আইপিও অনুমোদনে ভাটা

সূচক ও লেনদেনে নেতিবাচক প্রবণতা

সময়: মঙ্গলবার, মার্চ ৩, ২০২০ ১২:৩৪:৪০ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১০ সালের শেয়ারবাজারে মহাধ্বসের পর থেকেই চলছে ক্রান্তিকাল। শেয়ারবাজার উন্নয়নে সরকার ও সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। কোন পদক্ষেপেই শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা আসেনি। বরং দিন যতই গেছে সূচক ও লেনদেন ততই তলানীতে চলে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়। যার ফলে অনেক বিনিয়োগকারী হতাশ হয়ে শেয়ারবাজার থেকে চলে গেছে। আর যারাও বাজারে আছে তাদের অবস্থাও শোচনীয়। সূচক ও লেনদেনে ইতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি বাজারে গতি ফেরাতে ২০১৯ সালে আইপিও অনুমোদন কমানো হয়। ওই অনেকই বলেছিল আইপিও অনুমোদন কমানো হলে সূচক ও লেনদেনে ইতিবাচক প্রভাব পরতে পারে। কিন্তু তাদের সে ধারণা ভুল বলে প্রমানিত হলো বছর শেষে হিসাব করে।
২০১৯ সালে শেয়ারবাজারে মোট ২৩৮ কার্যদিবস লেনদেন হয়। এসময়ে শেয়ারবাজারে ৩ হাজার ২৭৫ কোটি ৮৫ লাখ ৬৭ হাজার ৩৪৯টি শেয়ার ২ কোটি ৯৯ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭২বার হাতবদল হয়, যার মোট ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৮৪০ কোটি ২৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এ সময়ে বাজার মূলধন ছিল ৯ কোটি ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এর আগের বছর অর্থৎ ২০১৮ সালে ২৪৩ কার্যদিবস লেনদেন হয়। এ সময়ে দেশের প্রধন শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৩ হাজার ৩৫৬ কোটি ৩২ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৮টি শেয়ার ২ কোটি ৯৮ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৯বার হাতবদল হয়, যার মোট মূল্য ছিল এক লাখ ৩৩ হাজার ৩৬৩ কোটি ৮১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। আলোচ্য সময়ে বাজার মূলধন ছিল ৯ কোটি ৫৪ লাখ ৮ হাজার ২৬০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ১৯ হাজার ৫২৩ কোটি ৫৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এ সময়ে বাজার মূলধন কমেছে ৩৯ লাখ ৫৮ হাজার ৩৮১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
২০১৮ সালে ৩ জানুয়ারি সূচক ছিল সর্বোচ্চ ৬৩১৮.২৭১৩৯ পযেন্টে। ওই বছরে সূচক সর্বনিম্ন ছিল ২৮ অক্টোবরে ৫২১২.২৩৩১২ পয়েন্টে।
২০১৯ সালে ২৪ জানুয়ারি প্রধান সূচকের অবস্থান ছিল ৫৯৫০.০১১১৫ পয়েন্টে। ওই বছরে সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান ছিল ২৪ ডিসেম্বরে ৪৩৯০.৬৭৩৬১ পয়েন্টে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেউ কেউ বলছিল বাজারে আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ারের যোগান বাড়ছে, যার ফলে দর কমছে। আর এ কারণে অনেকে বলেছে আইপিও বন্ধ রাখতে। আসলে বিষয়টি আইপিও বন্ধ রেখে দরপতন রোধ করা যায়নি। তবে ভালো মানের আইপিও’র দাবীও ছিল সে সময়। কারণ, বাজারে যেসব আইপিও গত কয়েকবছরে এসেছে সেগুলোর অধিকাংশই দুর্বল মৌলভিত্তির। তাই আইপিও বন্ধ নয় ভালো মৌলভিত্তির আইপিও’ই পারে বাজারকে ইতিবাচক ধারায় ফেরাতে।

এ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে শেয়ারের যোগান বেশি ছিল বলে কেউ কেউ দাবী করেছে আইপিও বন্ধ রাখতে। আইপিও বেশ কিছু দিন বন্ধ রেখেও কোনো লাভ হয়নি। প্রকৃত পক্ষে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন আইপিও আসলে বাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরার সম্ভাবনা আছে।

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, আইপিও বন্ধ রাখা কোনো সমাধান নয়। বাজার গতিশীল করতে আইপিও চালু রাখতে হবে। আইপিও না আসলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারানোর আশঙ্কা আছে।

২০১৯ সালে বাজার থেকে যেসব কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছে সেগুলো হচ্ছে-
রিং সাইন টেক্সটাইল ১৫০ কোটি টাকা, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ২০ কোটি টাকা, সী পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড ১৫ কোটি টাকা, সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ৩০ কোটি টাকা, নিউ লাইন ক্লোথিং লিমিটেড ৩০ কোটি টাকা, জেনেক্স ইনফোসিস ২০ কোটি টাকা, এসএস স্টীল লিমিটেড ২৫ কোটি টাকা। আলোচ্য ৭ কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যমে ২৯০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।
এছাড়া রানার অটোমোবাইলস এবং এস্কয়ার নিট কম্পোজিট বাজার থেকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে অর্থ সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে রানার অটোমোবাইল ১০০ কোটি টাকা এবং এস্কয়ার নিট কম্পোজিট বাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালে ৯ কোম্পানি বাজার থেকে ৫৪০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।
অর্থাৎ আলোচিত বছরে ১৬ কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যেমে বাজার থেকে ৮৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে।
২০১৮ সালে যেসব আইপিও’র মাধ্যমে বাজারে এসেছে সেগুলো হচ্ছে-
কাট্টলী টেক্সটাইল ৩৪ কোটি টাকা, ইন্দোবাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ২০ কোটি টাকা, সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ৩০ কোটি টাকা, এমএল ডাইং লিমিটেড ২০ কোটি টাকা, ভিএফএস থ্রেড ডাইং লিমিটেড ২২ কোটি টাকা, এসকে ট্রিম অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ৩০ কোটি টাকা, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেড ৩০ কোটি টাকা , এডভেন্ট ফার্মা লিমিটেড ২০ কোটি টাকা, কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ১৫ কোটি টাকা আইপিও’র মাধ্যমে উত্তোলন করেছে।
এছাড়া বুক বিল্ডিং পদ্ধতি অবলম্বন করে আইপিও’র মাধ্যমে বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে আমান কটন ফেব্রিক্স লিমিটেড। কোম্পানিটি বাজার থেকে ৮০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটিড। কোম্পানিটি বাজার থেকে ২০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। সব মিলিয়ে ২০১৮ সালে ১১ টি কোম্পানি বাজার থেকে ৫০১ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।
আলোচ্য বছরে ৯ কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে মোট ৭২২ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে।
অর্থাৎ ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে আইপিও কোম্পানির সংখ্যা কমলেও টাকা উত্তোলনের পরিমাণ বেড়েছে। অথচ সূচক ও লেনদেনে ভাটা পরেছে শেয়ারবাজারে।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৮৮ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged