নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানি ‘লিবরা ইনফিউশনস লিমিটেড’ উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক কোম্পানিটির ঋণপত্র বা এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) বন্ধ করে দেয়ায় কাঁচামালের অভাবে স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে; যা ডায়রিয়া ও ডেঙ্গু’র চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি কোম্পানিটি বিষয়টি নিয়ে এক মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, লিবরা ইনফিউশনসের ইউনিট-২-এ বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ‘আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক’। তবে এ সংক্রান্ত কোনো বিনিয়োগ ব্যাংকটি করেনি। ব্যাংকটি নানা টালবাহানা করে কোম্পানিটিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলেও সংবেদনশীল তথ্যে অভিযোগ করা হয়।
তথ্য মতে, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ইতোমধ্যে কোম্পানিটির সকল প্রকার কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানি সংক্রান্ত এলসি (ঋণপত্র) খুলতে অপারগতা জানিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। সে কারণে ডেঙ্গু ও ডায়রিয়া রোগের জীবন রক্ষাকারী স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি লিবরা ইনফিউশনস-এর ইউনিট-২-এ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি থাকলেও অদ্যবধি বিনিয়োগ না করে টালবাহানা ও কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। এদিকে কোম্পানিটিকে ডেঙ্গু ও ডায়রিয়ার স্যালাইন উৎপাদনের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কঠোরভাবে মনিটরিং ও তদারকি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সরবরাহের ব্যাপারে কোম্পানিকে প্রচণ্ড তাগিদ দিচ্ছে। তবে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সিদ্ধান্তের কারণে কোম্পানির স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
জানা যায়, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক কোম্পানির সমস্ত ব্যাংকিং সুবিধা চার বছর ধরে বন্ধ করে রেখেছে। পরে দুই পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে অমীমাংসিত ব্যাংকিং সুবিধাসমূহ গত ১২ আগস্ট ২০১৮ তারিখে আপষনামাতে ইউনিট-২-তে পুনঃবিনিয়োগ উল্লেখ করে সমাধান হয়। অদ্যবধি পুনঃবিনিয়োগের ব্যবস্থা না করে ব্যাংকটি গত ২ মে ২০১৯ তারিখের একটি পত্রে ‘পরী পাসু চার্জ বা সমপরিমাণ চার্জ প্রদানে অনাপত্তি প্রদান করা যেতে পারে’ বলে উল্লেখ করে।
পরে ব্যাংকটি গত ২২ জুলাই ২০১৯ তারিখে একটি পত্রে পরিপূর্ণ পরী পাসু চার্জ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নবায়ন দেয়। যেটার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটি নবায়ন অনুমোদনে অস্বীকৃতি জানায়। তাই ব্যাংকটি কোম্পানিটির এলসি সুবিধা বন্ধ করে দেয়।
উল্লেখিত আপষনামা অনুযায়ী ব্যাংক পুনঃবিনিয়োগ না করে এবং পরে পরী পাসু দিতে স্বীকার করা স্বত্ত্বেও এখন পরিপূর্ণ পরী পাসু দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ব্যাংক নবায়ন দেয়। যার কারণে কোম্পানির ব্যাংকের পুনঃতফসিলকৃত দায়দেনা পরিশোধ করা অসম্ভব এবং যা গোয়িং কনসার্ন এর সামিল।
এদিকে, কোম্পানিটির মোট রিজার্ভ রয়েছে ১৯৭ কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। স্বল্পমেয়াদে ঋণ রয়েছে ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর দীর্ঘমেয়াদে ঋণ রয়েছে ৬ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির বর্তমান পিই রেশিও ১৭৯ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট, ডায়লোটেড ইপিএস অনুয়ায়ী পিই রেশিও ২১৫ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট।
৩০ জুন ২০১৮ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ সুপারিশ করে। এসময় শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয় ৫ টাকা ১ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৯৩ টাকা। আর ৯ মাসে (জুলাই ’১৮-মার্চ ’১৯) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৮ টাকা ৭ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ১২ টাকা ৬৫ পয়সা। আর ৩ মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১১ টাকা ৩৮ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ১২ টাকা ১৩ পয়সা। এসময়ে কোম্পানির এনএভি হয়েছে ১ হাজার ৩০৯ টাকা ৮২ পয়সা।
‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটি ১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ শেয়ার, আর ৬০ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে।
দৈনিক শেয়ারবাজার প্রতিদিন/এসএ/খান