bangladesh bank

ঋণের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ ব্যাংক

সময়: বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১৬, ২০২০ ১২:১০:১৪ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে ঋণ জালিয়াতিকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণের নামে অর্থ লোপাট চলছে। ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংক মালিক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও প্রকাশ পেয়েছে। ফলে ঋণের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার ব্যাংকার্স সভায় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গভর্নর ফজলে কবীর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বিস্তারিত ও খোলামেলা আলোচনা করেছেন। এ সময় তারা বিভিন্ন পক্ষের চাপের বিষয়টি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের নানা অনিয়মের কথা উঠে আসে।

বৈঠকের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এই মুহূর্তে আর্থিক খাতে কোনো অস্থিরতা হলে সহসা তার সমাধান হবে না। একদিকে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা চলছে। ফলে এখন অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। তাই গভর্নর নতুন ঋণের বিষয়ে আরও সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে নানা উদ্যোগের পরেও ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমছেই না। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা ফিরিয়ে দেয়ার ইচ্ছেও নেই অধিকাংশ ঋণ খেলাপির। এক্ষেত্রে ভুয়া ঋণ ও জামানত সংরক্ষণে ব্যাংকগুলোর ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে বলে চিহ্নিত করেন সংশ্লিষ্টরা। তাই সম্প্রতি এ দু’টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কঠোর অবস্থান দেখাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ভুয়া ঋণ বন্ধে জামানত সংরক্ষণের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জামানত সংরক্ষণে শক্তিশালী তথ্যভাণ্ডার তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয় ওই সভায়। বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরাও এ সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডারের তৈরির উপর জোর দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। এ টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যর্থতা হিসেবে জামানত সংরক্ষণে ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা ভালো নয়। সেখান থেকে ব্যাংকগুলোর আমানত একসঙ্গে উঠিয়ে না নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিগগিরই সিঙ্গেল ডিজিট ঋণের সুদহার চালু হচ্ছে। তাই নতুন করে যেন খেলাপি ঋণ না বাড়ে সে দিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই ঋণের বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে।

জামানত তথ্যভাণ্ডারের বিষয়ে ২০১৬ সালে গুরুত্ব দেয়া শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে এর প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোলাটেরেল ডাটাবেজের তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার প্রাপ্তি সাপেক্ষে সেটি উন্নয়নকৃত সফটওয়্যার সিস্টেমে ডিপ্লয় করার মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে সিস্টেমটির পারফরম্যান্স টেস্টিং সম্পন্ন করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায়, এই তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা সম্ভব হলে ভুয়া দলিল সৃজন করে অথবা একই জমি বারবার দেখিয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে না। কারণ এই তথ্যভাণ্ডারে সব ব্যাংকের প্রবেশাধিকার থাকবে।

এদিকে ব্যাংকিং খাতে ঋণ অধিগ্রহণের (লোন টেকওভার) নামে চলছে আরেক জালিয়াতি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাকে অন্য ব্যাংক পেতে চায়। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের সাবেক ব্যাংকের থাকা সব দায়-দেনা পরিশোধ করে দেয় নতুন ব্যাংক। এভাবে ঋণ অধিগ্রহণে আইনগত কোনো বাধা নেই। কিন্তু এই পদ্ধতির অপব্যবহার হচ্ছে। এটা কয়েক বছর আগে সব চেয়ে বেশি ছিল। তখন এক ধরণের অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয় ব্যাংকারদের মধ্যে। এক ব্যাংকের গ্রাহক অন্য ব্যাংক নানা প্রলোভন দেখিয়ে ভাগিয়ে নিয়ে যেত। কিছু ক্ষেত্রে কমিশন বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঙ্খিত পর্যায়ে আদায় না হওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছে অধিগ্রহণকৃত ঋণগুলো। অধিগ্রহণকৃত ঋণের এক টাকাও আদায় হচ্ছে না। উল্টো খেলাপির ঋণের বোঝা ভারি হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩২টি ঋণ অধিগ্রহণ করেছে জনতা ব্যাংক,যাতে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৯৮৫ কোটি টাকা। বর্তমানে তা সুদাসলে ২ হাজার ৭৭০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে মন্দমানে শ্রেণিকৃত হয়ে পড়েছে এক হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো যাচাই-বাছাই করা হয়নি। ব্যক্তি পর্যায়ে সুবিধা ছাড়া এ ধরণের ঋণ অধিগ্রহণের সুযোগ নেই। কেউ কেউ বলছেন, কী এমন ঋণ অধিগ্রহণ করেছে জনতা; যে এক টাকাও আদায় হবে না।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪৩৪ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged