সর্বনিম্ন সুদহারের নির্দেশনা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

সময়: বুধবার, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩ ১:২৭:০৭ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সুদহারের নির্দেশনা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে এবং সে অনুযায়ী আমানত জমা নিতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) এক সার্কুলারের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ওই সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, ২০২১ সালের ৮ আগস্ট জারি করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহে সুদহারের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশনা অনুসারে মেয়াদি আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির নিচে না রাখতে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের প্রতি নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন ঋণ বিতরণের সর্বোচ্চ সুদের হার ছিল ৯ শতাংশ।

তবে গত জুলাই থেকে ঋণের বাজার ভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা চালু হওয়ার কারণে ওই সার্কুলারে নির্দেশিত আমানতের সুদহারের নিম্নসীমার আবশ্যকতা নেই। ৮ আগস্ট ২০২১ এর নির্দেশনা রহিত করা হলো।

সম্প্রতি দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি টানা বাড়ছিল। এখনো মূল্যস্ফীতি তুলনামূলক বেশি আছে। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত ৫ থেকে ৬ মাসে ১২ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। গত নভেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৪৯ শতাংশ।

গত আগস্ট মাসের পর থেকে টানা চার মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এই সংকট সামল দিতে ব্যাংকঋণের সুদহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত জুলাই থেকে তা বাস্তবয়নও হয়েছে। তবে এখনও তার কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হয়, তা হলো ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ তথা– সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে পরিচিত। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিয়ম অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে পরবর্তী মাসের ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হতো। এরপর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই রেট ০.৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। গত ২৭ নভেম্বর থেকে তা ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে অর্থাৎ ৩.৭৫ শতাংশ যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

চলতি বছরের অক্টোবরে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭.৪৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩.৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে নভেম্বর মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক।

সেই হিসাবে ঋণের সুদহার হবে ১১.১৮ শতাংশ। চলতি নভেম্বর মাসে ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণে সর্বোচ্চ ১১.১৮ শতাংশ সুদ নিতে পারবে। তবে নভেম্বরে ঠিক করা ঋণের এই সুদহার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ গত নভেম্বরে সাংবাদিকদের জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোর এখন কোন বিকল্প দেখছিনা। ব্যাংক ঋণের সুদ হার বাড়লে আগের চেয়ে কম ঋণ গ্রহণ করবে মানুষ।

পক্ষান্তরে যাদের কাছে টাকা রয়েছে বেশি মুনাফা পাওয়ার আশায় তারা ব্যাংকে টাকা রাখবে। এতে ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

আগামী ডিসেম্বর নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশ এবং জুন এর মধ্যে ৬ শতাংশে নামাতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনে আবারো সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

 

Share
নিউজটি ১১১ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged