editorial

রপ্তানি আয়ের নিম্নমুখি প্রবণতা রোধ করতে হবে

সময়: বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০ ৫:১৫:১৮ অপরাহ্ণ


গত অর্থ বছরে(২০১৮-’১৯) পণ্য রপ্তানি ক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতহাসে প্রথমবারের মতো রপ্তানি আয় ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার অতিক্রম করে যায়। ইতোপূর্বে আর কখনোই বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এতটা উচ্চ মাত্রায় উন্নীত হয়নি। চীন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধ সত্বেও রপ্তানি আয়ের এই প্রবৃদ্ধি সংশ্লিষ্টদের মনে আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে সেই আশা তিরোহিত হতে চলেছে। চলতি অর্থ বছরের দ্বিতীয় মাস অর্থাৎ আগষ্ট,২০১৯ থেকে থেকে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে নেতিবাচর প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অর্থ বছরের প্রথম ৭মাসেও সেই নেতিবাচক প্রবণতা অতিক্রম করা সম্ভব হয় নি। বরং আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি আয়ের এই নেতিবাচক প্রবণতা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর দায়িত্বশীল সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবদা প্রকাশ করা হয়েছে, অর্থ বছরের প্রথম ৭মাস, অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ২৯১কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য। আগের বছর একই সময়ে পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ২ হাজার ৪১৭ কোটি ৯৫ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৭মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ১২৬ কোটি ১লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা ৫দশমিক ২১ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাই,২০১৯ এ রপ্তানি আয় ইতিবাচক ধারায় ছিল। কিন্তু তার পরের মাস থেকেই রপ্তানি আয় কমতে শুরু করে। আগমীতে রপ্তানি আয় কোন্ পর্যায়ে উন্নীত হয় তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তারা মনে করেন, একই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রপ্তানি খাতের অবদান কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। এই খাত থেকেই আসছে বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ। যদিও জাতীয় অর্থনীতিতে এই খাতের মূল্য সংযোজনের হার তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। কারণ বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বেশির ভাগই আমদানিকৃত কাঁচামাল নির্ভর। শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল ও ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি বাদ মোট রপ্তানি আয়ের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ বিদেশে চলে যায়। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের স্থানীয় কাঁচমাল নির্ভর পণ্য উৎপাদনের প্রতি বেশি জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে নতুন নতুন রপ্তানি গন্তব্য খুঁজে বের করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য সামান্য কয়েকটি দেশ ও সীমিত সংখ্যক পণ্যের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পজাত সামগ্রি মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ দখল করে আছে। আমাদের রপ্তানি পণ্য তালিকায় নতুন নতুন পণ্য স্থান দিতে হবে। একই সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্যের নতুন গন্তব্য খুঁজে বের করতে হবে। চীন-মার্কিন বাণিজ্য সংঘাতের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি,বিশেষ করে রপ্তানি বাণিজ্য বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমাদের এখনই জরুরি ভিত্তিতে স্থানীয় কাাঁচামাল নির্ভর নতুন নতুন রপ্তানি পণ্য এবং সম্ভাবনাময় রপ্তানি অঞ্চল খুঁজে বের করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্য যাতে আরো প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

Share
নিউজটি ২৯৬ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged