ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স

সিইও পদে থাকা নিয়ে আশঙ্কায় হেমায়েত উল্ল্যাহ

সময়: রবিবার, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯ ১০:২২:০৬ পূর্বাহ্ণ


অনুপ সর্বজ্ঞ : ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হেমায়েত উল্যাহ বীমা কোম্পানিতে চাকরি করে ‘অবৈধভাবে’ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই সম্পদকে বৈধ করতে গৃহিণী ফরিদা আক্তারের নামে আয়কর নথি খুলে মৎস্য চাষ, গবাদি পশু পালন ও দুধ বিক্রি বাবদ আয় দেখিয়েছেন তিনি।
ফারইস্ট লাইফ সিইও’র এ অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে হেমায়েত উল্যাহ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি মামলার করার অনুমোদন দিয়েছে দুদক। আর এতে ফারইস্ট লাইফের সিইও পদে হেমায়েত উল্ল্যাহর থাকা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৪-০৫ করবর্ষ থেকে ২০১৭-১৮ করবর্ষে হেমায়েত উল্ল্যাহর স্ত্রী ফরিদার আয়কর নথি বিশ্লেষণ করে ছয় কোটি ৪২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৪৮ টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের’ তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই মামলায় ফরিদা আক্তারকে প্রধান আসামি এবং তার স্বামী হেমায়েত উল্যাহকে ‘অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করা হবে।
বীমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী অপসারণ প্রবিধানমালা অনুযায়ী, কোন কোম্পানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র পূর্বানুমোদনক্রমে তার সিইওকে অপসারণ করতে পারবে যদি সে এমন কোন কাজ করে যা বীমা কোম্পানির জন্য ক্ষতিকর হয়। এছাড়া সিইও যদি এমনভাবে নিজেকে পরিচালনা করেন বা নিজের পদকে অপব্যবহার করেন যা আইন বা এই প্রবিধানের উদ্দেশ্য, পলিসি গ্রাহক, শেয়ারহোল্ডার বা জনস্বার্থকে ব্যাহত করে। প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে সিইও নিজে, তার স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান, পিতা বা মাতা , ভাই বা বোনের মাধ্যমে এমন কোন কার্যকালাপে জড়িত হন যার দ্বারা বীমা কোম্পানির স্বার্থের ব্যাঘাত হতে পারে তাহলেও তাকে অপসারণ করা যতে পারে।
প্রবিধানমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, উপরোক্ত কারণে সিইও’কে তার পদে বহাল থাকার অযোগ্য মনে করলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এর যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে তার দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতে পারবেন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে বীমা কোম্পানি তদন্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি আইডিআরএ’র কাছে দাখিল করবেন এবং আইডিআরএ বিষয়টি বিবেচনা করে ১৫ দিনের মধ্যে তার সিদ্ধান্ত জ্ঞাপন করবে। শুধু তাই নয়, এক্ষেত্রে অপসারিত কোন সিইও বীমা কোম্পানির অন্য কোন পদে নিয়োজিত বা পুনঃনিয়োজিত হতে পারবেন না।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ’র সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিনকে বলেন, দুদক যখন কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা অনুমোদন করে তখন তা অবশ্যই ভিত্তিহীন নয়। হেমায়েত উল্ল্যাহর স্ত্রী যদি এ মামলার মূল আসামি হন তাহলে তার এ আয়ের উৎস কি। একটি বীমা কোম্পানির সঙ্গে বীমা গ্রাহক, বীমাকারী ও জনস্বার্থ জড়িত। তাই আমার মন্তব্য হলো হেমায়েত উল্ল্যাহকে তার দায়িত্ব পালন থেকে এখন বিরত রাখা উচিত। বিষয়টি আইডিআরএ তদন্ত করে দেখছে।
এর আগে ২০১৬ সালের শেষের দিকে ফারইস্ট লাইফ সিইও’র সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকাতেই তার একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও ধানমন্ডিতে একটি প্যাকেজিং কারখানাসহ গাজীপুরের বোর্ডবাজার, গাইবান্ধা, নোয়াখালী ও ভোলায় একাধিক কারখানার মালিক হেমায়েত উল্ল্যাহ। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। হেমায়েত উল্লাহ ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সিইও পদে নিয়োগ পান ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সিইও পদে তিনি মোটা অংকের বেতন-ভাতা পান। কিন্তু শুধু চাকরির এ আয়ের ওপর ভিত্তি করে এত সম্পদ অর্জন সম্ভব কিনা, সে বিষয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
জানাতে চাইলে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও হেমায়েত উল্ল্যাহ বলেন, চাকরি ছাড়াও আমার নিজের অন্য ব্যবসা রয়েছে। সেই ব্যবসা থেকে যা আয় হয় তা আমি নানা জায়গায় বিনিয়োগ করি। আর যে মামলার কথা বলা হচ্ছে তার মূল আসামি আমার স্ত্রী, আমাকে সহযোগী দেখানো হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন তাই আমি কোন মন্তব্য করতে চাইনা।
হেমায়েত উল্ল্যাহ বলেন, দুদক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদের বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। আর আইনের অনেক বিষয় আছে যা আমি জানিনা। তাই কোথাও আমার ভুল হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৭৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৭ কোটি ৪৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৫১টি।এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালক ৩২ দশমিক ৬৯ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ৪০ দশমিক ১২, বিদেশি বিনিয়োগকারী ৩ দশমিক ৫৯ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে বাকি ২৩ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ার।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪৯৭ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged