editorial

করোনা ভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত পর্যটন খাত

সময়: শুক্রবার, মার্চ ৬, ২০২০ ১২:৩৬:৫১ পূর্বাহ্ণ


বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস এখন সবদেশের জন্যই আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলেছে। চীন থেকে এর উৎপত্তি হলেও খুব দ্রুতই তা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এবং ইরানসহ অন্যান্য দেশে বিস্তার লাভ করেছে এই করোনা ভাইরাস। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিশ্ববাসী খুব সহসাই এই বিপদ থেকে মুক্তি পাবে না। বরং এর প্রভাব বেশ দীর্ঘ স্থায়ী হবে। করোনা ভাইরাসের প্রাথমিক আঘাত চীনকে বিপর্যস্ত করলেও অন্য দেশগুলো এ ক্ষেত্রে বিস্তার পাবে না। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই পূর্বাভাস দিয়েছে, করেনো ভাইরাসের কারণে এ বছর চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের প্রাক্কলনের চেয়ে ২ শতাংশ কমে যেতে পারে। চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬দশমিক ১ শতাংশ না হয়ে ৪দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। এটা হবে বিগত ৩০ বছরের মধ্যে চীনের সবচেয়ে কম জিডিপি প্রবৃদ্ধি। করোনা ভাইরাসের কারণে চীনের পর্যটন শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চীনে এখন কোনো পর্যটক যাচ্ছে না বললেই চলে। চীন থেকেও পর্যটকরা বাইরে যাচ্ছে না। এতে বিশ্ব পর্যটন ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। ওয়ার্ল্ড ট্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি) তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করেছে, চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব পর্যটন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আগামীতে এই অবস্থা চলতে থাকলে পর্যটন শিল্প সমূহ বিপর্যয়ের মুখে এসে দাঁড়াতে পারে। করোনা ভাবরিাস জনিত আতঙ্কের কারণে ইতোমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্যটকের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে পর্যটন শিল্পের যে ক্ষতি হবে তার পরিমাণ ২ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার হতে পারে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ৪৫টি দেশের ৮১ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। আগামীতে অবস্থা আরো শোচনীয় হবার আশঙ্কা রয়েছে। উল্লেখ্য, পর্যটন হচ্ছে বিশ্বের একক বৃহত্তম শিল্প খাত,যা অত্যন্ত দ্রুত সম্প্রসারমাণ। কয়েক বছর আগের এক পরিসংখ্যান মতে, পর্যটন শিল্প প্রতি বছর গড়ে ১১ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এই খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বেশ দ্রুত গতিতে। বিশ্বব্যাপী পর্যটন শিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যটন খাত শুধু প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে তাই নয়। এই খাত পরোক্ষভাবে আরো অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। হোটেল ব্যবস্থা, পরিবহন ব্যবস্থা এবং এ ধরনের আরো অনেক খাত সরাসরি পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পর্যটন এমনই এক শিল্প খাতে যেখানে নতুন করে তেমন কিছুই তৈরি করতে হয় না। প্রাকৃতিক উপাদানগুলো কিছুটা পরিমার্জিত এবং রূপান্তরের মাধ্যমে অর্থ আয়ের উপযোগি করে তোলা যেতে পারে। পর্যটকদের আকৃষ্ঠ করার জন্য কয়েকটি বিশেষ উপকরণ থাকতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে, পাহাড়, মরুভূমি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাচীন ঐতিহ্য,বনভূমি, সমুদ্র এবং ওপেন সেক্স। বাংলাদেশ আয়তনে ছোট চলেও এর রয়েছে হাজার বছরের গৌরবময় ঐতিহ্য, আছে সুন্দরবনের মতো বিশ্ব ঐতিহ্য, কক্সবাজারের মতো পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। কাজেই বাংলাদেশে পর্যটক আকৃষ্ঠ করার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। কিন্তু পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণের অভাবে সেই সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। উপরন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এই খাতটি ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের দেশের পর্যটন শিল্প যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে না পারে সে লক্ষ্যে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

Share
নিউজটি ৫১২ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged