বিশ্লেষকদের অভিমত

পাঁচ কারণে পুঁজিবাজারে পতন

সময়: বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৯ ১২:৩১:২৩ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে গত কয়েকদিন ধরে টানা পতন অব্যাহত রয়েছে। পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। সংশ্লিষ্টদের মতে, কয়েকটি কারণে বাজারে পতন অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ ফোন-বিটিআরসি দ্বন্ধ, বিদেশী বিনিয়োগ নেতিবাচক প্রভাব, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিস্ক্রিয়তা, পিপলস লিজিং অবসায়ন, তারল্য সঙ্কট অন্যতম। মূলত এসব কারণেই বাজারে পতন অব্যাহত রয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর তলানিতে ঠেকবে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বিশ্লেষকদের মতে, এর আগেও গ্রামীণ ফোনের পাওনা নিয়ে বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এবারও একই কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রির প্রবণতা বেশি থাকায় পতন ত্বরান্বিত হয়েছে। একই সঙ্গে বাজারে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের রেশ এখনো কাটেনি। এ অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সাইড লাইনে অবস্থান করছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করলে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
এ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, ঘুওে ফিরে একই কারণে বাজারে পতন অব্যাহত রয়েছে। গ্রামীণ ফোন- বিটিআরসি’র দ্বন্ধে বাজারে পতন শুরু হয়েছে। এছাড়া বিদেশীদের হাতে থাকা শেয়ার ছেড়ে দেয়া বাজারে এক ধরনের আতঙ্ক রয়েছে। আর কত পয়েন্ট নিচে নেমে বাজার ফের ঘুরে দাঁড়াবে তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পুঁজিবাজারে গত ৬ কার্যদিবস টানা দরপতন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গত ২৭ আগষ্ট প্রধান সূচক ৫ হাজার ১৭৮ পয়েন্টে অবস্থান করেছিল এবং লেনদেন হয়েছিল ৪৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। গতকাল সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৮৬ দশমিক ৩৭ পয়েন্টে এবং লেনদেন হয়েছে ৩৭৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে সূচক কমেছে ১৯২ পয়েন্ট এবং লেনদেন কমেছে ৯২ কোটি টাকার বেশি। এভাবে দরপতনের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তারা প্রতিদিন পুঁজি হারাচ্ছে। বাজারের দরপতন রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে আগস্ট মাসে বিদেশিরা ১৭৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছেন। আর এর বিপরীতে শেয়ার বিক্রি করেছেন ২৭৯ কোটি ৩২ লাখ টাকার। আলোচ্য সময়ে ১০২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছেন।
আলোচ্য মাসে বিদেশিদের পোর্টফোলিওতে মোট ৪৫৬ কোটি ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা এর আগের মাসে লেনদেন ছিল ৭৮৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে পোর্টফোলিওতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে ৩২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ ‘দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’কে বলেন, নানা কারণে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়েছিল। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। তাছাড়া বর্তমান সরকার দেশে অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। এসব প্রজেক্টের অর্থ ব্যাংক থেকে না নিয়ে পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলন করার পলিসি দরকার। এসব প্রজেক্ট পুঁজিবাজারে আসলে বাজার আরো গতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা স্থিতিশীল বাজারের জন্য সহায়ক হবে বলে মনে করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের কারণে সৃষ্ট জটিলতা পুঁজিবাজাওে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যার ফলে বাজারে তারল্য সঙ্কট বিরাজ করছে। একই সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যাংকগুলো থেকে উঠিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার ঘোষণাও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তো অনেকটাই নিস্ক্রিয় রয়েছে। যা পতনকে আরো তরান্বিত করেছে।
তারা আরো বলছেন, বর্তমান সরকারের আমলে বড় বড় মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। অবকাঠামো নির্মান হচ্ছে। এসব প্রজেক্ট ও অবকাঠামো নির্মাণে ব্যাংকে না গিয়ে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য যদি কোনো পলিসি করে দেয়া হতো, তাহলে বাজারে বড় বড় কোম্পানি বাজারে আসতো। এছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাজারে আসলে বাজার আরো গতিশীল হতো। বাজারকে স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনতে বড় ও বহুজাতিক কোম্পানির তালিকাভুক্তির বিকল্প নেই। এসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বাজার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে বলে মনে করছেন তারা।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

Share
নিউজটি ৪২৫ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged