বিধি না মানলে শেয়ার বাজেয়াপ্ত : সেপ্টেম্বরে পদ হারাচ্ছেন বীমা কোম্পানির একই পরিবারের সদস্যরা

সময়: মঙ্গলবার, আগস্ট ৬, ২০১৯ ৫:৪৫:১১ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্যরা এককভাবে বা যৌথভাবে কোনো বীমা কোম্পানির ১০ ভাগের অতিরিক্ত শেয়ার ধারণ করতে পারবেন না। এছাড়াও বিধি চূড়ান্ত হবার তিন বছরের মধ্যে পদ ছেড়ে দিতে হবে ১০ শতাংশের অধিক শেয়ারধারণকারী পরিচালকের একই পরিবারের সদস্যদের। বিধি অনুযায়ী, অ-বিক্রিত শেয়ার ছেড়ে না দিলে বীমাকারীর সমুদ্বয় শেয়ার কর্তৃপক্ষের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। তবে শর্ত দেয়া হয়েছে, বাজেয়াপ্তির পূর্বে সংশ্লিষ্ট বীমাকারীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। এমন বিধান রেখে চূড়ান্ত হয় ‘বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ার ধারণ বিধিমালা ২০১৬’। বিগত ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়া এ বিধিমালাটির বেঁধে দেয়া তিন বছরের সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। ফলে এ সময়ের মধ্যেই পদ ছেড়ে দিতে হবে বীমা খাতের একই পরিবারের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারধারণকারী শতাধিক পরিচালককে।
উল্লেখ্য, বীমা আইন ২০১০ এ পরিবারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘পরিবার’ অর্থ স্বামী বা স্ত্রী, বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে, ভাই ও বোন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল সবাই অন্তর্ভুক্ত হবেন।
জানা যায়, বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ার ধারণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, বিধিমালা কার্যকর হবার তিন বছরের মধ্যে অতিরিক্ত শেয়ার পরিচালক এমন কোনো ব্যক্তির কাছে বিক্রি করবেন, যিনি তাদের পরিবারের সদস্য নন। অথবা এমন কোনো কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করবেন, যেখানে তার পরিবারের কোনো শেয়ার নেই।
আইডিআরএ বলছে, বীমা খাতে পারিবারিক আধিপত্য ও পরিচালকদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধের উদ্দেশ্যে বিধিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফলে শৃঙ্খলা খাতটিতে ফিরবে, ক্ষুণ্ন হবে না গ্রাহক স্বার্থও।
আইডিআরএ’র সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে পরিচালকরা পদ ছেড়েছেন কি না Ñতা দেখা হবে। আইনলঙ্ঘনকারী পরিচালকদের আমরা শুনানিতে ডাকবো। তাদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে বিধি অনুযায়ী অ-বিক্রিত শেয়ার বাজেয়াপ্ত করবে কর্তৃপক্ষ। আর এটি যেহেতু গেজেট আকারে প্রকাশিত, তাই সংশোধন করতে হলে সংসদে উত্থাপন করতে হবে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স’-এর পরিচালক হিসেবে আছেন মঞ্জুরুর রহমান। কোম্পানিটির পরিচালক হিসেবে আরো আছেন তার স্ত্রী সুরাইয়া রহমান, ছেলে জিয়াদ রহমান ও মেয়ে সাইকা রহমান।
‘ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স’-এর পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন দীন মোহাম্মদ। তার ছেলে মোহাম্মদ শোয়েব কোম্পানিটির চেয়ারম্যান। জামাতা মাজহারুল হকও আছেন কোম্পানিটির পরিচালক পদে।
‘প্রগতি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স’-এর পরিচালক আবদুল আওয়াল মিন্টু। তার ছেলে তাবিথ মোহাম্মদ আওয়ালও আছেন কোম্পানিটির পরিচালক পদে। প্রগতি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের একই পরিবারের দুই সদস্য পরিচালক হিসেবে আছেন তাদেরই মালিকানাধীন ‘প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স’-এ-ও।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স’, ‘ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স’ ও ‘প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স’ ছাড়াও ‘এশিয়া ইন্স্যুরেন্স’-এ একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন খালেদা বেগম এবং তার দুই সন্তান-ফারজানা আফরোজ ও মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার।
‘এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স’-এ একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন কাশমিরি কামাল, কাশফি কামাল ও নাফিসা কামাল। তাছাড়া সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের রুবিনা হামিদ, ফৌজিয়া মালেক, শাবানা মালেক ও কাজী আক্তার হামিদ একই পরিবারের সদস্য।
এ প্রসঙ্গে ‘সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স’-এর চেয়ারম্যান রুবিনা হামিদ বলেন, ‘আইন অনুযায়ীই আমাদের কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।’
‘এখানে আইনের কোনো লঙ্ঘন হয়নি’ বলে দাবি করেন তিনি।
‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স’-এর পরিচালক মোস্তফা কামাল। তার দুই মেয়ে তাহমিনা বিনতে মোস্তফা ও তানজিন বিনতে মোস্তফাও কোম্পানিটির পরিচালক। কোম্পানিটির পরিচালক পদে আরো রয়েছেন মোস্তফা কামালের ছেলে তানভীর মোস্তফা ও তার স্ত্রী বিউটি আক্তার।
এ প্রসঙ্গে বীমা খাতের মালিক পক্ষের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন বলেন, আইনে যা আছে তাই মানা উচিত। তবে ব্যাংক ও বীমা যেহেতু পাশাপাশি সেক্টর, তাই ব্যাংকগুলো কীভাবে চলছে Ñতা আমলে নেয়া উচিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো বীমা কোম্পানি আপত্তি জানায়নি। যদি জানায় তাহলে সংসদে উত্থাপনের মাধ্যমে তা সংশোধন করা যায় কি না ভেবে দেখা হবে।’

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৩৩২ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged