দেশের শেয়ারবাজারে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানের শেয়ারের অভাব পরিলক্ষিত হয়। মূলত সেই কারণেই বাজারে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। বাজার বিশ্লেষকগণ মনে করছেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য স্থানীয় এবং বিদেশি কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে নিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বাজারের প্রতি এক ধরনের আস্থাহীনতার কারণে স্থানীয় উদ্যোক্তাগণ তাদের কোম্পানির শেয়ার বাজারে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তেমন একটা আগ্রহ প্রদর্শন করছেন না। আর এটা সত্যি যে স্থানীয় কোম্পানির শেয়ার যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে বাজারে না আসে তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারিরা তাদের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে উৎসাহী হন না। বাজারে ভালো কোম্পানির পর্যাপ্ত পরিমাণ শেয়ার না থাকায় চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে। এই সুযোগে মহল বিশেষ বাজার নিয়ে নানা ধরনের খেলায় মেতে উঠে। স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার সম্পর্কে অত্যন্ত উৎসাহী। তারা বিনিয়োগ করতে চান কিন্তু বাজার পরিস্থিতি তাদের জন্য আস্থা সৃষ্টি করতে পারছে না। ফলে অনেক কোম্পানির শেয়ারই অভিহিত মূল্যের নিচে বিক্রি হচ্ছে। এই যখন অবস্থা বিনিয়োগকারীদের জন্য সুসংবাদ নিয়ে এসেছে একটি ইতিবাচক খবর। দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন এ প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, অচিরেই দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি ওয়ালটন তাদের কোম্পানির শেয়ার বাজারে নিয়ে আসছে। ইতোমধ্যেই কোম্পানিটি তাদের আইপিও বিডিং এর অনুমোদন পেয়েছে। ওয়ালটন আইপিও’র মাধ্যমে বাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। কিন্তু অনেকেই বলছেন, মন্দাবাজারে আইপিও’র মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে ওয়ালটন সমস্যায় পড়তে পারে। কারণ বর্তমান বাজারে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এই অবস্থায় কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ইতোপূর্বে দেশের কয়েকটি বড় বড় কোম্পানির তাদরে শেয়ার বাজারে নিয়ে এসেছে। কিন্তু তাদের শেয়ার বাজারে বিক্রি হচ্ছে কাট অফ প্রাইসের চেয়েও কম মূল্যে। যেমন,পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড ২০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের কাট অফ প্রাইস নির্ধারিত হয়েছিল ৮০ টাকা। কোম্পানির অফার প্রাইস ছিল ৭২ টাকা। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এই মূল্যেই শেয়ার ক্রয় করেছে। গত বুধবার এই কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৪ টাকায়। অর্থাৎ কোম্পানির শেয়ারের অফার প্রাইসের চেয়ে প্রতিটি শেয়ার ২৮ টানা নিচে লেনদেন হয়েছে। একই ভাবে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড বাজার থেকে আইপিও’র মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। তাদের কাট অফ প্রাইস নির্ধারিত হয়েছিল ৭৫ টাকা এবং অফার প্রাইস ছিল ৬৭ টাকা। গত বুধবার এই কোম্পানির শেয়ার বিক্রি হয়েছে প্রতিটি ৫৫ টাকা ৪০ পয়সায়। আরো কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের অবস্থাও একই রকম।
এমনি এক অবস্থায় ওয়ালটনের আইপিও বাজারে আসতে যাচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকগণ এ কারণেই কিছুটা উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছেন,মন্দা বাজারের সুযোগ নিয়ে মহল বিশেষ এই কোম্পানির শেয়ার নিয়ে নোংড়া খেলায় মেতে উঠতে পারে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ যাতে কোনোভাবেই ক্ষুন্ন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দেশের বড় বড় কোম্পানি তাদের শেয়ার নিয়ে বাজারে আসার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হতে পারে।
মন্দাবাজারে ওয়ালটনের আইপিও: বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ যেনো ক্ষুন্ন না হয়
সময়: রবিবার, জানুয়ারি ১২, ২০২০ ৬:৪৭:২৪ অপরাহ্ণ