editorial

শেয়ারবাজার উন্নয়নে গৃহীত উদ্যোগ যেনো ফলপ্রুসু হয়

সময়: মঙ্গলবার, জানুয়ারি ২৮, ২০২০ ২:৩০:৪১ পূর্বাহ্ণ


সহযোগি এক জাতীয় দৈনিকে এ মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে,বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারবাজারের উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাবনা প্রণয়ন করেছে। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে শেয়ারবাজারের অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছেন। শেয়ারবাজারের উন্নয়ন এবং স্বাভাবিক স্থিতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক কোম্পানি আইনের কিছু ধারা এবং নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে। এ ছাড়া বাজারের তারল্য সঙ্কট কাটানোর জন্য তারা একটি বিশেষ ফান্ড গঠনের বিষয়টিও বাংলাদেশ ব্যাংক সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। তবে এই ফান্ড কারা গঠন করবে অর্থাৎ সরকারের সরাসরি তত্বাবধানে নাকি বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ ফান্ডটি গঠিত হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, তারা যে ফান্ড গঠন এবং নীতি সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছেন তার লক্ষ্য হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল করা। যাতে বাজার হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক উত্থান অথবা পতনের মুখোমুখি না হয়। শেয়ারবাজারে হঠাৎ করে স্বাভাবিক উত্থান এবং ব্যাপক পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠিয়েছে। তবে এখনো প্রস্তাবের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য বা নির্দেশনা পাওয়া যায় নি। নিদের্শনা পাবার পর বাংলাদেশ ব্যাংক সেই আলোকে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবনায় বাংলাদেশ বলেছে,বাজারে ভালো মানের শেয়ারের অভাব রয়েছে। যেসব আইপিও এসেছে তার মানও খুব একটা ভালো নয়। ফলে সেগুলো বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। ফলে বাজারে তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে ব্যাংকিং সেক্টরের বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে কম। উল্লেখ্য,ব্যাংকিং সেক্টর নানা রকম সমস্যায় জর্জরিত হয়ে থাকার কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারছে না। আগামীতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ আরো কমে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। এই প্রস্তাবটি আইনে পরিণত হলে আগামীতে ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট তীব্রতর হতে পারে। কারণ এই আইন পাশ হলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজন অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে যাবে। সেই অবস্থায় ব্যাংকগুলো চাইলেও শেয়ারবাজার বিনিয়োগ করতে পারবে না। বর্তমানে দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার মতো। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে গেলে ব্যাংকগুলো ইচ্ছে করলেও তারল্য সঙ্কটের কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে না। এমন কি বর্তমানে শেয়ারবাজারে তাদের যে বিনিয়োগ আছে তাও প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের সাম্প্রতিক আলোচনাকালে শেয়ারবাজার উন্নয়নের জন্য স্বল্প মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বল্পকালীন সময়ের জন্য ৬টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আলোচনার পর শেয়ারবাজার তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা হলেও চাঙ্গা হয়ে উঠে। এই অবস্থায় এখন প্রয়োজন হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদি কার্যক্রম গ্রহণ করা যাতে বাজারের টেকসই উন্নয়ন ঘটে। এমন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে যা শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সহায়ক এবং বিনিয়োগকারী বান্ধব হয়।

জনশক্তি রপ্তানির নতুন গন্তব্য খুঁজতে হবে
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারি খাত হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি খাত। গত অর্থ বছরে জনশক্তি রপ্তানি করে মোট আয় হয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। চলতি অর্থ বছরে জনশক্তি রপ্তানি আয় আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ ইতোমধ্যেই সে ধরনের প্রবণতা দৃশ্যমান হয়েছে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি করে প্রায় ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে। আগামী মাসগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি আরো বৃদ্ধি পাবে এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যাচ্ছে। কারণ অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহা উদযাপিত হবে। দুই ঈদের আগে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বেশি পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠিয়ে থাকে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যত্র। বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি সীমিত সংখ্যক দেশের উপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি মুসলিম দেশ থেকে আসে বাংলাদেশের আহরিত রেমিটেন্সের বেশির ভাগ। কিন্তু মধ্যপ্রচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে ইদানিংকালে নানা ধরনের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। কাজেই আগামীতে এসব দেশ থেকে জনশক্তি খাতের আয় কমে যেতে পারে। বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় একক বাজার হচ্ছে সৌদি আরব। কিন্তু সে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। কাজেই তারা বাইরের শ্রমিকদের এখন আর সেভাবে নিয়োগ দিচ্ছে না। এমনকি আগে যারা সৌদি আরব গেছেন তাদেরও অনেকেই দেশে ফেরৎ আসছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চলতি অর্থবছর থেকে প্রবাসী আয়ের উপর ২শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এই প্রণোদনার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটিন্সে প্রেরণে উৎসাহিত হচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি করে এমন কোনো কোনো দেশে বিদেশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক। বিশেষ করে দেশগুলো বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে জনশক্তি আমদানি কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর পর বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম গন্তব্য হচ্ছে সিঙ্গাপুর। কিনতু সেই সিঙ্গাপুরে এখন বিদেশি শ্রমিকের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য হচ্ছে বিদেশি জনশক্তির কারণে তাদের জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। শুধু সিঙ্গাপুরই নয় অন্যান্য কিছু দেশও জনশক্তি আমদানি কমিয়ে দেবার চিন্তা-ভাবনা করছে। এই অবস্থার অনিবার্য প্রভাব থেকে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি খাতকে বাঁচাতে হলে এখনই জরুরি ভিত্তিতে সম্ভাবনাময় নতুন নতুন জনশক্তি রপ্তানি গন্তব্য খুঁজে বের করতে হবে। এ ছাড়া প্রশিক্ষিত শ্রম শক্তি এবং পেশাজীবীদের বেশি বেশি করে বিদেশে প্রেরণ করতে হবে। জনশক্তি এমনই এক অর্থনৈতিক খাত যার জন্য কোনো কাঁচামাল এবং ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি করতে হয় না। ফলে এই খাতে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় তার প্রায় পুরোটাই জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করে। তৈরি পোশাক শিল্প থেকে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় তার প্রায় ৪০ হতে ৪৫ শতাংশ কাঁচামাল এবং ক্যাপিটাল মেশিনারী আমদানিতে চলে যায়। জনশক্তি রপ্তানি খাত শুধু যে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করছে তাই নয় এই খাতটি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কাজেই জনশক্তি খাতকে কোনোভাবেই অবজ্ঞা করা যাবে না।

উদ্যোক্তা উন্নয়ন ব্যতীত টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারনা ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে। এক সময় মনে করা হতো কৃষির উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপের মাধ্যমেই একটি দেশ কাঙ্খিত মাত্রায় উন্নয়ন অর্জন করতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য শস্য উৎপাদন না করতে পারলে একটি দেশ কখনোই অর্থনৈতিক উন্নতি অর্জন করতে পারে না। কিন্তু কালের বিবর্তনে এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে, কৃষি নয় একমাত্র শিল্পের উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপের মাধ্যমেই একটি দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করতে পারে। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দিতে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব সাধিত হবার পর এই ধারনা রাতারাতি প্রতিষ্ঠিত হয় যে,কৃষি নয় একমাত্র শিল্পের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপের মাধ্যমে একটি দেশ তার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য এবং অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে পারে। আর একটি দেশ যদি শিল্পে উন্নতি অর্জন করতে পারে তাহলে তার পক্ষে খাদ্য এবং জীবন ধারনের মতো অন্যান্য উপকরণ আমদানির মাধ্যমেও পূরণ করা সম্ভব। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে, শিল্প উৎপাদনও জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। কিšুÍ খাদ্য উৎপাদন বাড়ে গাণিতিক হারে। কাজেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে হলে খাদ্য নয় শিল্প উৎপাদনের উপরই বেশি জোর দিতে হবে। শিল্প উৎপাদন বাড়াতে হলে শুধু দক্ষ শ্রমিক গড়ে তুললেই হবে না। দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা সৃষ্টি করাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত ২৪ জানুযারি রাজধানীর ধানমন্ডির একটি কনভেনশন সেন্টারে চায়না-বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ফিউচার এন্ট্রারপ্রেনিউর সামিট-২০২০ এ বলা হয়, আজকের উদ্যোক্তারাই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। তাই তাদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। একজন উদ্যোক্তা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিষয় উল্লেখ করে বলেন, উদ্যোক্তা হতে হলে নিজের ইচ্ছাশক্তি,সততা আর পরিশ্রম দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখলে ভয় পেলে চলবে না। পোশাক মিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক বলেন,উদ্যোক্তা হতে গেলে পিছিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জীবনে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। উদ্যোক্তা হতে গেলে ব্যাংক ঋণ দেবে না,কারো কাছ থেকে সুযোগটা পাচ্ছেন না,সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়- এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। তাই বলে পিছিয়ে গেলে চলবে না। আমাদের দ্রুত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। দেশে বর্তমানে বেকার সমস্যা প্রকট। কিন্তু সাধারণভাবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রদানের মাধ্যমে বেকারত্ব নিরসন করা সম্ভব নয়। এ জন্য আমাদের এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে যেখানে যুুবকরা চাকরির পেছনে না ঘুরে অন্যদের চাকরি দেবার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকবে। অর্থাৎ চাকরির মাধ্যমে বেকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। বরং তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। একমাত্র উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে পারলেই যুব সমাজের বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছেন যুবকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু আমাদের মধ্যে এখনো চাকরি করার মানষিকতা দূর হয় নি। আমাদের চাকরি প্রত্যাশী যুব সমাজ নয় উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী যুব সমাজ তৈরি করতে হবে, যারা শিক্ষা জীবন শেষে চাকরির জন্য না ঘুরে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবে। এ জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

ব্যাংকগুলোতে ইন-সাইড লেন্ডিং কাম্য নয়
বিষয়টি অনেক দিন ধরেই নানাভাবে আলোচিত হচ্ছিল। কিন্তু কেউই সঠিকভাবে পরিসংখ্যান উল্লেখ করতে পারছিলেন না। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরকালে ইন-সাইড লিন্ডিং এর ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন। সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম (টিটু)’র এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, দেশের ব্যাংক পরিচালকদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৩০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকের পরিচালকগণ নিজেদের ব্যাংক এবং অন্য ব্যাংক থেকে এই পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে পরিচালকগণ নিজেদের ব্যাংক থেকে যে ঋণ গ্রহণ করেছেন তার পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৬১৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর অন্য ব্যাংক থেকে তারা যে ঋণ গ্রহণ করেছেন তার পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬১৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। নিজ ব্যাংক এবং অন্য ব্যাংক থেকে পরিচালকগণ যে ঋণ গ্রহণ করেছেন তার পরিমাণ হচ্ছে ব্যাংকিং সেক্টরের মোট ঋণের ১১ দশমিক ২১ শতহাংশ। আর নিজ ব্যাংক থেকে তাদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ছাড়কৃত মোট ঋণের শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ। নিজ ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ গ্রহণ করেছেন এবি ব্যাংকের পরিচালকদের। এর পরিমাণ হচ্ছে ৯০৭ কোটি ৪৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা। অনেক দিন ধরেই অভিযোগ শোন যাচ্ছিল যে,এক শ্রেণির ব্যাংক পরিচালক নানাভাবে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ গ্রহণ করছেন। এমন কি তারা পরস্পর যোগসাজসের মাধ্যমে অন্য ব্যাংক থেকেও ঋণ গ্রহণ করছেন। গৃহীত ঋণের বেশির ভাগই পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ে আদায় করা সম্ভব হয় না। এতে ব্যাংকের ঋণদান কার্যক্রম মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পতিত হয়। সংশ্লিষ্ট সবাই জানতেন ব্যাংকের পরিচালকগণ নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকেন। এছাড়া পরস্পর যোগসাজসের মাধ্যমে অন্য ব্যাংক থেকেও ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের গৃহীত ঋণের অংক যে একটা বিশাল তা অনেকেরই জানা ছিল না। অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ না করলে বিষয়টি সবার আড়ালেই থেকে যেতো।
ব্যাংক পরিচাকগণ যদি নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেন বা অন্য ব্যাংক থেকে তার প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নিয়ে নেন তাহলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। প্রথমত,তারা ইচ্ছে করলেই নিজেদের প্রভাব বিস্তাব করে আইনকে তোয়াক্কা করে নিজ নামে অর্থবা আত্মীয়-স্বজনের নামে ঋণ বরাদ্দ করিয়ে নিতে পারেন। এতে ব্যাংকের স্বাভাবিক নিয়ম-নীতি উপেক্ষিত হয়। এটা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে বিরাট প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ। পরিচালকগণ অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রেও তাদের প্রভাব খাটিয়ে থাকেন। অথবা পরস্পর যোগসাজসের মাধ্যমে এই ঋণ গ্রহণ করে থাকেন। পরিচালকগণ নিজ ব্যাংক অথবা অন্য ব্যাংক থেকে এভাবে ঋণ গ্রহণ করলে ভালো এবং উপযুক্ত ঋণ আবেদনকারীরা ঋণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। এতে ঋণের অতিমাত্রায় কেন্দ্রীভুতকরণ হয়। ব্যাংকের ঋণদান সক্ষমতা হ্রাস পায়। যেহেতু পরিচালকগণ অত্যন্ত প্রভাবশালী তাই তারা যদি নিজ ইচ্ছেয় ঋণের কিস্তি ফেরৎ না দেন তাহলে তাদের নিকট থেকে কোনোভাবেই বকেয়া ঋণ আদায় করা সম্ভব হয় না। এটা খেলাপি ঋণ কালচারকে আরো প্রলম্বিত করে। প্রয়োজনে নতুন আইনে করে হলেও ব্যাংক পরিচালকদের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে নিজ ব্যাংক অথবা অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের মাত্রা সীমিতকরণ করা যেতে পারে। একজন পরিচালক যদি তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাংক ঋণ নিতে চান তাহলে তিনি পরিচালকের দায়িত্ব ত্যাগ করে তা নিতে পারেন।

Share
নিউজটি ৫১৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged