editorial

শোকজের নামে নাটক নয়, সততার সাথে দায়িত্ব পালন করুন

সময়: বুধবার, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১ ২:৪২:১৭ অপরাহ্ণ


সব ক্ষমতা হাতে থাকার পরও যখন তা প্রয়োগ করা হয়না, তখন জনমনে সন্দেহ হওয়াটাই স্বাভাবিক বিষয়। যেমন- আপনার সামনে হিংশ্র প্রাণী আপনাকে যে কোনো সময় আক্রমণ করতে পারে, অথচ আপনার হাতে বন্দুক থাকা সত্বেও গুলি ব্যবহার না করে কঞ্চি দিয়ে মোকাবেলা করতে উদ্দত হন- সেটা কি হাস্যকর নয়? আপনি কেন গুলি ব্যবহার না করে জানোয়ারটিকে কঞ্চি দিয়ে তাড়া করেন? এ রকম অবস্থা আমাদের দেশের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। তাদের হাতে যে ক্ষমতা অর্পিত হয়েছে- তা তারা সঠিকভাবে সততার সঙ্গে প্রয়োগ করেনা বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়।
যেমন- দেশের শেয়ারবাজারে বর্তমানে ক্রান্তিকাল বিরাজ করছে। একটি চক্র সুপরিকল্পিতভাবে পুরো বাজারটাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। তাদের ইচ্ছাতেই বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। তারা চাইলে সূচক বাড়ে, আবার না চাইলে বাড়েনা। অর্থাৎ তারা ইচ্ছামতো বাজার নিয়ে খেলছে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেন কিছুই করতে পারছেনা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা শুধু বিভিন্ন সময়ে অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোকে আইন ভঙ্গের দায়ে জরিমানা করছে এবং নতুন নতুন কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিচ্ছে। এছাড়া, আর কোন উল্লেখযোগ্য কাজ তাদেরকে করতে দেখা যায়না। তারা শুধু বিধি প্রণয়ন, নির্দেশনা জারি, অনুমোদন এবং জরিমানা করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করছে। অথচ এ বাজারের প্রতি তাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। তাদের ক্ষমতাও অনেক বিস্তৃত রয়েছে। কিন্তু এরপরও কেন তারা সে ক্ষমতা সঠিকভাবে ব্যবহার করে বাজারকে স্থিতিশীল পর্যায়ে আনতে পারছেনা- সেটাই প্রশ্ন।
শেয়ারবাজারে অনেক ভালো ভালো কোম্পানি থাকা সত্বেও অতিশয় দুর্বল কোম্পানিগুলোর দর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়- এটা শুধুমাত্র কারসাজির কারণেই। যখন কোম্পানিটির দর বাড়তে থাকে, তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজর অন্যদিকে। কিন্তু শেয়ারটির দর যখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়- তখন শোকজের নোটিশ পাঠিয়ে দায় সারা হয়। অন্যদিকে, কোম্পানিগুলোর গতানুগতিক জবাবেই চুপ হয়ে যায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রশ্ন হলো- সার্ভিল্যান্স বিভাগসহ সবগুলোই তো আপনাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আপনারা চাইলেই সেগুলোর মাধ্যমে এসব দুর্বল শেয়ার নিয়ে যারা কারসাজি করছে তাদেরকে সনাক্ত করতে পারেন। শোকজের তো প্রয়োজন পড়েনা। আপনারা সিডিবিএলের মাধ্যমে জানতে পারেন, কার অ্যাকাউন্ট থেকে কোন কোম্পানির শেয়ারে বড় অ্যামাউন্টের লেনদেন হচ্ছে। আপনারা ওই সংশ্লিষ্ট চক্রটিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনলেই তো সব সমাধান হয়ে যায়। সুতরাং, অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে না ধরে শুধুমাত্র কোম্পানিকে দায়সারা শোকজ নোটিশ পাঠানো স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে মেনে নেয়া যায়না। তাই বলবো, যেহেতু নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নির্দেশনা জারিসহ যেসব ক্ষমতা দেয়া হয়েছে- তার যথাযথ ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করতে হবে। শুধু শোকজের নামে নাটক না করে অত্যন্ত সততার সঙ্গে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করা উচিত।

Share
নিউজটি ৩৭১ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged