editorial

বীমা খাতে আর্থিক অনিয়ম প্রত্যাশিত নয়

সময়: বুধবার, ডিসেম্বর ৪, ২০১৯ ৯:৪৩:৩৭ অপরাহ্ণ


২০১০ সালে বীমা আইন প্রণীত হবার এক বছর পর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠিত হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এ পর্যন্ত বীমা খাতে ১ হাজার কোটি টাকা আর্থিক অনিয়ম চিহ্নিত করেছে। কিন্তু এসব আর্থিক অনিয়মের এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। এমন কি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি অভিযুক্ত একটি কোম্পানির বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেনি। দু’একটি ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রাথমিক উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে তা আর এগুতে পারেনি। ফলে বীমা খাতের এসব আর্থিক অনিয়মের বিষয়গুলো বহুদিন ধরেই অমিমাংশিতই রয়ে গেছে। কেন এসব আর্থিক অনিয়মের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, তা জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কর্মকর্তারা দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন। আইডিআর’র বিশেষ নিরীক্ষায় উঠে এসেছে দুর্নীতি আর অনিয়মের ভয়াবহ চিত্র। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনুমোদনহীন জমি ক্রয়, বীমা পণ্য বিক্রি, গাড়ি বিক্রি, ভূয়া এজেন্টদের কমিশন প্রদান, কোম্পানি পরিচালকদের অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ভাতা প্রদান, বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে জমি ক্রয় ইত্যাদি নানা প্রক্রিয়ায় এসব আর্থিক অনিয়মের ঘটনাগুলো ঘটেছে। দিনের পর দিন অনেকটা চোখের সামনে এই দুর্নীতি-অনিয়মের ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ কোনো দোষি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। একটি কোম্পানিতে ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ৩২০ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে কমিশন খাতেই কোম্পানিটি ৩০০ কোটি টাকার অনিয়ম করেছে। অন্য একটি কোম্পানির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারি জমি জবর দখল এবং শেয়ারহোল্ডারদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকদের ১১৮ কোটি টাকা বার্ষিক ১২ শতাংশ সুদে কোম্পানির খাতে জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ টাকা কোম্পানির খাতে জমা দেবার ব্যাপারে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। কোনো কোনো কোম্পানি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে যে সম্পদ বিবরণী দিয়েছে তার সঙ্গে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যের কোনো মিল নেই। এমনটি একটি কোম্পানি প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন করে বীমা গ্রহীতা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের তহবিলের একটি অংশ জামানত হিসেবে রেখে দু’টি ব্যাংক থেকে ১৫১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। উন্নয়নের নামে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি করা হয়েছে। আরো নানা প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি-অনিয়ম করা হয়েছে।
ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো একটি দেশের অর্থনীতির ধমনীতে রক্ত প্রবাহের মতো কাজ করে। কোনো কারণে এসব প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিঘ্নিত হতে বাধ্য। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর মূল পুঁজিই হলো সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা। কোনো কারণে যদি সেই আস্থায় ভাঙন ধরে তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে ইন্স্যুরেন্স পলিসি গ্রহণের প্রবণতা খুবই কম। উন্নত দেশগুলোতে নাগরিকরা স্বেচ্ছায় বীমা পলিসি গ্রহণ করে। কিন্তু আমাদের দেশে বীমা পলিসি গ্রহণ করাকে অনেকেই অপ্রয়োজনীয় একটি কাজ বলে মনে করেন। এর মধ্যে বীমা কোম্পানিগুলো যদি অনিয়ম আর দুর্নীতিতে আবর্তিত হতে থাকে তাহলে এ খাতের ভবিষ্যৎ ক্ষুণ্ন হতে বাধ্য। দেশের অর্থনীতির বৃহত্তম স্বার্থেই বীমা খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শন কাম্য নয়।

Share
নিউজটি ৩১৩ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged