অনুপ সর্বজ্ঞ : গত ৬ বছরে ব্যবসায়িক ভাবে দাঁড়াতে পারেনি আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। গ্রাহকের দায় পরিশোধে কোম্পানির তহবিলেও আর কোন টাকা নেই। শুধু তাই নয় মালিকদের জমা করা প্রারম্ভিক মূলধন থেকেও ২৬ লাখ টাকা খরচ করেছে কোম্পানিটি।
এ বিষয়ে জানার জন্য আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আলমগীর শামসুল আলামিনের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আইডিআরএ’র তথ্য অনুসারে, নতুন ও নবায়ন প্রিমিয়াম এবং লাইফ ফান্ডসহ সব ধরনের বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয় মিলিয়ে ২০১৯ সালে আলফা ইসলামী লাইফের নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অন্যদিকে ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও বীমা দাবিসহ অন্যান্য খাতে কোম্পানিটি আলোচ্য বছরে সর্বমোট খরচ করেছে ৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। হিসাব অনুসারে সর্বমোট আয় থেকে সর্বমোট ব্যয় বাদ দিলে ২০১৯ সালে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডে ঘাটতি দাঁড়ায় ২৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ বীমা গ্রাহকদের সব টাকা খরচের পর মালিকদের জমানো টাকা থেকেও ব্যয় করেছে আলফা ইসলামী লাইফ।
বর্তমানে কোম্পানিটির সচল পলিসি’র সংখ্যা ১ হাজার ৬৩৯টি। তবে ২০১৯ সালে সর্বমোট নতুন প্রিমিয়াম আয়ের হিসাবে ৮টি বীমা পরিকল্পের নতুন গ্রাহক সংখ্যা দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৩৩২। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ৬ বছরে কোম্পানিটি যে পরিমাণ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে তার গ্রাহকও রয়েছে। এর মধ্যে কিছু গ্রাহক প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম দিয়ে বাদ দিয়েছে। আর কিছু গ্রাহক রয়েছেন যারা দু’বছরের বেশি প্রিমিয়াম জমা দিয়েছেন। বিধান অনুসারে এসব গ্রাহকের দায় কোম্পানিকে বহন করতে হবে।
সবশেষ হিসাব সমাপনী বছরের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে কোম্পানিটির প্রথম বর্ষ বা নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আর ২০১৮ সালে যে ৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছিল তা থেকে নবায়ন এসেছে ৩০ লাখ টাকা। এই হিসেবে কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
তবে তৃতীয় থেকে তদুর্ধ্ব বছরের কোন নবায়ন আসেনি। আইডিআরএ’র তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে যে পরিমাণ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে তা থেকে কোন নবায়ন প্রিমিয়াম আসেনি ২০১৯ সালে। ফলে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালে প্রিমিয়াম সংগ্রহে যে ব্যয় করেছে তার পুরোটাই লোকসান গুণতে হবে কোম্পানিটিকে। এছাড়াও রয়েছে গ্রাহকের জমানো প্রিমিয়ামের দায়।
অন্যদিকে ২০১৯ সালে ব্যবস্থাপনা খাতে ৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় করেছে আলফা ইসলামী লাইফ। এর মধ্যে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহে ১ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহে ৪ লাখ টাকা কমিশন দিয়েছে। এ ছাড়াও উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ ৫০ লাখ টাকা এবং অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। বাকী টাকা অফিস ভাড়াসহ ব্যবস্থাপনার অন্যান্য খাতে ব্যয় করেছে। অর্থাৎ প্রিমিয়াম আয়ের চেয়ে গেলো বছরে খরচ বেশি করেছে বীমা কোম্পানিটি।
২০১৯ সালে আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স স্থায়ী আমানত (মূলধন), স্ট্যাটুটরি ডিপোজিট (বিজিটিবি), এমএসএনডি হিসাব এবং অন্যান্য খাত থেকে সর্বমোট আয় করেছে ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর বিগত বছরগুলোতে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডে জমা ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ২০১৯ সালে কোম্পানিটি সারভাইভাল বেনিফিট, পলিসি সারেন্ডার ক্লেইম, মৃত্যুদাবি, গ্রুপ ও স্বাস্থ্য বীমা দাবি বাবদ পরিশোধ করেছে ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আবার আর্থিক খরচ, স্থায়ী সম্পদের অবচয় খরচ এবং অবলোপন খরচ ইত্যাদি খাতে ব্যয় করেছে আরো ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ বীমা দাবি পরিশোধ ও অন্যান্য খাতে ব্যয় করেছে ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান