editorial

ষাট বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে সোয়া তিনগুন

সময়: শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০ ৮:৩৪:১৩ অপরাহ্ণ


এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৬০ বছরে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু গড় আয় বেড়েছে মাত্র সোয়া তিনগুন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর প্রাক্কালে গত বছর (২০১৯) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে এশীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের মাথাপিছু গড় জাতীয় আয়ের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, এশীয় অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলো মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি সাধন করলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে তেমন একটা সাফল্য প্রদর্শন করতে পারেনি। ১৯৬০ সালে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের গড় মাথাপিছু জাতীয় আয় ছিল ৩৩০ মার্কিন ডলার। ১৯৯০ সালে এটা ১ হাজার ৭৮ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। ২০১৮ সালে এসে তা ৪ হাজার ৯০৩ মার্কিন ডলারে উঠে আসে। কিন্তু বাংলাদেশ বর্ণিত সময়ে এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করতে পারেনি। ১৯৬০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) জনগণের মাথাপিছু জাতীয় আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৭২ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মানুষের গড় জাতীয় আয় বেশি ছিল। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জাতীয় আয়ের পরিমাণ সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৪১১ মার্কিন ডলারে। পরবর্তী ১৮ বছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে তিন গুনের কাছাকাছি। ২০১৮ সালে এসে বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু জাতীয় আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০৩ মার্কিন ডলার। এটি এডিবি’র পরিসংখ্যানের তথ্য। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মানুষের গড় মাথাপিছু জাতীয় আয়ের পরিমাণ আরো বেশি। ২০১৮-’১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু গড় জাতীয় আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯০৩ মার্কিন ডলার। একই বছর বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮দশমিক ১৫ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। উন্নয়ন সহযোগিরা বরাবরই বাংলাদেশ সরকারের দেয়া উন্নয়ন বিষয়ক তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে থাকে। তারা মাথাপিছু জাতীয় আয় এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে তথ্য প্রকাশ করে তা বাংলাদেশ সরকারের দেয়া তথ্যের চেয়ে কিছুটা হলেও কম। এডিবি যে তথ্য প্রদান করেছে তাতে দেখা যা, এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সবচেয়ে ভালো করেছে জাপান, চীন, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশগুলো। যেমন ১৯৬০ সালে জাপানের জনগণের মাথাপিছু জাতীয় আয় ছিল ৮ হাাজর ৬০৮ মার্কিন ডলার, যা ২০১৮ সালে ৪৮ হাজার ৯২০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে চীনের জনগণের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১৯২ মার্কিন ডলার থেকে ৭ হাজার ৭৫৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। সিঙ্গাপুরের জনগণের মাথাপিছু জাতীয় আয় ৩ হাজার ৫০৩ মার্কিন ডলার থেকে ৫৮ হাজার ২৪৮ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে বিস্ময়কর অগ্রগতি তা সাম্প্রতিক নিকট অতীতের ঘটনা। বাংলাদেশ গত প্রায় দেড় দশক ধরে অর্থনীতির সব ক্ষেত্রেই বিস্ময়কর উন্নতি অর্জন করে চলেছে। বাংলাদেশের এই উন্নয়নের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা দেশটির ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা। একটি দেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ বা তারও বেশির বয়স যখন ১৫ হতে ৬০ বছরের মধ্যে থাকে অর্থাৎ তারা কর্মক্ষম অবস্থায় বিরাজ করে সেই অবস্থাকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা বলা হয়। যেসব দেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড সুবিধা পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে পারে তারাই উন্নতি অর্জন করতে পারে। কিন্তু আমরা এখনো ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে পারছি না। এ ব্যাপারে জাতীয় পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল সবাই ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভোগ করতে পারছে না। বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করে চলেছে তার সুফল যাতে সবাই ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় উন্নয়ন এক সময় সামাজিক বিশৃঙ্খলার জন্ম দিতে পারে যা কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।

বীমা খাতের গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে হবে
দেশের ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক খাতের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। নানা ধরনের জটিল সমস্যা এই খাতকে আঁকড়ে ধরে আছে। কোনোভাবেই সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটানো যাচ্ছে না। যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশেষ করে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণ এবং জীবন ও অর্থের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে ব্যাংক ও বীমা খাত কাজ করে থাকে। তাই ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ব্যাংকিং খাত অবদান রাখে। আর বীমা কোম্পানিগুলো ব্যক্তির জীবন ও অর্থের নিরাপত্তা বিধান করে। কাজেই এই খাত দু’টি পরস্পর সম্পর্কিত। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা মোটেও ভালো চলছে না। উপরন্ত বীমা খাতও নানা সমস্যায় জর্জরিত। ফলে খাত দু’টির কোনোটিই সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন এর গতকালের সংখ্যায় দেশের বীমা খাতের সমস্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি উদ্বেগজনক। এতে দেশের বীমা খাতের একটি বিশেষ সমস্যাকে তুলে ধরা হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, দেশের বীমা কোম্পানিগুলো ভালো ব্যবসায় করছে। তাদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। ফলে তাদের অর্জিত সম্পদের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কোম্পানির ভালো মুনাফা অর্জন এবং সম্পদের পরিমাণ স্ফীত হবার ফলে বীমা গ্রাহকদের যে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল তা তারা পাচ্ছেন না। ফলে বীমা গ্রাহকগণ বীমা কোম্পানিগুলোর উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন এবং দিন দিনই গ্রাহকের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। প্রতি বছরই বীমা পলিসির সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি‘র (আইডিআরএ) সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৯ সালে দেশের জীবন বীমা খাতের কোম্পানিগুলো মোট ৯ হাজার ৬০৮ কোটি ২২ লাখ টাকার ব্যবসা করে। আগের বছর (২০১৮ সালে) এদের ব্যবসার পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৯৯২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়ের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ১৯৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। বীমা কোম্পানির আয় এবং সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রাহকের সংখ্যাও বাড়বে এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে এখানেই। সাম্প্রতিক সময়ে বীমা কোম্পানির গ্রাহক সংখ্যা না বেড়ে বরং কিছুটা কমেছে। ২০১৯ সালে জীবন বীমার গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৯০ লাখ ২০ হাজার। অথচ এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার। ২০১৭ সালে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার। অর্থাৎ গ্রাহক সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। গ্রাহক কমে গেলেও কোম্পানিগুলোর সম্পদের পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৯ সালে বীমা কোম্পানিগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৬৬১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আগের বছর এটা ছিল ৩৮ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে তাদের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ৫২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বীমা কোম্পানির ব্যবসা বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সম্পদের পরিমাণ এটা ভালো লক্ষণ। কিন্তু যাদের নিয়ে তাদের এই ব্যবসায় সেই গ্রাহকের সংখ্যা কমে যাওয়াটা চিন্তার ব্যাপার বটে। তার অর্থ কি এই যে বীমা কোম্পানিগুলো আয় এবং সম্পদ বাড়ানোর জন্য যতটা উৎসাহী গ্রাহক আকর্ষণে ততটা আগ্রহী নয়? এটা ভালো লক্ষণ নয়। যে কেনো ব্যবসায়ের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হচ্ছে লাভজনকভাবে পরিচালিত করা। কিন্তু তাই বলে যেনোতেনো ভাবে মুনাফা অর্জন করা একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ হতে পারে না।
সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন, বীমা খাতে গ্রাহক কমে যাবার প্রবণতা উদ্বেগজনক। কোনোভাবেই এটা কাম্য হতে পারে না। বাংলাদেশে এমনিতেই মানুষের মাঝে বীমা পলিসি গ্রহণের ব্যাপারে অনীহা রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে প্রায় শতভাগ মানুষের জীবন বীমা রয়েছে। এই অবস্থায় বীমা কোম্পানিগুলোর উচিৎ হবে শুধু মুনাফা এবং সম্পদ বৃদ্ধির দিকে মনোযোগি না হয়ে একই সঙ্গে বীমা গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা। কারণ গ্রাহক ছাড়া বীমা কোম্পানিগুলো অচল। তাই বৃহত্তর স্বার্থেই গ্রাহক বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।


গ্রামাঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং সেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সিডিউল ব্যাংকগুলোকে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করার অনুমতি প্রদান করে। এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হবার ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত স্বল্প পরিশ্রমে এবং বিনা হয়রানিতে ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন। মূলত এ কারণেই এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম দ্রুত বিস্তার লাভ করে। অনেক গ্রামেই এখন ব্যাংকিং সেবা প্রত্যাশীতের শহরে আসতে হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল শেষে এজেন্টের মাধ্যমে খোলা মোট হিসাব সংখ্যা ৫২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৯৬টি। এক বছর আগেও এ সংখ্যাটি ছিল ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮২টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে হিসাব খোলার প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১১৪ শতাংশ। তবে এর বেশিরভাগ হিসাবই খোলা হয়েছে মাত্র পাঁচ ব্যাংকে। এ সেবায় ২০ লাখ ৮ হাজার গ্রাহক তৈরি করে শীর্ষে রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। এরপরই ব্যাংক এশিয়ার অবস্থান। তাদের গ্রাহক সংখ্যা ১৯ লাখ ১৬ হাজার। সেবাটি চালুর অল্প দিনেই ইসলামী ব্যাংক পেয়েছে ৪ লাখ ৬১ হাজার গ্রাহক। আর শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এই ধরনের সেবার হিসাব খোলা হয়েছে প্রায় ৫ গুণ বেশি। এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, ব্যাংকিং সেবা দ্রুত গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে। ব্যাংকিং সেবা গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে যাওয়া অত্যন্ত ইতিবাচক একটি লক্ষণ। কারণ বর্তমান যুগে ব্যাংকিং কার্যক্রম ছাড়া অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। তাই এজেন্ট ব্যাংকিং আমাদের উৎসাহিত করে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গ হয়ে উঠুক এটা আমরা সবাই চাই। কিন্তু এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আহরিত গ্রামীণ আমানত গ্রামেই থাকছে নাকি সেটাও বিবেচ্য বিষয় বটে। গ্রামীণ অর্থনীতি এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে চাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই এসব গ্রাম থেকে বিদেশি গিয়েছে। তারা যে বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স প্রেরণ করছে তা গ্রামের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গ্রামের দরিদ্র অনেক পরিবারই এখন প্রবাসী আয়ের স্বচ্ছল হয়ে উঠেছে। তারা ব্যাংকিং কার্যক্রম করবে এটাই স্বাভাবিক। মানুষের হাতে যখন উদ্বৃত্ত অর্থ থাকে তখনই তারা ব্যাংকিং কার্যক্রমে যুক্ত হয়। এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামীণ অর্থনীতিতে সাড়া ফেলেছে এটা খুবই ভালো কথা। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যত্র। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণ যে আমানত ব্যাংকের রাখছে তা গ্রামের উন্নয়নে ব্যবহৃত না হয়ে শহরে চলে আসছে। পুঁজির ধর্মই হলো গ্রাম বা দুর্বল স্থান থেকে শহরে বা সবল স্থানে চলে আসা। এক্ষেত্রেও তেমনটিই ঘটছে। ২০১৯ সালে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চল থেকে ৭ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা আমানত সংগৃহীত হয়েছে। একই সময়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ৪৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সংগৃহীত আমানতের ৬ শতাংশেরও কম বিনিয়োগ হয়েছে গ্রামে। তার অর্থ হচ্ছে সংগৃহীত আমানতের প্রায় ৯৪ শতাংশই শহরে চলে এসেছে। এটা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। গ্রাম থেকে সংগৃহীত আমানত যাতে গ্রামেই বিনিয়োগ হতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোর গ্রামীণ শাখা অথবা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে অর্থ সংগৃহীত হবে তা যাতে গ্রামেই বিনিয়োগ হয় এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় এভাবে গ্রাম থেকে পুঁজি শহরে চলে আসতে থাকলে শহর ও গ্রামের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য আগামীতে আরো বেড়ে যেতে পারে।

কিস্তি আদায়ের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে হবে
গতকালের দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন এ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য সূত্র উল্লেখ করে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, ‘১০ বছর মেয়াদি পুন:তফসিলি সুবিধায় কমেছে খেলাপি ঋণ।’ প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সম্প্রতি এককালীন ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট প্রদান সাপেক্ষে খেলাপি ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণের যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তা ব্যবহার করে ঋণ খেলাপিদের অনেকেই তাদের ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণ করিয়ে নিয়েছেন। ফলে অক্টোবর-ডিসেম্বর,২০১৯ প্রান্তিকে ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এসেছে। এখন দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ পুন:তফসিলিকরণের এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে ব্যাংকিং সেক্টর খেলাপি ঋণের পরিমাণ তিন মাসের ব্যবধানে ২২ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এনেছে। সর্বশেষ প্রাপ্তিকে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। অবশ্য আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪২০ কোটি টাকা। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্যাংকিং সেক্টরে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল দায়িত্ব গ্রহণের পর এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আজ থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক টাকাও বাড়বে না। তখন ব্যাংক সংশ্লিষ্টগণ মনে করেছিলেন, অর্থমন্ত্রী হয়তো খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চলেছেন। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই দেখা গেলো, খেলাপি ঋণের কিস্তি আদায়ের পরিবর্তে ঋণ খেলাপিদের বিশেষ কিছু সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই একটি পদক্ষেপ ছিল খেলাপি ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণে বিশেষ সুবিধা প্রদান। আগে কোনো ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণ করতে হলে মোট ঋণের ১০ শতাংশ অথবা খেলাপি ঋণাঙ্কের ১৫ শতাংশ এককালীন ডাউন পেমেন্ট হিসেবে ব্যাংকে জমা দিতে হতো। তারপর বিশেষ কিছু শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে একটি ঋণ হিসাব ৩ বছরের জন্য পুন:তফসিলিকরণ করা হতো। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং সেক্টরে বেশ কিছু আইনি সংস্কার করা হয়েছে। এসব আইনি সংস্কারের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখানো যাবে কিন্তু কিস্তি আদায়ের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ না কমানো গেলে ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা কখনোই ভালো হবে না। ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণ হচ্ছে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বা সিডিউল পরিবর্তন করা। এককালীন ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণ করা হয়েছে। এছাড়া ঋণ হিসাব অবলোপন সংক্রান্ত নীতিমালাও সহজীকরণ করা হয়েছে। আগে একটি ঋণ মন্দ ঋণ হিসেবে শ্রেণিকৃত হবার পর ৫বছর অতিক্রান্ত হলে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের এবং সংশ্লিষ্ট ঋণাঙ্কের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ পূর্বত তা অবলোপন করা যেতো। সংশোধিত আইনে অবলোপনের সময়সীমা তিন বছর করা হয়েছে। শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ এবং উপযুুক্ত আদালতে মামলা দায়েরের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। এসব ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে খেলাপি ঋণের কিস্তি আদায় না করেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখানো যাবে। যার নমুনা ইতোমধ্যেই আমরা লক্ষ্য করছি। আসলে ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণের অবস্থা কেমন তা বুঝা যাতে পুন:তফসিলিকৃত ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় এলেই। ঋণ গ্রহীতারা যদি সেই সময় সঠিকভাবে ঋণ পরিশোধ না করেন তাহলে ব্যাংকিং সেক্টরে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
সরকার একটি মহতী উদ্দেশ্যে ঋণ খেলাপিদের বিশেষ কিছু সুবিধা প্রদান করেছেন। আমরা আশা করবো ঋণ খেলাপিরা সরকারের এই সদিচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাবেন। একই সঙ্গে যারা ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি তাদের নিকট থেকে ব্যাংকের পাওনা ঋণ আদায়ের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই
যে কোনো দেশের উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন সংগ্রহ করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশটি জনগণের নিকট থেকে কি পরিমাণ ট্যাক্স আদায় করতে পারছে তার উপর। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে সরকারকে অনেক ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হয়। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয় তা অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সূত্র থেকে আহরণ করা হয়। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণ ও আর্থিক অনুদান থেকেও কিছু অর্থ সংগ্রহীত হয়। তবে মর্যাদাশীল কোনো দেশই বিদেশি ঋণ এবং অনুদান নির্ভর হতে চায় না। এটা যে কোনো বিচারেই অত্যন্ত লজ্জাজনক। তাই তারা চেষ্টা করে কিভাবে অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় মেটানোর মতো অর্থায়ন সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু চাইলেই তো আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সব সময় প্রয়োজনীয় অর্থ যোগার করা যায় না। এটা একটি কালচারের ব্যাপারও বটে। সাধারণ মানুষ যখন রাষ্ট্রের নিকট থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে তার বিপরীতে নির্ধারিত হারে ট্যাক্স প্রদান করবে এটাই নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই ট্যাক্স ফাঁকি দেবার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই প্রবণতা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড ইকবাল মাহমুদ স্বল্প মাত্রায় ট্যাক্স প্রদানের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ২০ লাখ লোক ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করে। এর মধ্যে মাত্র ১২ লাখ মানুষ ট্যাক্স দেন। তিনি এই প্রবণতাকে ‘জাতীয় লজ্জা’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত হারে কর প্রদানের জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি জানি না কর কর্মকর্তাদের কেনো গ্রেপ্তারি ক্ষমতা নেই। তাদের গ্রেপ্তারি থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, যে সব সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ গ্রহণ এক ধরনের ভিক্ষার সামিল। কারণ ভিক্ষুকরা মানুষের সামনে হাত পেতে টাকা গ্রহণ করে আর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সেবা প্রার্থীর নিকট থেকে নানা কৌশলে ঘুষ গ্রহণ করেন। তিনি সবাইকে সতর্ক হবার জন্য পরামর্শ দেন। দুদক চেয়ারম্যান ট্যাক্স আদায়ের বিষয়ে যে কথা বলেছেন ত যে কোনো বিচারেই উল্লেখের দাবি রাখে। কারণ বাংলাদেশ অর্থনীতির প্রায় সব ক্ষেত্রেই সাম্প্রতিক সময়ে ইতিবাচক অগ্রগতি সাধন করলেও ট্যাক্স আদায়ের ক্ষেত্রে এখনো অনেক দেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও অনেক দিন ধরেই ১০/১১ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করছে। অথচ নিকট প্রতিবেশি দেশগুলোর অবস্থা আমাদের তুলনায় অনেক ভালো। ভারতের ট্যাক্স জিডিপি রেশি ২৩ শতাংশের মতো। অর্থাৎ তাদের দেশে যে ট্যাক্স আদায় হয় তা জিডিপি’র ২৩ শতাংশের মতো। এমন কি নেপালের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ২৬ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরো অনেক কিছু করার আছে। বাংলাদেশের মানুষ ট্যাক্স দিতে চায় না এই অভিযোগ ঢালাওভাবে করা ঠিক নয়। কারণ ট্যাক্স আদায় পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল। ফলে অনেকেই ইচ্ছে থাকা সত্বেও ট্যাক্স দিতে চান না হয়রানির আশঙ্কায়। ট্যাক্স আদায়কারী এক শ্রেণির কর্মকর্তা ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এ ছাড়া ট্যাক্সের পরিমাণ ক্ষেত্র বিশেষে অনেক বেশি। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ট্যাক্সের পরিমাণ কমিয়ে ট্যাক্স নেটওয়ার্ককে আরো বিস্তৃত করা। এ ছাড়া ট্যাক্স আদায় ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক করতে হবে। আমরা যদি অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরা গতিশীল এবং টেকসই করতে চাই তাহলে কোনোভাবেই বিদেশি সাহায্য এবং অনুদানের উপর নির্ভর হয়ে থাকলে না। যে কোনো মূল্যেই হোক আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও আরো বাড়াতে হবে।

শেয়ারবাজার উন্নয়নে বিশেষ তহবিল একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শেয়ারবাজার উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকগণ মনে করছেন, এসব সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ইতিবাচক এবং এগুলো দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ার বাজারের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে ব্যবসায়রত প্রত্যেকটি সিডিউল ব্যাংকের উদ্যোগে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগটি বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। এতে শেয়ারবাজারে ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্যের যোগান দেয়া সম্ভব হবে। তারল্য যোগানের এই পরিমাণ বিনিয়োগ সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন(বিএমবিএ) অনেক দিন ধরেই বাজারের তারল্য সরবরাহ বাড়ানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা যোগান দেবার কথা বলে আসছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বাজারে তারল্যের যোগান প্রত্যাশার চাইতেও ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বেশি হবে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের কার্য নির্বাহী কমিটির নবনির্বাচিত কর্মকর্তাগণ গতকাল রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে শেয়ার বাজারের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের এই উদ্যোগকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা বলেছেন, এই মুহূর্তে শেয়ারবাজারে তারল্য সঙ্কট বিরাজ করছে। কাজেই তারা অনেক দিন ধরেই বাজারে তারল্য যোগান দেবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট বিভিন্নভাবে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে তাদের সেই দাবি পূরণ হয়েছে। বিএমবিএ’র নবনির্বাচিত সভাপতি মো: ছায়েদুর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন,গত দশ বছরে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে আর কখনোই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কার্যকর উদ্যোগের ফলে শেয়ারবাজারে এক ধরনের চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই নতুন করে বিনিয়োগে আসার জন্য চিন্তা-ভাবনা করছেন। কোনো কোনো মহল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগকে নানাভাবে সমালোচনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাংবাদিক সম্মেলনে মহল বিশেষের সমালোচনার জবাব দেয়া হয়। তারা বলেন,বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় দেশের সিডিউল ব্যাংকগুলো যে বিশেষ ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে তা কোনো অনুদান বা ভর্তুকি নয়। কেউ কেউ বলছেন, এই বিশেষ ফান্ড গঠনের কারণে ব্যাংকগুলোর লোকসানের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে, ট্যাক্সের টাকায় এই ফান্ড গঠিত হচ্ছে। আসলে বিষয়টি তেমন নয়। এ ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা সাধারণ বিনিয়োগকারিদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে বলেও তারা মন্তব্য করেন। তারা আরো বলেন, দেশের সিডিউল ব্যাংকগুলোর প্রত্যেকে ২০০ কোটি টাকার যে বিশেষ ফান্ড তৈরি করবে তা কোনো ট্যাক্সের টাকা নয়। এতে ব্যাংকের স্বাভাবিক বিনিয়োগ কার্যক্রমের উপর কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক সিডিউল ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার যে বিশেষ ফান্ড গঠনের অনুমতি দিয়েছে তা তাদের আগের বিনিয়োগ লিমিটের অতিরিক্ত। এই ফান্ডের অর্থ তাদের মূল লেজারের হিসাবের বাইরে থাকবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে বিশেষ কিছু সুবিধাও দেয়া হচ্ছে। কাজেই এই বিশেষ ফান্ডের মতো একটি সুন্দর উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে বাজারের উন্নয়নের জন্য আরো কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দেশের ৪টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ২৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের আরে ১৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে। বর্তমানে এই ব্যাংকের ১০ শতাংশ শেয়ার বাজারে রয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের লাভজনক ৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারও বাজারে নিয়ে আসা হচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে বাজারে ভালো শেয়ারের স্বল্পতা দূর হবে। বিনিয়োগকারীরা দেখেশুনে ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে।
সাম্প্রতিক সময়ে সরকার শেয়ার বাজারের উন্নয়নে যে সব পদক্ষেপ নিয়েছেন তা অত্যন্ত ইতিবাচক এবং দীর্ঘ মেয়াদে তা বাজারের উন্নয়নে কার্যকর অবদান রাখবে। আমরা এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে অভিনন্দন জানাই। আগামীতে শেয়ার বাজার উন্নয়নে সময়ের প্রেক্ষিতে আরো যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন তাও গৃহীত হবে বলে আমরা আশায় রইলাম।

পদ্মা সেতু অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাইল ফলক হতে পারে
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন,পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার চেহারা পরিবর্তিত হয়ে যাবে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে। সরকার এই এলাকার উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেছে। এই অঞ্চলের যেসব ছেলে মেয়ে এখন পড়াশুনা করছে তাদের চাকরি এবং কর্মসংস্থানের কোনো সমস্যা হবে না। তিনি আরো বলেন,বিশ্বে কর্মসংস্থানের জন্য মানুষ অনেক কষ্ট করে। আবার কোনো কোনো দেশে কাজ করার মতো মানুষ পাওয়া যায় না। আমাদের দেশে কাজ করার মতো প্রচুর মানুষ রয়েছে। কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব রয়েছে। বর্তমান সরকার সবার জন্য কর্মসংস্থানের জন্য সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা হচ্ছে। ফলে আগামীতে দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে জোয়ার সৃষ্টি হবে। উল্লেখ্য,বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন কাজ বেশ দ্রুত গতিয়ে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যেই এই সেতুর বেশির ভাগ অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। পদ্মা সেতু সংলগ্ন জাজিরা পয়েন্টে ব্যাংক অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন,পদ্মা সেতু নির্মিত হবার পর তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে। বিশেষ করে দেশের জিডিপি’র পরিমাণ অন্ত ২ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পাবে। অর্থমন্ত্রী প্রসঙ্গক্রমে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশে এখন কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেশি। মোট জনসংখ্যার ৬১ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ এরা কর্মক্ষম। একটি দেশের মোট জনসংখ্যার দু-তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি যখন কর্মক্ষম থাকে সেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়। একটি জাতির জীবনে এই অবস্থা একবারই আসে। যারা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুফল কাজে লাগাতে পারে তারাই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারে। অর্থমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তা খুবই বাস্তবসম্মত এবং ইতিবাচক। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। কোনো একটি অঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া কিন্তু এমনি এমনি লাগে না। এ জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে এটা আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। এই সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে দেশের অর্থনীতিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে এতে কোনোই সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের এ জন্য বেশ কিছু কাজ করতে হবে। পদ্মা সেতুতে প্রত্যক্ষভাবে হাজার খানেক মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে। তবে এই সেতু পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। উল্লেখ্য, সরকার যে উন্নয়ন কাজ করে তার উদ্দেশ্য থাকে উন্নয়নের জন্য রাস্তা বা পথ তৈরি করে দেয়া। সেই উন্নয়নের রাস্তাকে ব্যবহার করে ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা শিল্প-কারখানা গড়ে তেলে। সেই সব প্রতিষ্ঠানে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। পদ্মা সেতু তৈরি হলে সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহে উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আমাদেরকে ব্যক্তি খাতের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বিনিয়োগ বাড়ানোর মতো অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পদ্মা সেতু এককভাবে অর্থনেতিক ক্ষেত্রে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারবে না। অন্যদের অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে মাত্র। তাই আমাদের পদ্মা সেতু নির্মাণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহে শিল্পায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

ভুল সংশোধনী

গত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রকাশিত দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন’ এর অষ্টম পৃষ্ঠায় কোম্পানি প্রোফাইল শিরোনামে প্রকাশিত ‘জেমিনি সি ফুড লিমিটেড’-এর কোম্পানি প্রোফাইলে উক্ত কোম্পানির চেয়ারপার্সন মিসেস আমেনা আহমেদ-এর ছবির পরিবর্তে ভুলক্রমে শমরিতা হসপিটাল লিমিটেড-এর চেয়ারম্যানের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। একই ভাবে জেমিনি সি ফুড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক-এর ছবির পরিবর্তে শমরিতা হসপিটাল লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ছবি ছাপা হয়েছে। সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দু:খ প্রকাশ করছি।
Ñ সম্পাদক

Share
নিউজটি ৩৭১ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged