নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে তুলেছে এক্সিম ব্যাংক, খেলাপি হওয়া ৪০৯ কোটি টাকার ঋণ আদায়ের অংশ হিসেবে।
বিষয়টি প্রকাশ পায় গত ৬ নভেম্বর দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে, যা দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে থাকা বেক্সিমকোর জন্য এক নতুন সংকট অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্যাংকটি গাজীপুরে অবস্থিত মোট ৫১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে, এবং আগ্রহী দরদাতাদের আগামী ২৬ নভেম্বরের মধ্যে প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে।
এক্সিম ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বেক্সিমকো এলপিজি ইউনিট-১-এর ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্পোরেট শাখা থেকে নেওয়া হয়েছিল। নিলাম প্রক্রিয়াটি মানি লোন কোর্ট অ্যাক্ট ২০০৩-এর আওতায় পরিচালিত হচ্ছে—যা ব্যাংকগুলোকে আদালতে মামলা দায়েরের আগেই বন্ধকী সম্পদ বিক্রির সুযোগ দেয়।
এটি গত ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর প্রথমবারের মতো এক্সিম ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে নেওয়া আইনি উদ্যোগ।
ঋণটির জামিনদার ও বন্ধকদাতা হিসেবে রয়েছে বেক্সিমকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো—এসএস কোম্পানি লিমিটেড, ওকে কোম্পানি লিমিটেড, অ্যাস্ট্রা কোম্পানি লিমিটেড এবং তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো লিমিটেড)। এসব প্রতিষ্ঠান গ্রুপটির জ্বালানি, টেক্সটাইল, ওষুধ ও নির্মাণ সামগ্রী খাতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এক্সিম ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “এই নিলাম সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ার অংশ এবং আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে এক্সিম ব্যাংককে অন্য চারটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার প্রক্রিয়া চললেও, এই নিলাম কার্যক্রম সেই সিদ্ধান্তের পরিপন্থী নয়।
এদিকে, বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বর্তমানে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। একসময় দেশের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারক হিসেবে পরিচিত এই উদ্যোক্তা বর্তমানে নানা আর্থিক ও আইনি চাপে রয়েছেন।
এর আগে গত আগস্টে মানি লোন আদালত বেক্সিমকো লিমিটেডের ছয় পরিচালককে ৬০ দিনের মধ্যে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)-কে ৩৬০ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জনতা ব্যাংকের কাছেই বেক্সিমকো গ্রুপের বকেয়া ২৩ হাজার কোটি টাকা, আর দেশের পুরো ব্যাংক খাতে গ্রুপটির মোট দেনা প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা বলে ধারণা করা হয়।
আর্থিক সংকট তীব্র হলে, সাবেক সরকার কর্মীদের বকেয়া বেতন পরিশোধে বেক্সিমকোকে সুদবিহীন ৫৮৫ কোটি টাকার বিশেষ ঋণ প্রদান করে।
এছাড়া গত মে মাসে দুদক আদালতের নির্দেশে সালমান এফ রহমান ও তার সহযোগীদের মালিকানাধীন ৯৪টি বেক্সিমকো কোম্পানির শেয়ার ফ্রিজ করে দেয়।


