অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাবে বিএসইসি

কমোডিটি মার্কেট প্রতিষ্ঠায় প্রস্তুত নয় পুঁজিবাজার

সময়: সোমবার, অক্টোবর ২৮, ২০১৯ ৯:৫৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ


সালাহ উদ্দিন মাহমুদ : কমোডিটি মার্কেট প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার এখনো প্রস্তুত নয় বলে মত ব্যক্ত করেছে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ (বিএসইসি)। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-এর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ কথা জানিয়েছে বিএসইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, কমোডিটি মার্কেট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্প্রতি একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল সিএসই। সে পরিপ্রেক্ষিতে এক পত্রের মাধ্যমে বিএসইসি’র কাছে কমোডিটি মার্কেট প্রতিষ্ঠার হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি চলমান কার্যক্রম, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আইন প্রণয়ন, সময়সীমা নির্ধারণ, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণসহ সার্বিক অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পত্রের জবাবে বিএসইসি জানিয়েছে, কমোডিটি মার্কেট প্রতিষ্ঠার আগে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে কমোডিটি পণ্যের গুণগতমানের নিশ্চয়তা প্রদানে ব্যবস্থা করা। কমোডিটি বা পণ্য সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ ও হস্তান্তরকরণের জন্য নিবন্ধিত ওয়ারহাউজ সুবিধা এবং এর নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। মার্কেট অংশীদারদের সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা। ভোক্তার অধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য মূল্য নিরূপণ এবং ব্যবস্থাপনার জন্য কমোডিটি সম্পর্কে যথাযথ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা। পাশাপাশি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনের প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা।
পার্শ্ববর্তী দেশের উদাহরণ দিয়ে বিএসইসি বলেছে, ভৌগলিক অবস্থান, ঝুঁকি অবকাঠামো অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় ভারতের সক্রিয় ৪টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে পৃথক পৃথক ইনস্ট্রুমেন্ট লেনদেন হয়ে থাকে; যা বোম্বে ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের অন্তর্ভুক্ত নয়। এর মধ্যে মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়া (এমসিএক্স) লিমিটেডে গোল্ড, মেটাল, প্রাকৃতিক গ্যাস, ক্রুড অয়েল, কটন, সিলভার লেনদেন হয়। ন্যাশনাল কমোডিটি অ্যান্ড ডেরাইবেটিভস (এনসিডিএক্স) লিমিটেডে নিত্যপণ্য নয় এমন কৃষি পণ্য লেনদেন হয়। ন্যাশনাল মাল্টি-কমোডিটি এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়া (এনএমসিই) লিমিটেডে রাবার, পাট, কোপরা বা নারকেলের শুষ্ক শাঁস, চট এবং পাটের কাঁচামাল লেনদেন হয়। আর ইন্ডিয়ান কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (আইসিএক্স) ডায়মন্ড, স্টিল এবং মসলা জাতীয় পণ্য লেনদেন হয়।
বিএসইসি বলেছে, কমোডিটি মার্কেট প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবশ্যই আলাদা লাইসেন্স নিতে হবে। যেসব স্টক এক্সচেঞ্জ সাধারণত ইক্যুইটি, ডেট এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইনস্ট্রুমেন্ট ক্রয়-বিক্রয়ের প্লাটফর্ম দিয়ে থাকে; তারা এ মার্কেট পরিচালনা করতে পারে না। তবে সিএসই কমোডিটি মার্কেট প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পূর্নাঙ্গ কোনো প্রস্তাব পেশ করেনি। এ মার্কেটে কী ধরণের পণ্য লেনদেন হবে, এর ঝুঁকি নিরূপণ ও ব্যবস্থাপনা, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, ভোক্তার অধিকার নিশ্চিতকল্পে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব পেশ করেনি।
বিষয়টি নিয়ে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, বর্তমান বাজার কমোডিটি মার্কেট প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রস্তুত নয়। কারণ এখানে এখনও কাঠামোগত উন্নয়ন, আইন প্রণয়ন, পণ্য মূল্য নির্ধারণ, ওয়ারহাউজ স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় কাঠামো প্রস্তুত করা হয়নি। এখনও এ মার্কেটের ঝুঁকি কমানোর সক্ষমতা তৈরি হয়নি। তাই কমোডিটি মার্কেট প্রতিষ্ঠার আগে এসব কাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে সিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, ‘এ বষয়ে আমরা একটা প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিলাম। তবে আমরা এখনও ওই প্রস্তাবের কোনো জবাব পাইনি। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তসমুহ আমরা সিএসইর বোর্ডে উপস্থাপন করবো। বোর্ড এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কমোডিটি মার্কেট প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত রয়েছি। তবে এর আগে আমাদের লাইসেন্সের প্রয়োজন রয়েছে। লাইসেন্স পাওয়ার পর আমরা বাকি কার্যক্রম সম্পন্ন করবো।’
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৯৩ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged