বিএসইসির ফৌজদারি মামলায় ফেঁসে যাচ্ছে নূরানী ডাইং

সময়: বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২ ১২:১৬:৪৩ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক: নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ফৌজদারি মামলায় ফেঁসে যাচ্ছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি নূরানী ডাইং অ্যান্ড সুয়েটার লিমিটেড। আইপিও ফান্ড আত্মসাৎ এবং আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতির কারণে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এরআগে কোম্পানিটির তদন্তে নামে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তদন্তে বিভিন্ন প্রতারণার কাযক্রম উঠে আসে। যার প্রেক্ষিতে বিএসইসি মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির ৮৪০ তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ জথ্য জানানো হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতউল-ইসলাম।

বিএসইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নূরানী ডাইং অ্যান্ড সুয়েটার লিমিটেড এর আইপিও ফান্ড আত্মসাৎ এবং আর্থিক প্রতিবেদন জালিয়াতির ওপর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃক পরিচালিত পরিদর্শন রিপোর্ট ও পরবর্তীতে কমিশন কর্তৃক পরিচালিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে নিন্মোক্ত বিষয়সমূহ উদঘাটিত হয়ঃ

নূরানী ডাইং অ্যান্ড সুয়েটার লিমিটেড এর ২০১৬ ও ২০১৭ এর নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও প্রকাশিত প্রসপেক্টাস অনুযায়ী এবি ব্যাংকের নিকট কোম্পানিটির ব্যাংক দায় (দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ) যথাক্রমে ৫৭.২০ কোটি ও ৪২.৯৫ কোটি টাকা উল্লেখ ছিল। কিন্তু পরিদর্শক ও তদন্ত কমিটি কর্তৃক সংগৃহীত ব্যাংক হিসাব বিবরণী অনুযায়ী প্রকৃত ব্যাংক দায়ের পরিমাণ ১৬৮.৯৬ (২০১৮) কোটি টাকা, ১৯২.৬৮ (২০১৯) কোটি টাকা এবং ২১৬.৪১ (২০২০) কোটি টাকা দায় রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। এতে কোম্পানিটির ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮,২০১৯ এবং ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা গােপন করা হয় যার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) চাঁদা অংশ গ্রহণকারী গণ বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন।

কোম্পানিটি ২০১৭ সালে আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত ৪৩ কোটি টাকা বিভিন্ন কারসাজি স্কিম/ডিভাইসের মাধ্যমে যথা ব্যাংক বিবরণী জালিয়াতি, এমটিডিআর-এর নগদায়ন এবং কোন প্রকার কাজ/পরিষেবা ছাড়াই স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলিকে (সহযোগি প্রতিষ্ঠান) অর্থ প্রদান করে ৪১.১৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে, যার মাধ্যমে কমিশনের আইপিও অনুমোদনের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে।

কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনায় জড়িত ৩টি ইস্যু ম্যানেজার কর্তৃক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রোল ২০১৫ এর রোল-৪(১)(ডি) অনুযায়ী ডিউ ডেলিয়েন্স সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে প্রসপেক্টাস (প্রস্পেক্টাচ) ও এতদসংক্রান্ত তথ্যের সত্যতা (ট্রু অ্যান্ড ফায়ার) নিশ্চয়তা প্রদান করে এবং যা পরবর্তীতে কোম্পানিটি প্রকৃত আর্থিক অবস্থা গোপন করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। এতে সাধারণ বিনিয়ােগকারী ও প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) চাঁদা অংশ গ্রহণকারী গণ বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন।

২০১৭ সালে আইপিও ইস্যুকালীন সময়ে সংবিধিবদ্ধ অডিট হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত অডিট ফার্ম কর্তৃক আর্থিক প্রতিবেদনের উপর এতদসংক্রান্ত ক্লিন রিপোর্ট (অযোগ্য মতামত) প্রদান করার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) চাঁদা অংশগ্রহণকারীগণ বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন।

২০২০ ও ২০১৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী ও প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ইস্যুয়ার কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত হিসাব বিবরণীর রপ্তানী আয়, বিক্রয় ও দেনাদার এর স্বপক্ষে বিভিন্ন প্রমাণপত্র যথা, পিআরসি, টিডিএস সার্টিফিকেট, ব্যাংক স্টেটম্যান্ট ইত্যাদি কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে উক্ত সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয় বলে প্রতীয়মান হয়। এই সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অডিটরস কর্তৃক এতদসংক্রান্ত ক্লিন রিপোর্ট প্রদান করে উক্ত আর্থিক প্রতিবেদনের নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়। এছাড়া উক্ত সময়ে কোম্পানীটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে সাধারণ বিনিয়ােগকারীগণ বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন।

পরবর্তীতে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বিও হিসাবে ধারণকৃত ৩০. ৯৩% শেয়ার যমুনা ব্যাংক ক্যাপিটাল ম্যানেজম্যান্ট লিমিটেড এর নিকট জামানত হিসেবে জমা প্রদান করে মার্জিন ঋণ গ্রহণ করে তসরুফ করে। পরবর্তীতে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের জানমানতকৃত শেয়ারের (৩০, ৯৩%) বিপরীতে প্রাপ্ত মার্জিন ঋণ খেলাপীতে পরিণত হয়।

উপরোক্ত বিষয়ে কমিশনের তদন্ত কমিটি ও ডিএসই’র রিপোর্টের আলোকে এনডিএসএল কোম্পানী, উদ্যোক্তা ও পরিচালকগণ, সংশ্লিষ্ট ইস্যু ম্যানেজার এবং উক্ত সময়ে সংবিধিবদ্ধ অডিটর ও আইপিও ফান্ড ইউটিলাইজেশন অডিটর এর বিরুদ্ধে শেয়ার হোল্ডারদের বিভিন্নভাবে প্রতারিত করা ও প্রতারণা কার্যক্রমে সহযোগীতা করায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ওডিয়েন্স ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭ এর (এ), (বি), (সি) ও (ডি) উপধারাসমূহসহ অন্যান্য সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘিত হয় বিধায় ইনফোর্সম্যান্ট অ্যাকশন এবং ফৌজদারি মামলা গ্রহনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

 

Share
নিউজটি ১৮৭ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged