পুঁজিবাজার ট্রাইব্যুনালে পরবর্তী হাজিরা ২৭ জানুয়ারি

অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি ফের ৬ মাস স্থগিত

সময়: মঙ্গলবার, আগস্ট ২০, ২০১৯ ৪:৪৯:৪২ পূর্বাহ্ণ


নুরুজ্জামান তানিম :

প্রতারণার মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ‘অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ’ (সাবেক বাংলাদেশ কার্বাইড লিমিটেড)-এর বিরুদ্ধে দায়ের করা শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলাটি ফের ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। বাদী পক্ষ ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ (বিএসইসি)-এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর ২৪ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি রেজাউল হক ও জাফর আহমেদ-এর দ্বৈত বেঞ্চ মামলাটির বিচার কার্যক্রমের ওপর এ স্থগিতাদেশ দেন। হাইকোর্টের এ স্থগিতাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আকবর আলী শেখ সার্বিক দিক বিবেচনা করে মামলাটির দু’পক্ষে পরবর্তী হাজিরা আগামী ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি নির্ধারণ করেন।
গতকাল সোমবার সকালে রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের হাজিরার দিনে পুঁজিবাজার বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলাটির ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ সংক্রান্ত আবেদন দাখিল করে বিএসইসি।
এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন বাদী পক্ষ বিএসইসি’র আইনজীবী ও গ্রীনভিউ ‘ল’ কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাসুদ রানা খান, উপ-পরিচালক এএসএম মাহমুদুল হাসান (আইন) ও সহকারী পরিচালক মুন্সী মো. এনামুল হক (আইন)। একইসঙ্গে আসামি পক্ষ অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ-এর আইনজীবী মোহাম্মদ শামসুজ্জামান ও জনসংযোগ কর্মকর্তা (আন্তর্জাতিক) রওশন আলী উপস্থিত ছিলেন। মূলত অভিযুক্ত অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ-এর পক্ষে মোসা. বেগম সাখাওয়াত বানু’র হাজিরা দেন তার আইনজীবী মোহাম্মদ শামসুজ্জামান।
পরে সোমবার বিকেলেই বিএসইসি’র আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী হাজিরার দিন ধার্য সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেন পুঁজিবাজার বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
আদেশ জারির বিষয়টি ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে নিশ্চিত করেছেন পুঁজিবাজার বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সরকারী রেশমা শেখ। তিনি বলেন, ‘অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের মামলাটিকে কেন্দ্র করে বাদী ও আসামি পক্ষকে আগামী বছরের ২৭ জানুয়ারি পরবর্তী হাজিরা দিতে বলেছেন আদালত।’
এদিকে আদালতে মামলাটির হাজিরার কার্যক্রম শেষে বাদী পক্ষ বিএসইসি’র আইনজীবী ও গ্রিনভিউ ল’ কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাসুদ রানা খান ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের মামলায় পুঁজিবাজার বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালে গতকাল সোমবার সকালে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের হাজিরার দিন ছিল। সে হিসেবে বিএসইসি’র পক্ষ থেকে আমরা হাজিরা দিয়েছি। একইসঙ্গে আমরা মামলাটির ওপর হাইকোর্টের দ্বিতীয় দফা স্থগিতাদেশ সংক্রান্ত আবেদন আদালতে দাখিল করেছি। আদালত সার্বিক দিক বিবেচনা করে পরবর্তী হাজিরার দিন ধার্য করেছেন।’

অন্যদিকে হাজিরার কার্যক্রম শেষে আসামি পক্ষ অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের আইনজীবী মোহাম্মদ শামসুজ্জামান ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষের আদালতে আমরা হাজিরা দিয়েছি। আদালতে এসে শুনেছি, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির ওপর হাইকোর্ট বিএসইসি’র আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবারও ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছে। সে হিসেবে আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
আদালত সূত্রে জানা যায়, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ-এর বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালে বিএসইসি’র দায়ের করা শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলাটির কার্যক্রম উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৩ সাল থেকে স্থগিত ছিল। এরপর ২০১৫ সালে মামলাটি পুঁজিবাজার-বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও শহিদুল করিমের দ্বৈত বেঞ্চ মামলাটির বিচার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ বাতিলের আদেশ দেন। ফলে মামলাটি পুনরায় সচল হয়।
গত বছর ২৪ জুলাই ট্রাইব্যুনালে উচ্চ-আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের কপি দাখিলের মাধ্যমে মামলাটির বিচার কাজ শুরু হয়। ওইদিন আসামিদের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন ট্রাইব্যুনালে ‘মোহাম্মদ ভাই’-এর মৃত্যুর সনদ দাখিল করেন। মোহাম্মদ ভাই মারা যান ৯ জানুয়ারি (২০১৮ সাল)। এর আলোকে মোহাম্মদ ভাইয়ের মৃত্যুর সত্যতা যাচাইয়ে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশকে ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দিয়েছিল। পরে পুলিশ তার মৃত্যুর সত্যতা আছে বলে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করে। ওই বছরই ২৯ আগস্ট মামলাটির অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়। তবে ওইদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ার কারণে এ মামলাটির আসামি আজিজ মোহাম্মদ ভাই-এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) ইস্যু করে ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে তিনি ‘পলাতক’ রয়েছেন বলে জানা যায়। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ১৮ ও ২৩ সেপ্টেম্বর মামলাটির বাদী ও সাক্ষী বিএসইসি’র সাবেক নির্বাহী পরিচালক এমএ রশীদ খান সাক্ষ্য দেন এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন গত ৭ অক্টোবর।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর বিচারক মো. আকবর আলী শেখ-এর আদালতে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ-এর মামলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আমিরুল ইসলাম চৌধুরী সাক্ষ্য দেন। ওইদিন আসামি পক্ষ অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ-এর প্রতিনিধি হিসেবে কোম্পানিটির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মাজহারুল হাসান খানকে আদালতে হাজির করে। কিন্তু বিএসইসি বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানালে ২৫ অক্টোবর (২০১৮) অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ মাজহারুল হাসান খানের পরিবর্তে কোম্পনিটির স্বতন্ত্র পরিচালক মোসা. বেগম সাখাওয়াত বানুকে ওই দায়িত্ব দেয়, যা পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মঞ্জুর করে আদেশ দেন। তবে আগের মতোই স্বতন্ত্র পরিচালককে মামলার প্রতিনিধিত্ব দেয়ার বিষয়টি নিয়েও আদালতে আপত্তি জানায় বিএসইসি। পরে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোটে দু’টি ক্রিমিনাল রিভিজন (৩৪৮০/২০১৮ ও ৩৪৮১/২০১৮) দায়ের করে বিএসইসি।
এরই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট প্রথম দফায় মামলাটির কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেন। পরবর্তীতে আগের ছয় মাস স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ফের সময় বৃদ্ধির আবেদন করে বিএসইসি। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৪ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি রেজাউল হক ও জাফর আহমেদের দ্বৈত বেঞ্চ মামলাটির বিচার কার্যক্রমের ওপর দ্বিতীয় দফায় ছয় মাস স্থগিতাদেশ দেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয় অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ। এক্ষেত্রে ১০০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে ২০০ টাকা প্রিমিয়াম নিয়ে রাইট শেয়ার ইস্যু করে কোম্পানিটি। সে সময় এর শেয়ারের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ২০০টি। কিন্তু ২০০ টাকা প্রিমিয়ামে মাত্র ৩১ হাজার ৫৯০টি রাইট শেয়ারের আবেদন জমা পড়েছিল। বাকি ১ লাখ ৩ হাজার ৬১০টি শেয়ারের বিপরীতে কোনো আবেদন জমা পড়েনি। সে সময় কয়েক দফা বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে শেয়ারের দর বাড়িয়েছিল অলিম্পিক। যেখানে ১৯৯৬ সালের ৩০ জুন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৫৪৯ টাকা, সেটি মাত্র সাড়ে চার মাসের ব্যবধানে একই বছরের ১৬ নভেম্বর ৪ হাজার ৪৭৫ টাকায় দাঁড়ায়। আলোচ্য সময়ে শেয়ারের দাম বেড়েছিল সাড়ে আট গুণ। পরবর্তী সময়ে একই মালিকের কোম্পানি এমবি ফার্মা বেশি দামে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা নিয়ে যায়। এরপর থেকেই কমতে থাকে অলিম্পিকের শেয়ার দর। মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দর কমে ১ হাজার ৪০ টাকায় নেমে আসে। এ ঘটনায় ১৯৯৯ সালে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং এর দুই উদ্যোক্তা মোহাম্মদ ভাই ও আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএসইসি।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪৮৬ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged