বিডি ফাইন্যান্সের বিদেশি বিনিয়োগ খতিয়ে দেখতে কমিটি

সময়: রবিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২১ ১২:২৪:০৬ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারি প্রতিষ্ঠান এসআইজি’র সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে বিশদ জানতে চেয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

ডিএসই চিঠি পেয়ে রোববার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটি বিএসইসির কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ডিএসইর চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) এম সাইফুর রহমান মজুমদার।

ডিএসই এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। যেখানে এপ্রিল মাসে ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাসে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক প্রসঙ্গে বিভিন্ন তথ্য ও খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাইসার হামিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুই অংশীদার তিনটি পদ্ধতিতে কাজ করছে এবং বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে ডকুমেন্টেশনের লিগ্যাল ভেটিং, বিভিন্ন টেকনিক্যাল শর্ত ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সে ইক্যুইটি বিনিয়োগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি একটি সমাঝোতা স্মারক ছিল; চুক্তি নয়। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী এসআইজি যদি ৪ শতাংশ শেয়ার নিশ্চিত করে তবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের বোর্ডে তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।’

এসআইজি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি নক্স-ওয়াল স্ট্রিটে দুই দশকের বিনিয়োগ ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে ১১৫ বিলিয়ন ডলারের স্ট্রাকচারাল ফাইন্যান্সের ব্যবস্থা করেছিলেন বলে যোগ করেন কায়সার হামিদ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত; কেননা তাদের স্ট্রাকচারাল ফাইন্যান্স টিম এবং এসআইজি স্থানীয় কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছে।’

উল্লেখ্য, গত ৮ এপ্রিল মার্কিন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এসআইজি সঙ্গে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। যেখানে বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি সম্ভাব্য দুই বছরে বাংলাদেশে দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

সমঝোতা স্মারকে সম্ভাব্য বিনিয়োগ তিনটির মধ্যে-সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে বিডি ফাইন্যান্সের শেয়ার কেনা, বিডি ফাইন্যান্সকে ৪০ মিলিয়ন ডলার লোন দেওয়া (মূলত টেকসই অর্থায়ন পোর্টফোলিওকে শক্তিশালী করার জন্য) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অনেক বড় বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা; এসব প্রকল্পে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের স্ট্রাকচারাল ফাইন্যান্স টিম সভরেন ইনফ্রাস্ট্রাকচার গ্রুপের লোকাল অংশীদার হিসেবে কাজ করবে।
কিন্তু সমঝোতা স্বাক্ষরের পর দীর্ঘ আট মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোন অগগ্রতি দেখা না যাওয়ায় বিএসই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উদ্যোগ নিয়েছে।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, সমঝোতা স্বারকটি স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশ দূতাবাসকে যুক্ত করে গণমাধ্যমে এমন ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে যেন দু’এক মাসের মধ্যেই কোম্পানিটির বিনিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। এ চুক্তিকে কেন্দ্র করে কোম্পানিটির শেয়ারদর রাতারাতি দ্বিগুণ হয়ে যায়। অথচ এখন কোম্পানি বলছে, এটি কোন চুক্তি নয়; এটি একটি সমঝোতা স্বারক। কিন্তু চুক্তি হোক বা সমঝোতা স্বারক হোক, আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখন এ বিষয়ে কোন উচ্চবাচ্য নেই।

তারা বলছেন, চুক্তিটিকে কেন্দ্র করে একটি চক্র আর্থিকভাবে বড় ধরনের লাভবান হয়েছে। বিষয়টি বিএসইসি ও ডিএসইর শক্তভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। তারা এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনেরও তদন্ত দাবি করেন।

সালাহউদ্দিন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, চুক্তিটি এমনভাবে প্রচার করা হয়েছে যে বিডি ফাইন্যান্স শিগগির বড় আকারে আর্থিক লাভবান হবে। কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণে দেশের অবকাঠামো খাতে ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হবে। এটাতো একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় খবর। এ খবরে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৩৪-৩৫ টাকা থেকে ৭০ টাকার উপরে চলে যায়। বাজারে তখন গুজব চলে, বিডি ফাইন্যান্সের শেয়ারদর শিগগিত ২০০ টাকার উপরে চলে যাবে। এখন চুক্তির বিষয়ে আর কোন খবর না থাকায় এর শেয়ারদর পতনে রয়েছে।

তিনি বলেন, চুক্তিটিকে কেন্দ্র করে একটি গ্রুপ বড় আকারে লাভবান হয়েছে। বিএসইসি ও দুর্নীতি দমন কমিশন যদি নিরপেক্ষভাবে বিষয়েটির উপর তদন্ত করে, তাহলে এর পেছনে থাকা বড় রাঘব বোয়ালদের জালিয়াতি বেরিয়ে আসবে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান

 

Share
নিউজটি ২৪২ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged