অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক পর্যালোচনা

খেলাপি ঋণ কমলেও অবস্থান ঋণাত্মক, আদায় সন্তোষজনক নয়

সময়: বুধবার, নভেম্বর ১৩, ২০১৯ ১১:৪১:৪২ পূর্বাহ্ণ


সোহেল রহমান : চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে। কিন্তু কমলেও ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি নাজুক পর্যায়ে রয়েছে। একক ব্যাংক হিসেবে জনতা ব্যাংক এখনো খেলাপি ঋণের শীর্ষে। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ বাড়ার পাশাপাশি আলোচ্য প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও ব্যর্থ হয়েছে অধিকাংশ ব্যাংক।

গতকাল মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পারফরমেন্স মূল্যায়নে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। সার্বিকভাবে এসব সূচকে ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের পারফরমেন্স ‘সন্তোষজনক নয়’ বলে মন্তব্য করেছে ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ’।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবিএম রুহুল আজাদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’-কে বলেন, বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সর্বাত্নক উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়েছে।’

বৈঠকে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত জুন শেষে এ ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৩ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে ১ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে এখনো জনতা ব্যাংক। গত সেপ্টেম্বর শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। গত জুন শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর শেষে অর্থাৎ আগামী জুন শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ১০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে গত সেপ্টেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা; অগ্রণী ব্যাংকের ৬ হাজার কোটি টাকা; রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা; বেসিক ব্যাংকের ৮ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা (গত জুন শেষে ছিল ৯ হাজার ১১৩ কোটি টাকা) ও বিডিবিএল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮৯০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে চারটিই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। বৈঠকে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, ১ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক তিন মাসে আদায় করেছে ১৮৯ কোটি টাকা (১৯ শতাংশ); ৪০০ কোটি টাকার বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংক আদায় করেছে ৫৮ কোটি টাকা (১৫ শতাংশ); ২৫০ কোটি টাকার বিপরীতে রূপালী ব্যাংক আদায় করেছে ৩৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা (১৫ শতাংশ) ও ১০০ কোটি টাকার বিপরীতে বিডিবিএল ব্যাংক আদায় করেছে ১৫ কোটি টাকার কিছু বেশি (প্রায় ১৬ শতাংশ)।
অপর দুটি ব্যাংকের মধ্যে ৮০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জনতা ব্যাংক আদায় করেছে ২৬৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা (৩৩ শতাংশ) ও ১৫৫ কোটি টাকার বিপরীতে বেসিক ব্যাংক আদায় করেছে ৪৩ কোটি টাকা (২৭ শতাংশ)।

এছাড়া অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণের খাত থেকেও ব্যাংকগুলোর আদায়ের পরিমাণ খুব নগণ্য। ২০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক তিন মাসে আদায় করেছে ৬ কোটি টাকা (৩ শতাংশ), ৫০ কোটি টাকার বিপরীতে জনতা ব্যাংক আদায় করেছে ৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা (১৯ শতাংশ); ৮০ কোটি টাকার বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংক আদায় করেছে ১৪ লাখ টাকা (১৮ শতাংশ); ৩৫ কোটি টাকার বিপরীতে রূপালী ব্যাংক আদায় করেছে ৯৫ লাখ টাকা (৩ শতাংশ); ২ কোটি টাকার বিপরীতে বেসিক ব্যাংক আদায় করেছে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা (৮৬ শতাংশ)।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩০২ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged