নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ন্যাশনাল ফিড মিল প্রায় ৪৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের কঠোর অবস্থানে ব্যাংক এশিয়া। এজন্য ন্যাশনাল ফিড মিল ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হ্যাচারি প্রাইভেট লিমিটেড-এর বন্ধক রাখা সম্পদ নিলামে তুলতে যাচ্ছে ব্যাংকটি। প্রতিষ্ঠানটির শান্তিনগর শাখা গাজীপুর অর্থঋণ আদালতের আদেশ অনুসারে এই নিলাম কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সংবাদপত্রে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
ব্যাংকটি জানিয়েছে, বন্ধক রাখা সম্পত্তি বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, যা আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত খোলা থাকবে।
নিলাম বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ন্যাশনাল ফিড মিল ও ন্যাশনাল হ্যাচারির মোট বকেয়া ঋণ ছিল ৪৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। বারবার দাবি ও নোটিশ পাঠানো সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠান দু’টির ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়।
নিলামে তোলা সম্পদের মধ্যে রয়েছে গাজীপুরে অবস্থিত মোট ১৫.৭৭ একর জমি এবং সেখানে নির্মিত ফিড মিল কারখানার ভবন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ন্যাশনাল ফিড মিলের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক এশিয়ার কাছে রয়েছে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ, মেঘনা ব্যাংকের কাছে ১৭ কোটি ১৬ লাখ এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে ১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কোম্পানির স্থায়ী সম্পদ মাত্র ২৮ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং মোট সম্পদ ১৭৬ কোটি টাকা।
চলতি বছর ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার নিট লোকসানে পড়ে, ফলে দুই বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি কোম্পানিটি। ধারাবাহিক আর্থিক দুর্বলতার কারণে এটি বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরির জাঙ্ক স্টক হিসেবে চিহ্নিত।
২০১৫ সালে ন্যাশনাল ফিড মিল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ১০ টাকা দরে ১ কোটি ৮ লাখ শেয়ার ইস্যু করে ১৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। তহবিলের ৪০ শতাংশ ঋণ পরিশোধ, ৪৫ শতাংশ ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং বাকিটা কার্যনির্বাহী মূলধন ও আইপিও সংক্রান্ত ব্যয়ে বরাদ্দ করা হয়েছিল।
তবে ২০১৬ সালের সফল রাজস্ব ও নিট মুনাফার পর (যেখানে রাজস্ব ছিল ২২৫ কোটি টাকা ও মুনাফা ছিল ১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা), পরবর্তী বছরগুলোতে কোম্পানিটির পারফরম্যান্স ধারাবাহিকভাবে অবনতির দিকে যায়। ২০২৪ সালে রাজস্ব কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩০ কোটি টাকা এবং লোকসান দাঁড়ায় ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকায়।
প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন প্রবাস ফেরত উদ্যোক্তা আখতার হোসেন বাবুল, যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন অবস্থান করে দেশে ফিরে পোলট্রি ও পশুখাদ্যের সম্ভাবনাময় বাজারে বিনিয়োগ করেন। তবে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব ৫৩ শতাংশ কমে ৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় নেমে আসে এবং সেই সময় ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা লোকসান হয়। এরপর থেকে কোম্পানিটি আর কোনো ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
বিনিয়োগকারীদের মতে, কোম্পানিটির ব্যবসায়িক ব্যর্থতা এবং আর্থিক অনিয়মই আজকের এই দুঃসময় ডেকে এনেছে। তারা দাবি করেন, এমন দুর্বল ও অনিয়মিত কোম্পানির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিএসইসি ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সক্রিয় হস্তক্ষেপ জরুরি।