editorial

লিজিং কোম্পানির গ্রাহকদের পুনঃতফসিলে বিশেষ সুবিধা দেয়া হোক

সময়: সোমবার, ডিসেম্বর ৯, ২০১৯ ১০:২৫:১৩ পূর্বাহ্ণ


গতকালের দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন এ ‘ঋণ পুনঃতফসিলে বিশেষ সুবিধা চায় লিজিং কোম্পানির গ্রাহকরা’ শিরোনামে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদের সম্প্রতি ব্যাংকের ঋণ খেলাপিদের ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণে যে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে তা লিজিং কোম্পানির গ্রাহকদের জন্যও প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ব্যাংকিং সেক্টরে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণভার থেকে মুক্তি পাবার লক্ষ্যে এককালীন ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট প্রদানের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ হিসাব এক বছর গ্রেস পিরিয়েডসহ ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিলিকরণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। পুনঃতফসিলিকরণকৃত অবস্থায় তাদের সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। ব্যাংকিং সেক্টরে সাম্প্রতিক সময়ে এটাই সবচেয়ে বড় আইনি সংস্কার। এ বিশেষ সুবিধা প্রদানের বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এমন কি এ আইনি সংস্কারসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের জারিকৃত সার্কুলারের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মাননীয় আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে রায় দেয়ার পর সিডিউল ব্যাংকগুলো ২ শতাংশ এককালীন ডাউন পেমেন্ট নিয়ে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। অনেকেই এ সুযোগে তাদের পুরনো খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ করে নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। যারা নানা কারণে গৃহীত ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন তারা এ উদ্যোগের ফলে আশান্বিত হয়েছেন। কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, এ বিশেষ সুবিধার কারণে আগামীতে ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেকটাই কমে আসবে। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে ব্যাংক গ্রাহকদের বিশেষ সুবিধার আওতায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের সুবিধা দেয়া হলেও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সুবিধার বাইরে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন লিজিং কোম্পানির গ্রাহকগণ এ সুবিধা পাবার জন্য স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে ভিড় জমাচ্ছে। কিন্তু লিজিং কোম্পানি থেকে জানানো হচ্ছে, তারা এ আইনের আওতাবহির্ভূত বলে এ সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। গত ২ ডিসেম্বর একজন গ্রাহক এ বিশেষ সুবিধা লিজিং কোম্পানির গ্রাহকদেরও দেবার দাবিতে মাননীয় আদালতে রিট করেন। এই রিটের প্রেক্ষিতে মাননীয় আদালত রুল জারি করেছেন। এ রুলে আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং অন্য কয়েকজন কর্মকর্তা ও ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জবাব দেবার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইস্যুটি যেহেতু আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে তাই এ ব্যাপারে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না। লিজিং খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ব্যাংকিং সেক্টরের চেয়েও বেশি অস্থিরতা বিরাজ করছে লিজিং সেক্টরে। তারা তারল্য সঙ্কটে ভুগছে। এ ছাড়া রয়েছে খেলাপি সংস্কৃতি। কাজেই ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ সংক্রান্ত বিশেষ আইনটি তাদের জন্য প্রযোজ্য করা হলে এ সেক্টরের উপকার হতো। বিদ্যমান তারল্য এবং খেলাপি ঋণ সমস্যা কিছুটা হলেও কমতো। কিন্তু তাদের এ মতের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দ্বিমত প্রকাশ করেন। তারা বলছেন, লিজিং কোম্পানির ব্যবসায়ের ধরণ ব্যাংকের চেয়ে ভিন্ন। তাই ব্যাংকের মতো সুবিধা তাদের দেয়া যায় না। কিন্তু আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, লিজিং কোম্পানির ব্যবসায়ের ব্যাংকের মতো না হলেও তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু একই রকম। উভয় সেক্টরই উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে নিবেদিত। কাজেই লিজিং কোম্পানির গ্রাহকদের জন্য যদি এ বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয় তাহলে তা আর্থিক খাতের জন্যই ভালো হবে। তাই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।

Share
নিউজটি ৪৩৩ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged