে কিছু ফি বা সুদ দিতে হবে।
শর্ট সেলের ভালো-মন্দ : শর্টসেলের মাধ্যমে নিম্নমুখী বাজারে বেশি মুনাফা করা যেতে পারে। আবার অল্প মূলধনেও ব্যবসা করা যায়। অন্যদিকে সীমাহীন লোকসান হবার সম্ভাবনা তো রয়েছে। শর্টসেল করতে হলে মার্জিন হিসাব খোলা বাধ্যতামূলক। আবার শর্টসেল করতে হলে ব্রোকার প্রতিষ্ঠানকে সুদ বা ফি দিতে হয়। তাই যেখানে ঝুঁকি বেশি, সেখান থেকে মুনাফা করার সুযোগও বেশি। যারা শর্ট সেলিংয়ের মতো একটি এডভান্স ট্রেডিং কৌশল দিয়ে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের অবশ্যই স্টপলস টুল ব্যবহার করা উচিত এবং অবশ্যই মার্কেট সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা থাকলেই এই কৌশল ব্যবহার করা উচিত। ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (শর্ট সেল) রুলস, ২০১৯’ শীর্ষক আইনে বলা হয়েছে, শর্ট সেল করতে হলে শেয়ারের প্রকৃত মালিক বা লেন্ডারের সঙ্গে কয়েকটি শর্ত মেনে চুক্তি করবে শেয়ার ধারকারী। এ শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে-

শর্ট সেলের ফ্রেমওয়ার্ক : শর্ট সেলের জন্য ধারকারী ও ধার প্রদানকারীর চুক্তিতে শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- শেয়ার ধারের নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা, ধারকারী ও ধার প্রদানকারীর জন্য চার্জ, ফি অথবা মুনাফা নির্ধারণ করা। ধারের বিপরীতে সমমূল্যের সিকিউরিটিজ (ক্যাশ), ডিপোজিট সার্টিফিকেট, ব্যাংক গ্যারান্টি, লিক্যুইড ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট, তালিকাভুক্ত শেয়ার ও এক্সচেঞ্জ সিসিপি অনুমোদিত ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট) রাখা। রিটার্নের জন্য সঞ্চিতি ও যে কোনো প্রকার বিতর্ক সালিশির মাধ্যমে সমাধানের সুযোগ রাখা। শর্ট সেলে লোকসান হলে এর ভার ধারকারীকে বহন করতে হবে।

শর্ট সেলের ম্যাকানিজম : চুক্তি অনুযায়ী মুনাফাসহ সিকিউরিটিজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। আর এ চুক্তির নিশ্চয়তা দেবে স্টক ব্রোকার ও ডিলার। এর জন্য তারা যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে। শর্ট সেল শুধু স্টক ব্রোকার ও ডিলাররা করতে পারবে। এর মধ্যে স্টক ডিলার নিজস্ব হিসাবে আর ব্রোকার গ্রাহকের হিসাবে শর্ট সেল করতে পারবে। এক্ষেত্রে শর্ট সেলের সব দায়িত্ব স্টক ব্রোকার ও ডিলার পালন করবে। ধারকারী দায় শোধ না করা পর্যন্ত শর্ট সেলের লেনদেন থেকে অব্যাহতি পাবে না। আর ধারকারী চুক্তি অনুযায়ী দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে এর দায়িত্ব স্টক ব্রোকারকে নিতে হবে। এর জন্য ব্রোকার বা ডিলার ধারকারীর কাছ থেকে জামানত রেখে দেবে।

একীভূত হবে এমন শেয়ার শর্ট সেল নয় : একীভূত অথবা অধিগ্রহণ হবে এমন কোম্পানি শেয়ার এবং যোগ্য সিকিউরিটিজ নয় এমন শেয়ার শর্ট সেল করা যাবে না। স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিএসইসি’র সম্মতি নিয়ে এ বিষয়ে যে কোনো শর্ত আরোপ করতে পারবে। আর স্টক ডিলার ও ব্রোকার এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ও সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টির নির্দেশ মেনে কাজ করবে।

‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারই শর্ট সেল : শুধু ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার শর্ট সেল করা যাবে। তবে কমিশনের সম্মতি নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ সরকারি শেয়ার ও অন্য কোনো ক্যাটাগরির শেয়ারও শর্ট সেলের জন্য বিবেচনা করতে পারবে। দিন শেষে নিট শর্ট সেলের এই প্রতিবেদন প্রত্যেক স্টক ব্রোকার ও ডিলার মেনটেইন করবে। তবে মার্কেট মেকারের ক্ষেত্রে এগুলো প্রযোজ্য হবে না।
শর্ট সেলের তথ্য সংরক্ষণ : শর্ট সেলের তথ্য রাখার জন্য কমিশন একটি ছক নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ তথ্য শর্ট সেল হওয়ার পর ৭ বছর সংরক্ষণ করা হবে। কমিশন বা এক্সচেঞ্জ চাওয়া মাত্র স্টক ডিলার ও ব্রোকার তথ্য দাখিল করতে বাধ্য থাকবে। তথ্যের নির্ভুলতার গ্যারান্টিও তারা দেবে। এ আইন ভঙ্গ করলে কমিশন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩২০ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged