দুই বিমার শেয়ার কারসাজি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি

সময়: রবিবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩ ৮:২২:৫৩ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দুই বিমা কোম্পানির শেয়ার কারসাজি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। কোম্পানিগুলো হলো- ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স এবং এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স।

জানা যায়, গত কয়েক কর্মদিবসে কোম্পানি দুটির শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি। যে কারণে কোম্পানি দুটির শেয়ার কারসাজি করে এই বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

কোম্পানিগুলোর কর্তৃপক্ষ বলেছে, কোম্পানি দুটির শেয়ারদর বৃদ্ধির পেছনে কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গুজব ছড়িয়ে কোম্পানি দুটির শেয়ারদর নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। যা কোম্পানি দুটির শেয়ারে বিনিয়োগ সুখবর নয়।

অন্যদিকে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স এবং এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বৃদ্ধির বিযয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজরে পড়েছে । যে কারণে কোম্পানি দুটির শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৬ কর্মদিবসে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৩১.২৫ শতাংশ। অপরদিকে গত ১৫ কর্মদিবসে এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ২৮.৩০ শতাংশ।

গত বৃহস্পতিবার ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর দাঁড়ায় ৬৩ টাকা। গত ৩০ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৪৮ টাকা। গত ৬ কর্মদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১৫ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার ১৪৪টি। সেই হিসাবে গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে হয়েছে ২৭১ কোটি ৫৯ লাখ ৩৯ হাজার ৭২ টাকা। যা গত ৩০ আগস্ট মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে ছিল ২০৬ কোটি ৯২ লাখ ৮৬ হাজার ৯১২ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে বেড়েছে ৬৪ কোটি ৬৬ লাখ ৫২ হাজার ১৬০ টাকা।

অপরদিকে, গত বৃহস্পতিবার এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর দাঁড়ায় ৬৮ টাকা। গত ১৬ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৫৩ টাকা। গত ১৫ কর্মদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১৫ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার। সেই হিসাবে গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে হয়েছে ২৮৮ কোটি ৪ লাখ ১২ হাজার টাকা। গত ১৬ আগস্ট মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে ছিল ২২৪ কোটি ৫০ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে বেড়েছে ৬৩ কোটি ৫৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

শেয়ার দুটি নিয়ে কারসাজির অভিযোগ করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরে ইস্টার্ন ইন্সুরেন্স এবং এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে একটি চক্র কারসাজি করে শেয়ারদর বৃদ্ধি করেছে। ফলে কয়েকদিনের মধ্যে কোম্পানিগুলোর শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১৫ টাকা। এই ধরনের দর বৃদ্ধি ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়ানো হয়েছে। সামনে আরও বাড়বে এই নিয়েও মতিঝিল এলাকার সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে গুঞ্জন চলছে।

যদিও কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ জানতে কোম্পানিগুলোকে গত বৃহস্পতিবার ডিএসই নোটিস পাঠিয়েছিল। এর জবাবে কোম্পানি দুটি জানিয়েছে, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দুটির দর বাড়ছে।

এদিকে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স এবং এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বৃদ্ধির প্রসঙ্গেনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিগুলো শেয়ারদর বৃদ্ধি বিএসইসির কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি। তাই কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়ার পেছনে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখবে কমিশন। তিনি আরও বলেন, শেয়ারগুলোর দর বাড়ানোর ক্ষেত্রে যদি কোন অনিয়ম পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের মুনাফা কমেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৫৯ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে (এপ্রিল-জুন) শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৮২ পয়সা। ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৫৩ টাকা ২৪ পয়সা। আলোচ্য সময় কোম্পানিটির ক্যাশ ফ্লো ছিল ২৬ পয়সা।

অর্থবছরের দুই প্রান্তিকে (জানুয়ারি-জুন) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৩০ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৯৮ পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন একশ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ৪৩ কোটি ১১ লাখ টাকা।

এদিকে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের মুনাফা কমেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৮৯ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে (এপ্রিল-জুন) শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ৯৩ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকা ৭ পয়সা। আলোচ্য সময় কোম্পানিটির ক্যাশ ফ্লো ছিল ১ টাকা ৩২ পয়সা।

অর্থবছরের দুই প্রান্তিকে (জানুয়ারি-জুন) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৪ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ২ টাকা ২ পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন একশ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ৪২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

 

Share
নিউজটি ১০২ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged