অনিয়মের কারণে সাফকো স্পিনিংয়ে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ

সময়: সোমবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১ ৫:৫৫:৫৪ অপরাহ্ণ


শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাফকো স্পিনিং মিলসে অনিয়মের কারণে ৪জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একইসঙ্গে কোম্পানির সার্বিক অবস্থা যাচাইয়ে বিশেষ নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে, ডিএসইর রিপোর্ট ও নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব থেকে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোম্পানি ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য কোন লভ্যাংশ দেয়নি। এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ পরিশোধিত মূলধনের ৮৭.৩৯% শেয়ারবাজার থেকে বৃদ্ধি করেছে। যে কোম্পানিটির ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিক্রির চেয়ে বিক্রিত পণ্যের ব্যয় বেশি দেখানোকে অবাস্তব বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে কমিশন।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৩ কোটি ১৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। এই পণ্য উৎপাদনে ৩৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে আর্থিক হিসাবে জানিয়েছে। অর্থাৎ পণ্য বিক্রির চেয়ে উৎপাদন ব্যয় বেশি। যেটাকে অবাস্তব বলছে বিএসইসি।

এদিকে বিএসইসির নির্দেশনা অমান্য করে সাফকো স্পিনিং থেকে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে ঋণ দিয়েছে। এছাড়া রিভ্যালুয়েশন সারপ্লাসের উপর অবচয়ের জন্য ডেফার্ড টেক্স সমন্বয় না করেই ৭১ লাখ টাকা রিটেইন আর্নিংসে স্থানান্তর করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-৬৪ এর ২০ অনুসরন করা হয়নি।

এই কোম্পানির ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব যথাযথভাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সাক্ষরের মাধ্যমে সত্যতা স্বীকার করা হয়নি। কোম্পানিটির ২০১৯ সালের ৩০ জুন টার্ম লোনের পরিমাণ বেড়ে দাড়াঁয় ৬৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। যা আগের বছরে ছিল ৩৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এতে করে সুদজনিত ব্যয় ৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা থেকে ৪ কোটি ১২ লাখ টাকা বেড়ে ১১ কোটি ৭১ লাখ টাকা হয়। যা কোম্পানির ঋণাত্মক ইপিএস বয়ে আনে।

এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন (এনআরসি) কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই আর্থিক হিসাবের পরিচালকদের রিপোর্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাক্ষর করে বিএসইসির নির্দেশনা অমান্য করা হয়েছে।

এসব বিষয়সহ অন্যান্য দিক বিবেচনায় সাফকো স্পিনিং যথাযথভাবে এগোতে পারছে না বলে কমিশনের কাছে প্রতিয়মান হয়েছে। অথচ এই কোম্পানিতে সাধারন বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৭০ শতাংশ। কিন্তু তারা লভ্যাংশ পাচ্ছে না। যা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ পরিপন্থী এবং কমিশনের কাছে অপ্রত্যাশিত।

এই পরিস্থিতিতে কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকদের শেয়ার আনলক না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এছাড়া কোম্পানির উন্নয়নে ৪জন স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়ন দিয়েছে।

এই ৪ জনের মধ্যে রয়েছেন- সিনিয়র আইনজীবী এস.এম মুনির, অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার মুস্তাফিজুর রহমান, অগ্রনি ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মো. ওয়ালি উল্লাহ ও অধ্যাপক ড. সুমন দাস।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোন ধরনের সম্পদ বিক্রি, বন্ধকী, হস্তান্তর করতে পারবে না বলে জানিয়েছে। এছাড়া কোম্পানির সার্বিক বিষয়াদি যাচাইয়ের জন্য বিশেষ নিরীক্ষা করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া সাফকো স্পিনিংয়ে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এই কোম্পানিটির রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) লেনদেন শেষে শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ২৮.৩০ টাকায়।

শেয়ারবাজার২৪

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪১৩ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged