বীমা শিল্পকে বাঁচাতে হলে মোটর বীমা চালু করতে হবে

সময়: সোমবার, জানুয়ারি ২, ২০২৩ ২:৫০:১৯ অপরাহ্ণ


মোঃ রফিকুল ইসলাম : বীমা ব্যবসা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী প্রসার লাভ করেছে। ব্যবসায়ী, পেশাজীবিসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ বীমার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে। বীমা ছাড়া মানুষের জীবন ও ব্যবসা-বাণিজ্য ঝুঁকির সম্মুখিন। উন্নত বিশ্বে বীমার সাহায্য ছাড়া মানুষ এক মুহূর্তও চলতে পারে না, বীমার প্রতি মানুষের সুদৃঢ় আস্থা রয়েছে। আমাদের দেশেও ধীরে ধীরে সেই আস্থা আনতে হবে। তবে সেটা নির্ভর করে বীমা কোম্পানীর উপর। কারণ বীমা কোম্পানীগুলো বীমা গ্রাহকদের সঠিক সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের দেশের মানুষ সচেতন নয়। কারণ আমাদের দেশে বীমাকৃত সম্পদের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কোন কোন বীমা কোম্পানী বীমা ঝুঁকির টাকা পরিশোধে গড়িমসি করে। বীমা ঝুঁকি গ্রহণে মানুষ বিশ্বাস ও আস্থা পাচ্ছে না, যারফলে বীমার প্রতি মানুষের অনীহা এবং আস্থার অভাব দেখা যায়। উন্নত বিশ্বসহ পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে বীমা খাত উল্লেখযোগ্য আর্থিক অবদান রাখতে পারেনি।

এর কারণ গাছ লাগালে প্রথমত চারা হয়। সেই চারা গাছের পাতা না গোজাতে আগেই যদি পাতা খেয়ে ফেলা হয়, সেই ক্ষেত্রে গাছ হবে কিভাবে। আমাদের দেশে বীমা পলিসি নেয়ার আগেই অনৈতিক কমিশন দেয়া নেয়া নিয়ে দর কষাকষি চলে, যে যত বেশী কমিশন দিতে পারবে, সে তত বেশী বীমা পলিসি করতে পারবে, যারফলে ঝুঁকিকৃত সম্পদের ক্ষতি সাধিত হলে বীমা ঝুঁকির আবরিত সম্পদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে বীমা কোম্পানীগুলো গড়িমসি করে। এমনও দেখা যায় বীমাকৃত সম্পদের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে আইন আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

মানুষ যে আশা করে বীমা পলিসি গ্রহণ করে সেই আশা নিরাশা হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমিসহ সকল বীমা প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করতে হবে। দেশের বীমা শিল্প সঠিকভাবে কাজ করতে পারলে জিডিবিতে আশানুরূপ অবদান রাখতে পারবে।

মরার উপর খারা গা। আমরা এমনেতেই মরে যাচ্ছি তার উপর আবার খরগ চাপিয়ে দেয়া। উদারহরণস্বরুপ: আমাদের দেশের মানুষ এমনেতেই বীমা কি, কেন বীমা করতে হবে তা জানতে চায় না অথবা জানার চেষ্টাও করে না। তার উপর মোটর বীমা বন্ধ করা হয়েছে, যারফলে কোটি কোটি টাকা আহরণ থেকে বীমা কোম্পানীসমূহ বঞ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। বিশ্বের এমন কোন দেশ নেই, যে দেশে মোটর বীমা করা হয় না, শুধু আমাদের দেশেই বড় বড় জ্ঞানি গুনিরা মোটর বীমা বাতিল করে দিয়েছে।

বিশ্বের প্রতিটি দেশেই গাড়ীর ইন্স্যুরেন্স ছাড়া গাড়ী চালানো ট্রাফিক আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। তাই গাড়ী কেনার সময় গাড়ীর ইন্স্যুরেন্স করা বাধ্যতামূলক। গাড়ীর বীমা করা থাকলে গাড়ীর বা গাড়ীর মালিকের, এমনকি তৃতীয় কোন ব্যক্তি গাড়ীর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হলে ঐ ব্যক্তিও ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকে। গাড়ীর ইন্স্যুরেন্স করা থাকলে, গাড়ী চালক, পথযাত্রী এমনকি গাড়ীর ক্ষতিপূরণও বীমা কোম্পানী দিয়ে থাকে।

বীমা আইন অনুযায়ী কোন গাড়ীর ইন্স্যুরেন্স করা থাকলে ঐ গাড়ীর দ্বারা তৃতীয় পক্ষের কারো ক্ষতি সাধিত হলে গাড়ীর মালিক অথবা তৃতীয় পক্ষকে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী বীমা আইন অনুযায়ী আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে ক্ষতির দায়মুক্ত হতে পারে। আমাদের দেশে অহরহ গাড়ীর দ্বারা মানুষ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে গাড়ীর মালিক ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য। তবে ঐ গাড়ীর যদি বীমা করা থাকে সেক্ষেত্রে বীমা কোম্পানীর ঐ গাড়ী ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। আমাদের মনে রাখতে হবে গাড়ীর ইন্স্যুরেন্স মানে ঝুঁকি গ্রহণ করা। অতএব গাড়ী দুর্ঘটনায় পতিত হলেই গাড়ীর মালিক সঠিকভাবে কাগজপত্র উপস্থান করতে পারলেই বীমা কোম্পানী থেকে ক্ষতিপূরণ পাবে। তাই মোটর বীমা ছাড়া গাড়ী চালানো আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
গাড়ীর ইন্স্যুরেন্স দুই ভাবে করা হয়। (১) কম্প্রিহেনেসিভ বীমা পলিসি (২) তৃতীয় পক্ষ বীমা পলিসি।

কম্প্রিহেনসিভ বীমা পলিসিঃ

যে বীমা কোম্পানী থেকে গাড়ীর প্রথম পক্ষ বা কম্প্রিহেনসিভ বীমা পলিসি গ্রহণ করা হয়ে থাকে ঐ গাড়ী যদি কখনো দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঐ বীমা কোম্পানী গাড়ীর মালিককে ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। এছাড়াও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে গাড়ীর ক্ষতি হলে প্রথম পক্ষের আওতাধীন গাড়ীর মালিককে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়।

তৃতীয় পক্ষ বীমা পলিসিঃ

কোন গাড়ী যদি কেবলমাত্র তৃতীয়পক্ষ বীমা পলিসির আওতাধীন হয় সেক্ষেত্রে গাড়ীর দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে গাড়ীর মালিককে কোন ধরণের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় না। তবে গাড়ীর মাধ্যমে তৃতীয় কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধিত হলে কেবল সেই ক্ষতির ক্ষতিপূরণ বীমা কোম্পানী দিতে বাধ্য।

উন্নত বিশ্বে এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশেও রাস্তায় চলাচলে গাড়ীর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক। সেখানে কার স্বার্থে বা কি কারণে মোটর গাড়ী, মোটর বাইকের মতো যান বাহনের মোটর ঝুঁকি বাতিল করা হলো। আমাদের বীমা উন্নয়ণ ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন, ইন্স্যুরেন্স একাডেমি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কেন চুপ করে থাকে তা বোধগম্য নহে। আজকে যদি মোটর ইন্স্যুরেন্স থাকতো তাহলে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীগুলো আশানুরূপ লাভ করতে পারতো। সরকারও কোটি টাকার ভ্যাট ও কর পেত। দেশ ও জাতি আর্থিক লাভবান হতো।

আজকে ডলারের সংকট, ব্যাংকে এলসি খোলা যায় না। বীমা কর্মীদের দূরাবস্থায় পড়তে হয়েছে। তাদের আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। যদি মোটর বাইক ও মোটর গাড়ী জাতীয় সকল যানবাহনের বীমা করা বাধ্যতামূলক থাকতো তাহলে বীমা কর্মীরা কিছু না কিছু লাভবান হতে পারতেন যারফলে কিছুটা হলে স্বস্তি ফিরে পেতো।

পরিশেষে, সরকার প্রধানের কাছে আবেদন আবার মোটর বীমা চালু করার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় রাস্তায় চলাচলে যানবাহনে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে, বিঘ্নতা সৃষ্টি হবে। সরকার মূল্যবান রাজস্ব হারাবে, বীমা কর্মীরা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মোটর বীমা ফিরে আসুক সেই কামনা রেখেই লেখা শেষ করছি। লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, পি.এস. টু সিইও এন্ড চেয়ারপারসন, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড।

Share
নিউজটি ২০১ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged