টাকা আদায় করতেই ২ শতাংশের সুবিধা, ভালো-মন্দ কখনও এক হবে না : অর্থমন্ত্রী

সময়: বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ৭, ২০১৯ ১২:১২:১৬ অপরাহ্ণ


বিশেষ প্রতিবেদক : অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায় করতেই খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে অনেকেই ধারণাা করছেন যে ভালো-মন্দ এক হয়েছে যাচ্ছে। কিন্তু ভালো-মন্দ কখনও এক হবে না।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন,যারা ২ শতাংশ ডাউন-পেমেন্ট দেবে তারা আবার ব্যবসা করতে পারবেন। কারণ তাদের ব্যবসা করতে হলে আবার ঋণের প্রয়োজন হবে। আর যারা ভালো তাদের তো কোন এক্সট্রা ডিপোজিট বা ঋণ লাগবে না। তবে সবাই যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে তাহলে সবাই দিতে পারবে।
তিনি বলেন, খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগে ২ শতাংশ কোনো বিষয় নয়। ২ শতাংশ শর্ত মেনেই তারা ঐকমত্য পোষণ করবে যে, তারা আমাদের সঙ্গে আছে। তারা এ শর্ত বাস্তবায়ন করার জন্য এগিয়ে আসবে। আমরা এক্ষেত্রে একটি কাজ করতে চাচ্ছি। সেটা হলোÑ কাউকে জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায় করতে। যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে তাদের সবাইকেই টাকা ফেরত দিতে হবে। যেভাবেই হোক এ টাকা আমরা আদায় করবোই। এগুলো রাষ্ট্রের সব মানুষের টাকা। তবে আমরা সময়টা একটু বাড়িয়ে দিয়েছি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্টের রায়টি যখন আসবে তখন আমরা কার্যকর করবো। কার্যকর করতে গেলে আমাদেরকেও সবাইকে একটু সময় দিতে হবে। রায়ে কিছু পরিবর্তন হবে। আমাদের কিছু বাড়তি চাহিদা আছে। আগে রায় আসুক। রায়ের আগে কিছু বলা ঠিক হবে না। বেশি পরিবর্তন হবে না, মোটামুটিভাবে ঠিক থাকবে। কোর্ট আর আমাদের মাঝে কোনো বিরোধ নেই। আমরা একই পক্ষ। আমরা যে কাজটি করতে যাচ্ছি, সেটি দেশের মানুষের জন্য, জনকল্যাণের জন্য। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব আইন আমরা করতে যাচ্ছি। এখানে অনেক ইস্যু রয়েছে, তা একত্র করে ব্যাংক খাতটাকে দাঁড় করানোটাই হলো আমাদের উদ্দেশ্যে। এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কথা-বার্তা হচ্ছে। আসলে আমাদেরও কোথায় কোথায় ভুল আছে, সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণে সুদের হার ১০-এর উপরে যাবে না। এটা ৯ দশমিক ৭৫ হবে। অর্থাৎ সিঙ্গেল ডিজিট হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারে ও বাজেটে সেটা উল্লেখ আছে। যাই হোক আমরা ব্যাংক ঋণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদ আদায় করবো। এটা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ব্যাংক, ঋণগৃহীতা, সরকার ও দেশের মানুষ যেন না ঠকে। সে কাজ করতে হলে একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ সবাইকে সম্পৃক্ত করে এ কাজটি করতে হবে।
ব্যাংকগুলো এখনও কোন কমপাউন্ড সুদের হার করতে পারেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে আমরা এখন পর্যন্ত কিছু করতে পারিনি। তবে ব্যাংকগুলো করবে। যখন আমরা রায়ের কপি হাতে পাব। তখন বলা হবে কমপাউন্ড সুদের হার করতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানবে না। এমন কোন ব্যাংকের অস্তিত্ব বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না। যদি না মানে সেজন্য আমরা আইনে পরিবর্তন নিয়ে আসছি। প্রয়োজনে মার্জার করা হবেÑ এ ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসছি। সরকারের সিদ্ধান্ত মানবে না, এটা হতেই পারে না। তবে যারা মানবে তাদেরকে আমাদের সাহায্য করতে হবে। এজন্য যে সুযোগ-সুবিধাগুলো আছে তা দিয়ে সহযোগিতা করবো।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দুঃখের বিষয় হলো গত বছরই তারা ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার কথা বলেছিল। এজন্য তারা সরকারের কাছে কিছু শর্ত দিয়েছিল সরকার তা পূরণ করেছে। এর মধ্যে অনেকেই সিঙ্গেল ডিজিটে আসছে। আবার কেউ কেউ আসেনি। তাদেরকে আসতে হবে না হলে তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আইন সবার জন্য সমান। তারা ব্যবসা করলে লাভ করবে কেউ কম কেউ বেশি করবে। কিন্তু রেইট সকলের এক হতে হবে।
সরকারি ব্যাংক ছাড়া বেসরকারি ব্যাংক এ নিয়ম মানছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি কিছু বেসরকারি ব্যাংকও মানছে। তারাও সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসছে।
ব্যাংকি কমিশনের বিষয়ে কী ভাবা হচ্ছেÑ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক কমিশন যে আমরা করবো সেটা বাজেটেও বলেছি। সুতরাং আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্ডারেই ব্যাংক কমিশন করবো। শিগগিরই করা হবে। আপনারা জানতে পারবেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এ অবস্থানে আসতে এদেশের মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। আমাদের তাঁতি, শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষক, কামার, কুমার, জেলে, সাংবাদিক সকলেইর অবদান রয়েছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার রাস্তাগুলো হচ্ছে সংস্কার। বিভিন্ন খাতে আমাদের সংস্কার মুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন পুঁজিবাজার, ব্যাংকিংখাত, নন-ব্যাংকিং খাত, এনবিআর, শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে সংস্কার লাগবে। আমরা যদি সংস্কার না আনি তাহলে পিছিয়ে থাকবো।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৬৮ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged