bank

সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী : তিন এমডি’ই পুনঃনিয়োগ পেলেন

সময়: বুধবার, আগস্ট ২১, ২০১৯ ৪:২১:৪২ পূর্বাহ্ণ


তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে দায়িত্ব পালনরত তিন ব্যবস্থাপনা পরিচালককেই (এমডি) আগামী তিন বছরের জন্য পুনঃনিয়োগ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এক্ষেত্রে রূপালী ব্যাংকের এমডি মো. আতাউর রহমান প্রধানকে সোনালী ব্যাংকে, সোনালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে রূপালী ব্যাংকে দেয়া হয়েছে। আর অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস উল ইসলামকে অগ্রণী ব্যাংকেই রাখা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল স্বাক্ষরিত নিয়োগ সংক্রান্ত চিঠি স্ব স্ব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বরাবর পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনটি ব্যাংকেরই বোর্ড সচিবালয় এ সংক্রান্ত চিঠি প্রাপ্তির তথ্য নিশ্চিত করেছে। আইন অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তিপত্র নিয়ে নিজ নিজ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়োগ দেবে; যদিও এটা একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদে মো. আতাউর রহমান প্রধান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, রূপালী ব্যাংক লিমিটেডকে ০৩ (তিন) বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগে সরকারের সম্মতি নির্দেশক্রমে জ্ঞাপন করা হলো। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী তার নিয়োগের বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’ একই ভাষায় চিঠি দেয়া হয়েছে অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বরাবর।
এর আগে ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট সোনালী ব্যাংকে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ও অগ্রণী ব্যাংকে শামস উল ইসলামকে এবং ২৭ আগস্ট রূপালী ব্যাংকে আতাউর রহমান প্রধানকে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। এ হিসেবে আগামীকাল সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকের এমডির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর ২৭ আগস্ট রূপালী ব্যাংকের এমডির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কয়েকদিন ফাঁকা থাকছে সোনালী ব্যাংকের এমডি পদ। আর সোনালী এমডিকে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতেও সাতদিন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
আতাউর রহমান প্রধান সোনালী ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। ব্যাংকটিতে তিনি সর্বশেষ উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপরে রূপালীতে এমডি পদে নিয়োগের আগে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এমডি ছিলেন আতাউর রহমান। আর ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ও শামস উল ইসলাম অগ্রণী ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। এই দুজনও ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ছিলেন। সোনালী ও অগ্রণীতে নিয়োগ পাওয়ার আগে মাসুদ ছিলেন কর্মসংস্থান ব্যাংকের এমডি পদে; আর শামস উল ইসলাম ছিলেন আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের এমডি পদে।
গত তিন বছর সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিনজনই ভালো করেছেন। তিনটি ব্যাংক নিয়ে সরকারকেও নতুন কোনও অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি, শুনতে হয়নি সমালোচনা। এ কারণেই তাদের কাজের প্রতিদান হিসেবে পুনঃনিয়োগ দিল সরকার। পুরনোদের অর্জন ভালো হওয়ায় সরকারও নতুন কাউকে দায়িত্ব দিয়ে ‘সম্ভাবনার ঝুঁকি’ নিতে চায়নি।
জানা গেছে, অর্থমন্ত্রণালয় তিনটি ব্যাংকের এমডি পদে নিয়োগের জন্য ৫ জনের যে সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছিল সেখানে এক নাম্বারে ছিল রূপালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধানের নাম। ২ নাম্বারে ছিল অগ্রণী ব্যাংকের এমডি শামস উল ইসলামের নাম। আর ৩ নাম্বারে সোনালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের নাম। চারে ও পাঁচে ছিলেন হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের এমডি দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এমডি মাহতাব জাবিন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মূলত অর্জন ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ক্রমানুসারে এই তালিকা সাজিয়েছিল মন্ত্রণালয়। সেক্ষেত্রে অর্জন ও কর্মদক্ষতায় সবচেয়ে এগিয়ে থাকায় রূপালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধানকে সোনালী ব্যাংকের দায়িত্ব দিল সরকার। সরকারি বেতন কাঠামো অনুযায়ী সোনালী ব্যাংকের এমডি অতিরিক্ত সচিবের পদমর্যাদা পেয়ে থাকেন। আর অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিরা যুগ্ম-সচিবের পদমর্যাদা পান।
তিনটি ব্যাংকেরই ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের গত তিন বছরের অর্জন ও কর্মদক্ষতার ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, টানা প্রায় এক দশক লোকসানে ছিল রূপালী ব্যাংক। লোকসানের দায়ে এক সময়ে সরকার ব্যাংকটি বিক্রি করে দেয়ারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেই ব্যাংকটি গত ২ বছরে সরকারকে ৮১৮ কোটি টাকা মুনাফা দিয়েছে। এ ব্যাংকটির মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪শ শতাংশ।
ব্যাংক খাতের বিদ্যমান সংকটেও আমানত, বিনিয়োগ, আমদনি-রপ্তানি বাণিজ্য, মোট সম্পদ, পরিচালনা মুনাফা, নিট মুনাফা, শেয়ারপ্রতি আয়, সম্পদের বিপরীতে আয়সহ প্রায় সব সূচকে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে রূপালী ব্যাংক। অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায়, মূলধন সংরক্ষণের হার, মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্প্রসারণ, সুশাসনে উন্নতি, গ্রাহকসেবার মানের উন্নয়ন, ব্যাংকের ডিজিটাল কার্যক্রমে সন্তোষজনক অগ্রগতি করেছে। কমেছে লোকসানি শাখাও। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক ৩৪৬ কোটি টাকা লোকসান করেছিল। সেখানে গত তিন বছরে ব্যাংকটি সরকারকে মুনাফা দিয়েছে ৪ হাজার ১০১ কোটি টাকা। একইভাবে অগ্রণী ব্যাংকের মুনাফায় ৩২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত তিন বছরে ব্যাংকটি সরকারকে মুনাফা দিয়েছে ২ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। অথচ ২০১৫ সালে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল মাত্র ১৫১ কোটি টাকা।

দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ১১৩০ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged