সূচক কমলেও বেড়েছে লেনদেন

মার্জিন ঋণ নীতিতে বড় পরিবর্তনের খবরে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক

সময়: সোমবার, অক্টোবর ২৭, ২০২৫ ৪:২৪:০৫ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজার আবারও অস্থিরতায় কাঁপছে। মার্জিন ঋণ নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তনের খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাজারকে ‘নেগেটিভ ইকুইটি’র জাল থেকে মুক্ত করতে নতুন নীতি আনতে চাইলেও, তার প্রভাব হয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো—বাজারে দেখা দিয়েছে ব্যাপক বিক্রির চাপ ও সূচকের টানা পতন।

বিএসইসি জানিয়েছে, সংশোধিত মার্জিন ঋণ বিধিমালা খুব শিগগিরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। কমিশনের দাবি, এতে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী—দু’পক্ষেরই স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে। তবে বাস্তবে বাজারের প্রতিক্রিয়া একেবারেই নেতিবাচক।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে। অথচ এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে সূচক নেমে এসেছে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে। এ সময়ে সূচক কমেছে প্রায় ৩৬১ পয়েন্ট, আর বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্লেষকদের মতে, মার্জিন ঋণ নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধাক্কা দিয়েছে।

🧾 বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ: “সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা নেই”
বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো অভিযোগ তুলেছে, যাদের ওপর নতুন নিয়মের সরাসরি প্রভাব পড়বে—তাদের কাউকেই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

একাধিক ব্রোকার জানান, বিএসইসি বাজারের স্থিতিশীলতার কথা বললেও হঠাৎ করা এই পরিবর্তন বিনিয়োগকারীদের আস্থা ভেঙে দিচ্ছে। একজন সিনিয়র বিনিয়োগকারী বলেন,

“বিএসইসি বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা বলছে, কিন্তু বাস্তবে তাদের সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের আরও দুর্বল করে ফেলছে।”

⚖️ বিএসইসির অবস্থান: “দীর্ঘমেয়াদে সুফল মিলবে”
অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন বিধিমালা স্বল্পমেয়াদে বাজারে চাপ আনলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে বাজারকে ‘ঝুঁকিমুক্ত ও টেকসই’ করে তুলবে।

তাদের দাবি, নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে ব্রোকারদের অতিরিক্ত ঋণনির্ভর ট্রেডিং বন্ধ হবে এবং বিনিয়োগকারীরা বাস্তব আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে বিনিয়োগে ফিরবেন। ফলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।

তবে বাজার অংশীদারদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন—এই সংস্কারের সুফল আসার আগেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে।

📊 সোমবারের বাজার পর্যালোচনা
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক টানা পতনে ছিল।
দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচক ৪০.১২ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৫,০৮৬.৮৫ পয়েন্টে।
অন্যদিকে ডিএসইএস (শরিয়াহ সূচক) ১১.০৬ পয়েন্ট কমে ১,০৭২.৬৯ পয়েন্টে,
এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৭.৪৯ পয়েন্ট হারিয়ে নেমে আসে ১,৯৬৯.১৯ পয়েন্টে।

দিনে মোট ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়—
এর মধ্যে ৮১টির দাম বেড়েছে, ২৬০টির কমেছে এবং ৫৫টির দর অপরিবর্তিত ছিল।

সারা দিনে ৩৯৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়,
যা আগের কার্যদিবসের ৪৬১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার তুলনায় প্রায় ৬৭ কোটি টাকার কম।
অর্থাৎ একদিনে লেনদেন প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে।

🏦 চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)
অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।
সেখানে মোট ১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়,
যা আগের দিনের ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার তুলনায় বেশি।

সিএসইতে ১৮৯টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নেয়—
এর মধ্যে ৫৭টির দাম বেড়েছে, ১০৬টির কমেছে, এবং ২৬টির দর অপরিবর্তিত ছিল।

দিন শেষে সিএএসপিআই সূচক ৬৮.২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ১৪,৩৭০.৯৯ পয়েন্টে।
এর আগের কার্যদিবসে এই সূচক কমেছিল ১৭.৩৫ পয়েন্ট।

📌 বিশ্লেষণ:
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্জিন ঋণ নীতিমালায় হঠাৎ পরিবর্তন বাজারে বড় ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করেছে।
তাদের পরামর্শ—নীতিগত পরিবর্তন বাস্তবায়নের আগে বাজারের অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা ও ধীরে ধীরে বাস্তবায়নই হতে পারে স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি।

 

Share
নিউজটি ১৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged