সরকারি সিকিউরিটিজের চেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ আর কিছু হয় না

সময়: মঙ্গলবার, জানুয়ারি ১০, ২০২৩ ১১:১৫:০০ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারি সিকিউরিটিজের চেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ আর কিছু হয় না। এমনকি বিশ্বেও সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগে জনপ্রিয়তা রয়েছে। এই সরকারি সিকিউরিটিজে যারা বিনিয়োগ করবে তারা যেন দ্রুত লিকুইডিটি পায় সেই বিষয়ে বিএসইসি কাজ করছে।

সরকারি সিকিউরিটিজ সমূহের লেনদেনকে গতিশীল করার লক্ষে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রোডাক্ট এন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট-এর প্রধান সাইদ মাহমুদ জুবায়ের-এর সঞ্চালনায় ১০ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে নিকুজ্ঞে ডিএসই টাওয়ারের মাল্টিপারপাস হলে ট্রেকহোল্ডার ও প্রধান নির্বাহীদের অংশগ্রহণে “স্টক এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মে সরকারী সিকিউরিটিজের লেনদেন” সম্পর্কিত অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।

কর্মশালায় ডিএসই’র চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি’র কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. সাইফুর রহমান মজুমদার এবং সিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম ফারুক।

ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের সবাইকে চেষ্টা করতে হবে, যে উদ্দেশ্যে বন্ড মার্কেট চালু করা হয়েছে তা যাতে বাস্তবায়ন করা যায়। সরকারের সকল পক্ষের আন্তরিক চাওয়া থেকে পুঁজিবাজারের সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন শুরু হয়েছে। শুধু সরকারি সিকিউরিটিজ যোগানের কথা চিন্তা করলে হবে না, একই সাথে চাহিদার কথা মাথায় রাখতে হবে। যদি চাহিদা বৃদ্ধি পায় তবে সরকারি সিকিউরিটিজের একটি ভাল প্রাইস হবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বন্ডের ক্ষেত্রে কোন ফি নেই। এটি কি আরও বাড়ানো যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনার করা হচ্ছে। আমি প্রথম থেকে চেষ্টা করেছি বন্ডের উপর প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা। ইতিমধ্যে চারটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। এছাড়াও বন্ডকে জনপ্রিয় করার জন্য ক্যাম্পেইন করতে হবে। গভর্মেন্ট বন্ডের নিলামের সময়কে সবার কাছে তুলে ধরার জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আমি আশা করি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি কার্যকর বন্ড মার্কেট গড়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিএসইর চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান বলেন, এখানে ব্যাংকের যে প্রতিনিধিবৃন্দ রয়েছে তাদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা বর্তমান পদ্ধতির মধ্যে দুই একটা ট্রেডিং করান। তাহলে আমরা আজকের আলোচনার কার্যকারিতা দেখতে পাবো। এছাড়াও এক্সচেঞ্জের প্লাটফর্মে বন্ডের অকশনের বিষয়ে ডিএসই ও সিএসই যদি একটি প্রস্তাবনা বিএসইসিতে পাঠায়, বিএসইসি পরবর্তীতে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানাবে। পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় এর উপর কাজ করবে আর আমরা দ্রুত একটি ফলাফল পাব।

তিনি আরও বলেন এখানে যারা উপস্থিত আছেন সকলের আর্থিক খাতের লোক। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছরে আমরা অনেক উন্নতি করেছি। আর এ সময়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে আর্থিক খাত সম্পর্কে। আমাদের এগুলোকে কাটিয়ে উঠতে হবে। আমাদের পুঁজিবাজার ও বীমা খাত তুলনামূলকভাবে দূর্বল। আমাদের ব্যাংকিং খাত দূর্বল নয়। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন সমালোচনার মধ্যে পড়ে গেছে। এগুলো থেকে উত্তোলনের জন্য অনেক কাজ করতে হবে। আমাদের পুঁজিবাজারের মূল উন্নয়ন ১৯৯০ সালের পর থেকে শুরু হয়েছে। এ সময়ে আমরা প্রচুর আইন-কানুন করেছি। সে জায়গায় কোন ঘাটতি নেই। বর্তমান কমিশন প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, গুড গর্ভনেন্স এবং ব্রান্ডিং এর বিষয়ে কাজ করছে। আমরা আশাবাদি এই কমিশনের নেতৃত্বে পুঁজিবাজার সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

তার আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে ইক্যুইটি প্রোডাক্ট লেনদেন হয়ে আসছে। এসএমই, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড যা চালু করা হয়েছে সবই ইক্যুইটি নির্ভর। যদিও এ বোর্ডগুলোতে কিছু কিছু ডেট সিকিউরিটিজ আছে। আমরা পুঁজিবাজারে যতক্ষণ পর্যন্ত না ইক্যুইটি প্রোডাক্টের পাশাপাশি কার্যকর ডেট প্রোডাক্ট বা সিকিউরিটিজ দিতে না পারব ততক্ষণ পর্যন্ত পুঁজিবাজারের ভারসাম্যের জায়গায় ঘাটতি রয়ে যাবে। আমাদের দেশে ডেট প্রোডাক্ট বলতে করপোরেট ডেট বা বন্ড যেগুলো আছে, সে সংখ্যা খুবই কম। ডেট সিকিউরিটিজ বলতে প্রাণবন্ত ডেট মার্কেট যেটা আছে, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট মার্কেট, সরকারি সিকিউরিটিজ বা জি-সেক সেটাই হচ্ছে একটা পূর্ণাঙ্গ ডেট মার্কেট বা স্টান্ডারডাইজড ডেট মার্কেট। ডেট ও ইক্যুইটি সিকিউরিটিজের মধ্যে যে পার্থক্য সেটা সঠিকভাবে বিনিয়োগকারীদের বুঝাতে হবে। তা না হলে ডেট মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজগুলো যদি এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মে কার্যকরভাবে লেনদেন করা যায় তখনই আমাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ডেট মার্কেট তৈরী হবে। তার হাত ধরেই আমরা কর্পোরেট ডেট মার্কেট প্রতিষ্ঠা করতে পারব। গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজ লেনদেন (ট্রেডেবল) করা হয়েছে, কিন্তু এখনও কার্যকর বা উল্লেখযোগ্য ট্রেড ভলিউম দেখা যাচ্ছে না, এক্ষেত্রে আমাদের কিছু নীতি পুণর্বিন্যাস বা অপারেশনাল ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন প্রয়োজন আছে কিনা সেগুলোও বিবেচনায় আনতে হবে।

পরে সরকারি সিকিউরিটিজের ট্রেডিং প্রসেসের উপর বিভিন্ন বিষয়ে প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন-মার্কেট ডেভেলপমেন্টের বিভাগের প্রধান সাইদ মাহমুদ জোবায়ের, ডিএসই’র হেড অব সিস্টেম অ্যান্ড মার্কেট এডমিন এ. এন. এম হাসানুল করিম এবং সিএসই ডিজিএম অ্যান্ড হেড অব আইটি সার্ভিস হাসনাইন বারী। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পরিচালক মোঃ আবুল কালামের সঞ্চালনায় সরকারি সিকিউরিটিজের ট্রেডিং প্রসেসের ওপর প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের উপ সচিব রুহুল আমিন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অতিরিক্ত পরিচালক শেখ মোঃ লুৎফুল কবির, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিঃ এর উপ মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আল আমিন রহমান, চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ লিঃ এর হেড অব আইটি মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন, সিডিবিএল মহাব্যবস্থাপক মোঃ মনিরুল হক, সিসিবিএল মহাব্যবস্থাপক এন্ড সিটিও এম ইমাম হোসেইন।

উল্লেখ্য, যে স্টক এক্সচেঞ্জ সামগ্রিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে গত ১০ অক্টোবর ২০২২ তারিখে ৩,১৬৮,০৮০ মিলিয়ন টাকা বাজার মূলধন নিয়ে ডিএসই’র ট্রেডিং প্লাটফর্মে ২ থেকে ২০ বছর মেয়াদী ২৫০টি সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেনের শুরু হয়। যা পুঁজিবাজারের এক নতুন অধ্যায়।

 

Share
নিউজটি ১৪৫ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged