editorial

ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই

সময়: মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০ ১২:৩৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ


যে কোনো দেশের উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন সংগ্রহ করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশটি জনগণের নিকট থেকে কি পরিমাণ ট্যাক্স আদায় করতে পারছে তার উপর। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে সরকারকে অনেক ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হয়। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয় তা অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সূত্র থেকে আহরণ করা হয়। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণ ও আর্থিক অনুদান থেকেও কিছু অর্থ সংগ্রহীত হয়। তবে মর্যাদাশীল কোনো দেশই বিদেশি ঋণ এবং অনুদান নির্ভর হতে চায় না। এটা যে কোনো বিচারেই অত্যন্ত লজ্জাজনক। তাই তারা চেষ্টা করে কিভাবে অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় মেটানোর মতো অর্থায়ন সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু চাইলেই তো আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সব সময় প্রয়োজনীয় অর্থ যোগার করা যায় না। এটা একটি কালচারের ব্যাপারও বটে। সাধারণ মানুষ যখন রাষ্ট্রের নিকট থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে তার বিপরীতে নির্ধারিত হারে ট্যাক্স প্রদান করবে এটাই নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই ট্যাক্স ফাঁকি দেবার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই প্রবণতা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড ইকবাল মাহমুদ স্বল্প মাত্রায় ট্যাক্স প্রদানের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ২০ লাখ লোক ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করে। এর মধ্যে মাত্র ১২ লাখ মানুষ ট্যাক্স দেন। তিনি এই প্রবণতাকে ‘জাতীয় লজ্জা’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত হারে কর প্রদানের জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি জানি না কর কর্মকর্তাদের কেনো গ্রেপ্তারি ক্ষমতা নেই। তাদের গ্রেপ্তারি থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, যে সব সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ গ্রহণ এক ধরনের ভিক্ষার সামিল। কারণ ভিক্ষুকরা মানুষের সামনে হাত পেতে টাকা গ্রহণ করে আর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সেবা প্রার্থীর নিকট থেকে নানা কৌশলে ঘুষ গ্রহণ করেন। তিনি সবাইকে সতর্ক হবার জন্য পরামর্শ দেন। দুদক চেয়ারম্যান ট্যাক্স আদায়ের বিষয়ে যে কথা বলেছেন ত যে কোনো বিচারেই উল্লেখের দাবি রাখে। কারণ বাংলাদেশ অর্থনীতির প্রায় সব ক্ষেত্রেই সাম্প্রতিক সময়ে ইতিবাচক অগ্রগতি সাধন করলেও ট্যাক্স আদায়ের ক্ষেত্রে এখনো অনেক দেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও অনেক দিন ধরেই ১০/১১ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করছে। অথচ নিকট প্রতিবেশি দেশগুলোর অবস্থা আমাদের তুলনায় অনেক ভালো। ভারতের ট্যাক্স জিডিপি রেশি ২৩ শতাংশের মতো। অর্থাৎ তাদের দেশে যে ট্যাক্স আদায় হয় তা জিডিপি’র ২৩ শতাংশের মতো। এমন কি নেপালের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ২৬ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরো অনেক কিছু করার আছে। বাংলাদেশের মানুষ ট্যাক্স দিতে চায় না এই অভিযোগ ঢালাওভাবে করা ঠিক নয়। কারণ ট্যাক্স আদায় পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল। ফলে অনেকেই ইচ্ছে থাকা সত্বেও ট্যাক্স দিতে চান না হয়রানির আশঙ্কায়। ট্যাক্স আদায়কারী এক শ্রেণির কর্মকর্তা ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এ ছাড়া ট্যাক্সের পরিমাণ ক্ষেত্র বিশেষে অনেক বেশি। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ট্যাক্সের পরিমাণ কমিয়ে ট্যাক্স নেটওয়ার্ককে আরো বিস্তৃত করা। এ ছাড়া ট্যাক্স আদায় ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক করতে হবে। আমরা যদি অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরা গতিশীল এবং টেকসই করতে চাই তাহলে কোনোভাবেই বিদেশি সাহায্য এবং অনুদানের উপর নির্ভর হয়ে থাকলে না। যে কোনো মূল্যেই হোক আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও আরো বাড়াতে হবে।

 

Share
নিউজটি ৩০৮ বার পড়া হয়েছে ।
Tagged