বঙ্গবন্ধু শিক্ষাবীমার আওতায় আসছে তিন কোটি শিক্ষার্থী

সময়: মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৯, ২০১৯ ৯:৩২:৩৫ পূর্বাহ্ণ


অনুপ সর্বজ্ঞ : উপার্জনকারী ব্যক্তি হিসেবে অভিভাবকের মৃত্যু বা অক্ষমতা অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয় সন্তানের শিক্ষা গ্রহণ। এ অবস্থায় সন্তানের শিক্ষাজীবন যেন অব্যাহত রাখতে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষাবীমা’ বাধ্যতামূলকভাবে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রথম পর্যায়ের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের তিন কোটি শিক্ষার্থী এ পরিকল্পের আওতায় আসবে বলে নিশ্চিত করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা করপোরেশনের মাধ্যমে পরিকল্পটি পরিচালিত হলেও বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো চাইলে এ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। এজন্য শিগগিরই খাতটির স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।

এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ’র নির্বাহী পরিচালক খলিল আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রিমিয়ামের পরিমাণ ও বীমা দাবি কত হবে এবং তা কীভাবে পরিশোধ করা হবে Ñতা নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে। কাজ দ্রুতগতিতে এগুচ্ছে। আমরা চাই আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিবসেই পরিকল্পটি চালু করতে।’
জানা যায়, বীমাটি করা হবে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের নামে। যার নমিনি হবে শিক্ষার্থী। প্রিমিয়ামের একটি অংশ বহন করবে সরকার এবং অবশিষ্ট অংশ বহন করবে অভিভাবক নিজে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীই এ পরিকল্পের আওতায় থাকবে।

আইডিআরএ সূত্র জানায়, এ বছরের শুরু থেকেই পরিকল্পটি চালুর জন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। বর্তমানে যা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে খসড়ায় কিছু সংশোধন বা সংযোজন হতে পারে।

খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, নতুন এ পলিসির ধরন হবে নবায়নযোগ্য মেয়াদি গ্রুপ জীবন বীমা। ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির দ্বি-পক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে এটি কার্যকর হবে। এ পলিসির বীমা অংক হবে ১ লাখ টাকা। এছাড়া অভিভাবকের মৃত্যু ঘটলে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে প্রদান করবে বীমা কোম্পানি। প্রিমিয়ামের হার হবে মাসে ২৫ টাকা করে বছরে ৩০০ টাকা।
প্রস্তাবিত নীতিমালায় শিক্ষার্থীদের সর্বনিম্ন বয়স ধরা হয়েছে পাঁচ বছর ও সর্বোচ্চ ১৭ বছর। পাশাপাশি অভিভাবকদের বয়স হবে ২৫ থেকে ৬৫ বছর। এছাড়া পলিসির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন এক বছর ও সর্বোচ্চ ১২ বছর। শিক্ষাবীমা সুবিধা গ্রহণের পরবর্তী মাসের ১ তারিখ থেকে তা কার্যকর হবে। শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ ও অভিভাবকের বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হলেই বীমা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে বিবেচিত হবে।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, এই বীমা সুবিধা শুধু শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য দেয়া হবে। বীমা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের তথ্যের ওপর নির্ভর করবে এবং ব্যাংক প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবে। ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান উভয়ই তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখবে। বীমা প্রিমিয়াম ও বীমা দাবি উভয়ই ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পাদিত হবে।

আইডিআরএ বলছে, এরই মধ্যে ১২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের ফলে এখন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ব্যাংকমুখী হয়েছে। বড়দের মতোই তাদের মধ্যেও সঞ্চয়ের মনোভাব তৈরি হয়েছে। তবে স্কুল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে বীমা বাধ্যতামূলক করলে এ হার আরো বাড়বে বলে মনে করছে তারা।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বাইরের দেশগুলোয় শিক্ষাবীমার বাধ্যবাধকতা থাকলেও আমাদের এখানে নেই। তবে সরকারের নতুন এ উদ্যোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্তকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলতে ভূমিকা রাখবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন বলেন, এটা অবশ্যই যুগান্তকারি একটি উদ্যোগ। বিষয়টি নিয়ে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এখনো কোন আলোচনা আমাদের সঙ্গে করেনি। তবে এক্ষেত্রে বেসরকারি খাত থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩২৯ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged