ঝুলে আছে চার কোম্পানির ওটিসিতে লেনদেনের সিদ্ধান্ত

সময়: বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৮, ২০১৯ ৪:১৯:১৭ পূর্বাহ্ণ


সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চার কোম্পানির শেয়ার ‘ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেট’ (ওটিসি)-এ লেনদেনের বিষয়ে চার মাসেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কোম্পানিগুলো হচ্ছেÑ সাভার রিফ্রাক্টোরিজ, ইমাম বাটন, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ ও মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক। কোম্পানি চারটিকে ওটিসি মার্কেটে লেনদেনের সুযোগ দেয়ার জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএসইসি-কে অনুরোধ জানিয়েছিল ঢাকা স্টক একচেঞ্জ (ডিএসই)। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ডিএসই। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করা শেয়ারহোল্ডাররা।
জানা যায়, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কোনো বিষয়ে নির্দেশনা দেয়ার এখতিয়ার বিএসইসি’র রয়েছে। তবে ডিএসই চাইলেই বিএসইসি নির্দেশনা দেবেÑ এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
এ বিষয়ে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান শেয়ারবাজাার প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএসইসির কাজই হলো বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া। তবে কেউ চাইলো, আর বিএসইসি নির্দেশনা দিয়ে দেবেÑ এটা ভাবা ঠিক নয়। ডিএসই একটা অনুরোধ করেছে, এখন কমিশন সেটাকে প্রক্রিয়াধীন রেখেছে।’
এদিকে ডিএসইর দাবি, ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ওর্ডিন্যান্স ১৯৬৯’ এর সেকশন ২০-এ এর ক্ষমতা বলে কোম্পানি ৪টিকে ওটিসি সুবিধা দেয়া হোক। কারণ ওই ৪টি কোম্পানি ‘লিস্টিং রেগুলেশনস ২০১৫’-এর ৫১ ধারা অনুযায়ী ডি-লিস্টিং ক্রাইটেরিয়ার আওতায় পড়ে।
এ প্রসঙ্গে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান ‘শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘আমরা ৪ কোম্পানিকে ডিলিস্টিং করার জন্য কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। কোম্পানিগুলো ডিলিস্টিং ক্যারিটেরিয়ার আওতায় পড়ে এটাই বলেছি। তাই কোম্পানিগুলোর জন্য ওটিসি সুবিধা চেয়ে বিএসইসির কাছে নির্দেশনা প্রদানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
কী রয়েছে ৫১ ধারায়:
’লিস্টিং রেগুলেশনস’ এর ৫১ (১) ধারা বলা হয়েছে, স্বাভাবিকভাবে ৫ কারণে একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি তালিকাচ্যুত হতে পারে।
১. যদি কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির ৫ বছরে কোনো লভ্যাংশ প্রদান না করে। ২. কোম্পানিটি যদি একটি ধারাবাহিক সময়কাল ধরে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করে। ৩. যদি কোম্পানিটি স্বেচ্ছায় বা কোর্টের আদেশে লিক্যুইডেশন করে কিংবা উৎপাদন টানা ৩ বছর বাণিজ্যিক উৎপাদন/ অপারেশন/ অনুসন্ধান বন্ধ থাকে। ৪. কোম্পানিটি যদি টানা ৩ বছর তালিকাভক্তি ফি/ অন্য রেগুলেশনগত ফি দিতে ব্যর্থ হয়। ৫. আর যদি ‘বাংলাদেশ কিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’/স্টক এক্সচেঞ্জ নন কমপ্লায়েন্সের জন্য ডিলিস্টিং আদেশ ইস্যু করে, সেক্ষেত্রে কোম্পানিটি ডিলিস্টিং হতে পারে। আর স্বেচ্ছায় ডিলিস্টিংয়ের আইন এখানে প্রযোজ্য হচ্ছে; কারণ ৪টি কোম্পানির কোনোটি স্বেচ্ছায় ডিলিস্টিংয়ের আবেদন করেনি।
এদিকে ৫১ (২) ধারাতে বলা হয়েছে, ট্রেড সাসপেন্ডের পরিবর্তে যদি কোনো কোম্পানির অপারেশন বন্ধ থাকে তবে স্টক এক্সচেঞ্জ সেই কোম্পানির সার্বিক অবস্থা ৬ মাস মনিটর করবে। যেখানে এজিএম না করতে পারা, বার্ষিক প্রতিবেদন, অপারেশনসহ সার্বিক বিষয়সমুহ রয়েছে। যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, উৎপাদন ৬ মাস বন্ধ থাকে; তবে স্টক এক্সচেঞ্জ ওই কোম্পানিকে ডিলিস্টিং করতে পারবে। আর ৫১ (৩) বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানিকে ডিলিস্টিং করা যাবে না; যদি না কোম্পানিটিকে শুনানির সুযোগ না দেয়া হয়।
কারা পাবে ওটিসিতে লেনদেন সুবিধা:
‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ওটিসি রুলস ২০০১’ এর সংশোধিত রুলসে বলা হয়েছে- কোনো অতালিকাভুক্ত/ তালিকাচ্যুত কোম্পানি ওটিসির লেনদেন সুবিধা পেতে চাইলে ওই কোম্পানিকে কমিশন ও একচেঞ্জ বিধি মেনে স্টক এক্সচেঞ্জে আবেদন করতে হবে। এছাড়া কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন নূন্যতম ৫ কোটি টাকা থাকতে হবে। নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা করতে হবে এবং কোনো পুঞ্জিভূত লোকসান থাকলে চলবে না। এখানে বলা হয়েছে কমিশনের নির্দেশনা/ ডিরেক্টিভ ইস্যু করলে কেবল স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো কোম্পানিকে ওটিসি সুবিধা প্রদান করতে পারে।
ডিএসই ৪ কোম্পানিকে ডিলিস্টিং ক্যারিটেরিয়ার আওতায় আনায় বড় দর হারিয়েছে কোম্পানিগুলো। এতে করে সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের অভিযোগ ৪ কোম্পানিকে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হবে, এমন ঘোষণায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাতে কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। এভাবে ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও ঝুলে আছে সিদ্ধান্ত।
কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনের চিত্র:
ইমাম বাটন: ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৭৭ লাখ। কোম্পানিটির রিজার্ভ মাইনাস রয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। গত ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে ইমাম বাটনের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ৪০ পয়সা। আর শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয় ৫ টাকা ৮১ পয়সা। আর ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ,১৯) কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ২৯ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে লোকসান ছিলো ৮৫ পয়সা। আর তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ, ’১৯) কোম্পানির লোকসান হয়েছে ৭ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে লোকসান ছিলো ৩৩ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির এনএভি হয়েছে ৫ টাকা ৫২ পয়সা।
মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক: ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লাখ। কোম্পানিটির রিজার্ভ মাইনাস রয়েছে ৮৬ কোটি ৫৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৭ টাকা ৮৯ পয়সা। আর শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ৪৪ টাকা ৮ পয়সা (নেতিবাচক)। আর ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ,১৯) কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৫৫ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে লোকসান ছিলো ৬ টাকা ২৫ পয়সা। আর তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ,১৯) কোম্পানির লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে লোকসান ছিলো ১ টাকা ৬৩ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির এনএভি হয়েছে মাইনাস ৪৮ টাকা ৬৩ পয়সা।
মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ:
২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। কোম্পানিটির রিজার্ভ মাইনাস রয়েছে ১৬ কোটি ৩০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ৩৯ পয়সা। আর শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয় ৩ টাকা ৫৮ পয়সা (নেতিবাচক)। আর ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ,১৯) কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ২৩ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে লোকসান ছিলো ৩১ পয়সা। আর তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ,১৯) কোম্পানির লোকসান হয়েছে ০৮ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে লোকসান ছিলো ১০ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির এনএভি হয়েছে মাইনাস ৩ টাকা ৮২ পয়সা।
সাভার রিফ্র্যাক্টোরিজ:
১৯৮৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বিবিধ খাতের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৩ লাখ ৯২ হাজার ৮০০টি। কোম্পানিটির রিজার্ভ মাইনাস রয়েছে ৫১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে সাভার রিফ্র্যাক্টোরিজের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। এসময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ৯৪ পয়সা। আর শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয় ৫ টাকা ১৭ পয়সা। আর ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ,১৯) কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৯০ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে লোকসান ছিলো ৮৬ পয়সা। আর তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ,১৯) কোম্পানির লোকসান হয়েছে ৩৫ পয়সা। আগের বছর একই সময় ছিল ৩৩ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির এনএভি হয়েছে ৪ টাকা ২৭ পয়সা।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৫৭ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged