একটি ব্যাংকে ১০ শতাংশের বেশি আমানত রাখা যাবে না

সময়: বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৮, ২০১৯ ৪:১৫:২৫ পূর্বাহ্ণ


অনুপ সর্বজ্ঞ : জীবন বীমা কোম্পানিগুলো তার সম্পদের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত আমানত বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকে গচ্ছিত রাখতে পারবে। তবে কোন একটি ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ১০ শতাংশের বেশি হবে না। এর আগে এ হার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। সম্প্রতি তা সংশোধন করে ‘জীবন বীমা কোম্পানির সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ প্রবিধানমালা ২০১৯’-এর খসড়া তৈরি করেছে ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্র্তৃপক্ষ’ (আইডিআরএ)।

জীবন বীমা কোম্পানির সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণের খসড়া প্রবিধানমালাটি নিয়ে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে গত ২৬ জুন আলোচনায় বসেছিল আইডিআরএ’র সংশ্লিষ্ট কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক আইডিআরএ সদস্য বোরহানউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় খসড়া প্রবিধানমালাটির বেশ কিছু বিষয়ে আপত্তি জানান খাত সংশ্লিষ্টরা। এ প্রেক্ষিতে খসড়ার কিছু অংশে সংশোধন এনে তা নতুন করে তৈরি করেছে সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ ‘শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, বিনিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আদলে খসড়া প্রবিধানমালাটি তৈরি করা হয়েছে। এটি নিয়ে আমরা একাধিকবার স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি। আশা করছি শিগগিরই প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত করতে পারবো।’
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন বলেন, ‘কোন একটি ব্যাংকে ১০ শতাংশের বেশি আমানত না রাখার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা বীমা খাতের জন্য ইতিবাচক। এর মাধ্যমে বিনিয়োগের বহুমুখীকরণ সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।’
খসড়া প্রবিধানমালা অনুযায়ী, সরকার অনুমোদিত ‘এ’ ক্যাটাগরির যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সম্পদের ১০ শতাংশ আমানত হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারবে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো। তবে মোট সম্পদের ২ শতাংশের বেশি কোনো একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা যাবে না।
খসড়া প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, সম্পদের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে পারবে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো। এছাড়া স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নির্ধারনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সম্পত্তি আবাসিক কাজে ব্যবহার করা হলে জীবন বীমা কোম্পানির সম্পদের ২ শতাংশ এবং দাপ্তরিক বা দোকান হিসেবে ব্যবহারের জন্য ভাড়া দেয়া হলে সম্পদের ৫ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করা যাবে না।
এদিকে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন ডাবল ‘এ’ রেটিংপ্রাপ্ত বা সমমানের যে কোনো ধরনের বন্ডে সম্পদের ১৫ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে খসড়ায়। এছাড়া ডিবেঞ্চারে মোট বিনিয়োগ সম্পদের ১০ শতাংশের বেশি হবে না। তবে কোনো একটি কোম্পানির ডিবেঞ্চারে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ সম্পদের ৫ শতাংশ অতিক্রম করবে না।
খসড়া প্রবিধানমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত এবং স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত যে কোনো কোম্পানির অগ্রাধিকার শেয়ার বা সাধারণ শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবে জীবন বীমা কোম্পানি। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো- কোনোভাবেই ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ারে বিনিয়োগ করা যাবে না।
এছাড়া জীবন বীমা কোম্পানির মোট সম্পদের ২৫ শতাংশের বেশি অগ্রাধিকার শেয়ার বা সাধারণ শেয়ারে বিনিয়োগ করা যাবে না। একই সঙ্গে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ বা জীবন বীমা কোম্পানির সম্পদের ৫ শতাংশের বেশি আলোচ্য শেয়ারে বিনিয়োগ হবে না। মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও ইউনিট ফান্ডে সম্পদের ২০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে না জীবন বীমা কোম্পানিগুলো।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে সংসদে অনুমোদন পায় নতুন বীমা আইন। ২০১১ সালে গঠন হয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্র্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এরপরই জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বিষয়ে সময়োপযোগী একটি প্রবিধানমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। দফায় দফায় স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনায় বসে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি এ সংক্রান্ত একটি খসড়াও তৈরি হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা চূড়ান্ত হয়নি এখনো। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সম্প্রতি এ বিষয়ে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বর্তমান সদস্যরা।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪৪১ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged